Just In
যেকোনও সমস্যা দূর করতে গায়ত্রী মন্ত্র কীভাবে সাহায্য করে জানেন?
হিন্দু শাস্ত্রের উপর লেখা একাধিক বইয়ে এমনটা উল্লেখ পাওয়া যায় যে জীবনকে ঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং সব ধরনের সমস্যার প্রকোপ কমাতে গায়ত্রী মন্ত্র পাঠের কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। শুধু তাই নয়, এই শক্তিশালী মন্ত্রটি নিয়মিত জপ করলে মেলে আরও অনেক উপকার, যে বিষয়ে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
প্রায় ২৫০০-৩৫০০ বছর আগে লেখা ভগবত গীতায় গায়ত্রী মন্ত্রকে সবথেকে শক্তিশালী মন্ত্র হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, কুরুক্ষেত্রের ময়দানে শ্রীকৃষ্ণ যখন অর্জুনের মনের অন্দরে জমতে থাকা নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন, তখন নিজেকে "আমিই গায়ত্রী" বলে বিবেচিত করেছিলেন। এর থেকেই বুঝতে অসুবিধা হয় না যে গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করলে শ্রীকৃষ্ণের আর্শীর্বাদ সব সময় বজায় থাকে। ফলে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা তো দূর হয়ই, সেই সঙ্গে অর্থ কষ্টও কমতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, জীবনে চলার পথে আসা যে কোনও ধরনের বাঁধা কমতেও সময় লাগে না। তাই তো মনকে শান্ত রাখতে এবং যে কোনও ধরনের সাফল্যকে কুক্ষিগত করতে নিয়মিত এই মন্ত্রটি পাঠ করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন : আপনি কি রোজ গায়ত্রী মন্ত্র জপ করেন? জেনে নিন এর আসল অর্থ এবং গুরুত্ব
প্রসঙ্গত, নানা প্রাচীন পুঁথিতে এমনও উল্লেখ পাওয়া গেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে এক সময় মুনি-ঋষিরা কাউকেই গায়ত্রী মন্ত্রের সম্পর্কে জানাতে চাননি। কারণ তারা একথা বুঝে গিয়েছিলেন যে এই মন্ত্র শুধু কয়েকটি শব্দের সমষ্টি নয়, বরং আরও শক্তিশালী কিছু। তাই কোনও খারাপ মানুষের হাতে যদি এই মন্ত্রের ক্ষমতা চলে না যায়, তা সুনিশ্চিত করতেই কাউকে জানানো হত না এই মন্ত্রে সম্পর্কে। ঠিক মতো উচ্চারণ করে যদি এই মন্ত্রটি নিয়মিত পাঠ করা যায়, তাহলে মেলে একাধিক উপকার! দেখে নিন সেগুলি কী কী।
গায়ত্রী মন্ত্র
''ওঁ ভূর্ভুবস্ব
তৎসবিতুর্বরেণ্যং
ভর্গোদেবস্য ধীমহি
ধীয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ''
১) যেকোনও বাঁধা সরে যেতে সময় লাগে না
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে নিয়মিত এই শক্তিশালী মন্ত্রটি পাঠ করা শুরু করলে যে যে বাঁধার কারণে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, সেগুলি একের পর এক সরতে শুরু করে। ফলে জীবনে আনন্দের প্রবেশ ঘটতে সময় লাগে না। একবার ভেবে দেখুন তো সারা দিনে কত চিন্তাই না আমাদের মাথায় ঘোরাফেরা করে। সেই সব চিন্তা যদি নিমেষে উধাও হয়ে যায়, তাহলে কতই না ভাল হয়! তাই তো বলি জীবনকে সুখ-শান্তিতে ভরিয়ে তুলতে অল্প কিছুটা সময় বার করে এই মন্ত্রটি পাঠ করা শুরু করুন। দেখবেন খারাপ কোনও চিন্তা আপনার রাতের ঘুম আর ওড়াতে পারবে না।
২) যেকোনও বিপদ থেকে মুক্তি মেলে
কখনও কারও খারাপ দৃষ্টির কারণে তো কখনও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমরা নানাবিধ বিপদের সম্মুখীন হয়ে থাকি। একেক সময় বিপদ এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে সময় লাগে না। একটু খেয়াল করে দেখুন, আপনি কোনও না কোনও সময় এমন পরিস্থিতির মাঝে নিজেকে খুঁজে পয়েছেন, কি তাই না! তাই প্রশ্ন হল এমন বিপদ থেকে মুক্তি মিলতে পারে কীভাবে? এমন পরিস্থিতিতে গায়ত্রী মন্ত্র আপনাকে আলোর সন্ধান দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে নিয়মিত এই মন্ত্রটি পাঠ করা শুরু করলে যে কোনও ধরনের বিপদ, তা যতই ভয়ানক হোক না কেন, তা মিটে যেতে সময় লাগে না।
৩) মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়
কথায় বলে আমাদের হাতে থাকা সবথেকে শক্তিশালী অস্ত্র হল আমাদের ব্রেন। এই অস্ত্রটিকে যদি ঠিক মতো কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে সাফল্য আপনার চিরসঙ্গী হয়। কিন্তু সমস্যা হল ব্রেনের পাওয়ার এমনিতে বাড়ে না, তাকে বাড়াতে হয়। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে গায়ত্রী মন্ত্র। তাই মস্তিষ্কের অন্দরে স্টোর থাকা অফুরন্ত ক্ষমতার অধিকারি হতে আজ থেকেই এই মন্ত্রটি পাঠ করা শুরু করুন। দেখবেন অল্প দিনেই সুফল পেতে শুরু করবেন। প্রসঙ্গত, নিয়মিত প্রাণায়ম করলে যে মাত্রায় ব্রেন পাওয়ার বাড়ে, গায়েত্রি মন্ত্র পাঠ করার সময়ও একই উপকার পাওয়া যায়। তাই এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, এই মন্ত্রটি পাঠ করবেন, না করবেন না!
৪) অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে
লোনের চাপে মাথা খারাপ, এদিকে নানা কারণে আরও অনেক টাকার প্রয়োজন। কীভাবে এত টাকা জোগাড় করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না? কোনও চিন্তা নেই। প্রতিদিন শান্ত মনে গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করা শুরু করুন, দেখবেন ধীরে ধীরে যেকোনও ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা দূর হতে সময় লাগবে না! শুধু তাই নয়, এই মন্ত্রটি এতটাই শক্তিশালী যে যত দিন বাঁচবেন, ততদিন টাকার অভাবের সম্মুখীন হবেন না।
৫) নানাবিধ রোগ থেকে মুক্তি মেলে
রোগমুক্ত জীবন পেতে কে না চায় বলুন! কিন্তু কীভাবে এই স্বপ্ন পূরণ হতে পারে সে সম্পর্কে কোনও ধরণা আছে কি? চিকিৎসকদের যদি এই প্রশ্ন করেন, তাহলে উত্তর পাবেন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া শুরু করলেই দেখবেন শরীরের উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে। আর যদি স্পিরিচুয়াল গুরুদের একই প্রশ্ন করেন, তাহলে তাঁরা বলবেন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। আর সেই সঙ্গে পাঠ করতে হবে গায়ত্রী মন্ত্র। তাহলেই দেখবেন যে কোনও ধরনের প্রকোপ কমতে সময় লাগবে না। কারণ এই মন্ত্রটি জপ করলে মস্তিষ্ক এবং শরীরের অন্দরে পজিটিভ শক্তির বিকাশ ঘটতে শুরু করে। যার প্রভাবে যেকোনও রোগ-ব্যাধি দূরে থাকতে বাধ্য হয়।