Just In
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক কেন হয়? রইল তার কিছু কারণ
লোকমুখে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বা পরকীয়া কথাটি বর্তমানে খুবই প্রচলিত। ভারতবর্ষের সমাজ ব্যবস্থা যদিও এর বিপক্ষে। পরকীয়ার জেরে স্বামী খুন বা স্ত্রী খুন এই সংবাদগুলি হ্যাশট্যাগ এর মত ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি পরকীয়া যে অপরাধ নয়, এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। যেখানে বলা হয়, স্ত্রী কখনই স্বামীর সম্পত্তি হতে পারেনা। আবার কোনও ব্যক্তি যদি বিবাহিত নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, তবে সেটা কোনও অপরাধ নয়।
তবে কি এবার পরকীয়ার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে? ভারতবর্ষের সমাজ ব্যবস্থা কি তা মেনে নেবে? এমন অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খায় আমাদের মধ্যে। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে কোথাও হয়ত পরকীয়া শব্দটিকে আগে যেভবে দেখা হত এখন সেই ভাবে দেখা হয়না। কারণ, বর্তমান সমাজে নারী-পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে।
আরও পড়ুন : সম্পর্কে সমস্যা দেখা দিচ্ছে? জানুন সম্পর্ক শেষ করার কিছু উপায়
তবে, এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের কাছেই অতি তিক্ততার বিষয়। বিবাহের পর পরিবার, সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে এই সম্পর্ক। পরিবার,সন্তান ও নিজের স্বামী বা স্ত্রীকে আড়ালে রেখে জড়িয়ে পড়ছে আর এক সম্পর্কে। নষ্ট হয় সম্পর্কের, ভাঙে বিশ্বাস। সম্পর্কগুলোর সঙ্গে একদিকে যেমন জড়িয়ে রয়েছে বিতর্ক, তেমনই অন্যদিকে এইসব সম্পর্কে রয়েছে নানা মুখরোচক গল্প। কিন্তু মানুষের কেন এর প্রতি ঝোঁক বাড়ছে তা বিবেচনার বিষয়। মনোবিদদের কথায়, এর পিছনে রয়েছে অনেক সঙ্গত কারণ। তবে জেনে নিন কেন আমরা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে পড়ি তার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ।
বাল্য বিবাহ
অল্প বয়সে বিয়ে হলেই পরকীয়ায় জড়িত পড়ার সম্ভবনা থাকে। তারা অনুভব করে যে তারা এই বয়সে জীবন উপভোগ করেনি। ফলে উপভোগের চাওয়া পাওয়ায় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হতে থাকে।
ভুল কারণে বিবাহিত
কিছু বিবাহ পরিবার এবং সমাজের চাপের ফলে হয়ে যায়। এমনকি, তারা তাদের জীবনসঙ্গীকে না জেনেও বিবাহে সম্মত হন। ফলে পরে তারা বুঝতে পারেন জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভুল করেছেন। তখন তার জীবনসঙ্গীর থেকেও ভাল কাউকে দেখে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। শুরু হয় বন্ধুত্ব থেকে, তারপর তা পরিণত হয় একটি সম্পর্কে।
দাম্পত্য জীবনে অসন্তুষ্ট
পরিবারের মতে বা প্রেম করে বিয়ে মানেই যে বিবাহিত জীবন সুখী তা কিন্তু একেবারেই নয়। বিবাহের বন্ধনকে সঠিক পথে পরিচালিত করা ও সম্পর্ককে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যাওয়াই প্রকৃত সুখ। যখনই এগুলি পরিচালনা করতে অক্ষম হয়ে পড়েন, তখনই দম্পতিরা ভরসা হারিয়ে ফেলেন। এরপরে তারা পথভ্রষ্ট হতে শুরু করেন এবং প্রেমের সন্ধান করেন।
