Just In
এবার হলুদ মারবে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসকে!
চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ কমাতে হলুদের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
এবছর যে হারে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে, তাতে কপালে ভাঁজ পরাটা স্বাভাবিক। তবে এমন খারাপ পরিস্থিতির মাঝেও আশার মশাল জ্বালিয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একদল গবেষক। তারা আবিষ্কার করে ফেলেছেন এদেশে মহামারীর আকার নিতে চলা চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের ওষুধ।
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের তৈরি এই ভ্যাকসিনটিতে এমন কিছু অ্যান্টি-ভাইরাল এজেন্ট রয়েছে, যা খুব সহজে শরীরের অন্দরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে, ফলে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। তবে একটা প্রশ্ন এখনও থেকেই যাচ্ছে। এই গবেষণাটি শেষ হতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে, আর যে হারে প্রতি বছর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাটা বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে এখনই বিকল্প রাস্তার খোঁজ করতে হবে, না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ!
ওষুধটি বাজারে আসতে সময় লাগবে ঠিকই, তবে তাই বলে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। কেন জানেন? কারণ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের রান্না ঘরে উপস্থিত সাধারণ কিছু খাবারের সাহায্য় চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ কমিয়ে ফেলা অনেকাংশেই সম্ভব। আর একবার লক্ষণ কমে গেলে যে রোগকষ্টও যে কমে যায়, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে। তাই আর সময় নষ্ট না করে জেনে নিন, এউ রোগটিকে মুকাবিলা করার সহজ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে।
চিকুনগুনিয়া হল এক ধরনের ভাইরাল ডিজিজ, যা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পরে মূলত মশার কামড় থেকে। এক্ষেত্রে অ্যাডিস অ্যালবোপিকটাস এবং অ্যাডিস অ্যাজিপটি নামক দুটি মশার প্রজাতি এই কাজটি করে থাকে। প্রসঙ্গত, চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণ যে যে লক্ষণগুলির বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে, সেগুলি হল- হাই ফিবার, জয়েন্ট পেন, মাথা ব্যথা, পেশিতে যন্ত্রণা, ক্লান্তি প্রভৃতি।
চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের আক্রমণ আটকানো না গেলেও এই রোগের প্রকোপ কমাতে যে যে ঘরোয়া পদ্ধতি এবং খাবারগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল...
১. ঠান্ডা জলে শেক দেওয়া:
গামছায় পরিমাণ মতো বরফ নিয়ে শরীরের যে যে জায়গায় যন্ত্রণা হচ্ছে সেখানে কম করে ৩-৫ মিনিট শেক দিলে কষ্ট অনেকটাই কমে যায়। আসলে কোল্ড কমপ্রেস করার সময় ব্যথা জায়গায় রক্ত চলাচল কমে যায়। ফলে যন্ত্রণা এবং ফোলা ভাব কমতে সময় লাগে না।
২. বডি মাসাজ:
যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে, চিকুনগুনিয়া রোগের মূল লক্ষণই হল সারা গায়ে, বিশেষত জয়েন্টে মারাত্মক যন্ত্রণা। তাই একবার যদি এই লক্ষণটি কমিয়ে ফেলা যায়, তাহলে রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। আর এই কাজে বডি মাসাজের কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে সরষের তেল হলকা গরম করে জয়েন্টে এবং শরীরের যে যে জায়গায় কষ্ট হচ্ছে সেখানে লাগিয়ে ভাল করে মাসাজ করলে বেশ উপকার মেলে।
৩. হলুদ:
চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ কমাতে হলুদের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই মশলাটিতে উপস্থিত কিউকার্মিন নামক একটি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে দা ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড সেল বায়োলজিতে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর দিনে দুবার যদি এক গ্লাস দুধে হাফ চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করা যায়, তাহলে কষ্ট কমতে একেবারে সময়ই লাগে না।
৪. আদা:
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং পেন রিলিভিং এজেন্ট, যা জয়েন্ট পেন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমাতে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা আদার উপর এতটা ভরসা রেখে থাকেন। এক্ষেত্রে দিনে তিনবার করে আদা চা খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। আর যদি আপনার চা পানে অরুচি থাকে, তাহলে সারা গিয়ে আদা তেল দিয়ে মাসাজও করতে পারেন। এমনটা করলেও সমান উপকার মেলে।
৫. রসুন:
এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার ইমিউনিটি বেড়ে গেলে ভাইরাসের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, রসুনে উপস্থিত সালফার এবং সেলেনিয়াম জয়েন্ট পেন কমাতেও দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ কমাতে রসুনের যে কোনও বিকল্প নেই, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু প্রশ্ন হল এক্ষেত্রে কিভাবে রসুনকে ব্যবহার করা হবে? বাড়িতে বানানো রসুন তেল সারা শরীরে মেখে মাসাজও করতে পারেন অথবা দৈনিক কাঁচা রসুন খাওয়াও শুরু করতে পারেন।
৬. ডাবের জল:
চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে শরীর যেমন দুর্বল হয়ে পরে, তেমনি এনার্জির ঘাটতিও বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে দিনে ৩-৪ গ্লাস ডাবের জল খেলে দারুন উপকার মেলে। কারণ এই পানীয়টি শুধু এনার্জির ঘাটতি দূর করে না, সেই সঙ্গে পুষ্টকর উপাদানের চাহিদা মিটিয়ে শরীরকে একেবারে চাঙ্গা করে কুলতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।