সন্তানের জন্ম
পিতৃত্ব বা মাতৃত্বের ফলে একটি স্বামী এবং স্ত্রীর গতিশীল সম্পর্কে পুরো পরিবর্তন ঘটতে থাকে। তখন আপনি একে অপরের ভলোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে যান। সন্তান আপনাদের উভয়ের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। অগ্রাধিকার পরিবর্তনের পাশাপাশি আপনারা একে অপরকে যে সময় দিতেন তাও হ্রাস পেতে থাকে। মহিলাদের ভাল মা হওয়ার জন্য তাদের সমস্ত ভালোবাসা জন্ম নেয় সন্তানের প্রতি। ফলে ধীরে ধীরে পুরুষরা তাদের নিজের বাড়িতে বিচ্ছিন্ন এবং গুরুত্বহীন বোধ করতে শুরু করে। অভাবের এই অনুভূতির ফলে অন্য কোথাও গুরুত্ব এবং আনন্দ খুঁজতে জড়িয়ে পড়ে মন।
শারীরিক অসন্তোষ
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত হওয়ার অন্যতম কারণের মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিবাহের পরে নারী বা পুরুষ উভয়েই কোনও সময় শারীরিক মিলনে অক্ষমতা বোধ করেন। একটা সময়ের পর শারীরিক সম্পর্কের আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেন উভয়ে। ফলে, এই এই ঘাটতি মেটাতে অন্য পথ খুঁজে নেন তারা।
নিজেদের সংযোগ স্থাপনের অভাব
সময়ের সাথে দৌড়তে গিয়ে আমরা ভুলে যাই পরিবারের কথা, নিজেদের কথা। যা দাম্পত্য জীবনে খুবই প্রভাব বিস্তার করে। কাজ ও দায়িত্বের চাপে কখনও কখনও একটি দম্পতি একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ওঠে। নষ্ট হয়ে যায় সম্পর্কের মাধুর্য্যতা। আপনি যদি একে অপরকে সময় না দেন, তবে সময়ের সাথে সাথে আপনি দম্পতি হিসেবে একে অপরের থেকে আবেগগতভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন এবং অন্য কারও সঙ্গে মানসিকভাবে সংযুক্ত হতে শুরু করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। কারও সঙ্গে মানসিক বন্ধন হিসেবে যা শুরু হয় তা পরে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের দিকে পরিচালিত হতে থাকে।
কেরিয়ারে অগ্রগতি
এটি সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক কারণ হলেও সত্য। কিছু লোক মনে করে কর্মক্ষেত্রে ফ্লার্ট করা এবং উর্ধ্বতনদের সহিত শারীরিক ঘনিষ্ঠতা তাদের কেরিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং পেশাদার লক্ষ্য অর্জন করতে সহায়তা করতে পারে। বিভিন্ন ‘কাস্টিং কাউচ' এর এক বড় উদাহরণ। সবচেয়ে খারাপ হল এটি সমস্ত শিল্পে বিদ্যমান। কেরিয়ারের লাভের জন্য লোকেরা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হয়, আগ্রহী হয়ে ওঠে শারীরিক মিলনে। যা পুরো পরিবারকে ধ্বংস করতে পারে।
তবে, এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা একদিক থেকে বিবেচনা করি। শাস্তি পায় একজনই। কিন্তু, কখনই এক হাতে তালি পড়ে না, দুটি হাতের প্রয়োজন। এটি কখনও কোনও একজন ব্যক্তির দোষের উপর নির্ভর করে না। সম্পর্ক যেহেতু আমাদের তাই সম্পর্কগুলিকে ভাল রাখার দায়িত্বও আমাদের। আসুন, সবাই মিলে সম্পর্কের বন্ধনকে সাজিয়ে তুলি। রক্ষা করি নিজেদের সন্তান থেকে পরিবারকে।
আরও পড়ুন : হায়দরাবাদ গণধর্ষণ কাণ্ডে পুলিশ এনকাউন্টারে মৃত্যু ৪ অভিযুক্তের, দেখুন ট্যুইটার প্রতিক্রিয়াগুলি