Just In
শেষ হল ভারতীয় ফুটবলের এক অধ্যায়...
গ্যালারি ভর্তি দর্শকের উন্মাদনা। কারণ, তাঁর পায়ে বল। মাঝ মাঠ থেকে ছুটে যাচ্ছেন গোলপোস্টের দিকে। লক্ষ্য একটাই, জয়ী করতে হবে নিজের দলকে। অবশেষে গোওওওওওওওওওওওওওওওওওল... এভাবেই টানা ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফুটবলের জগৎকে মাতিয়ে রেখেছিলেন তিনি। যাঁর পা ময়দানে পড়লেই কেঁপে উঠত মাটি। তিনি আর কেউ নন বাংলা তথা ভারতের কিংবদন্তি ফুটবলার পি.কে.ব্যানার্জি। হাজার হাজার দর্শকের ভালবাসা ও স্বর্ণময় স্মৃতি নিয়েই আজ দুপুর ২টো বেজে ৮মিনিট নাগাদ প্রয়াত হলেন তিনি। শেষ হল ভারতীয় ফুটবলের এক অধ্যায়ের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
বয়সজনিত সমস্যার পাশাপাশি হার্টের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি রোগ তাকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল ময়দান থেকে। নিউমোনিয়া, পারকিনসন-সহ একাধিক রোগে জর্জরিত ছিলেন তিনি। দীর্ঘ কয়েক মাস হসপিটালে ভর্তি থাকার পরে অবশেষে থমকে যায় তাঁর জীবন। শোকের ছায়া নেমে আসে ভারতীয় ফুটবল জগতে।
খেলা থেকে অবসর নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু খেলার মায়া ও নেশা থেকে বেরোতে পারেননি তিনি। ছাড়েননি ফুটবলকে। তাই খেলোয়াড় হিসেবে নয়, কোচ হিসেবে দীর্ঘদিন ময়দানকে আঁকড়ে ধরেছিলেন পিকে ব্যানার্জি ওরফে প্রদীপ কুমার ব্যানার্জী। ক্লাব কোচিংয়ে সাফল্য পেতে না পেতেই ডাক আসে ভারতীয় টিমের কোচ হিসেবে কাজ করার। যেমন ফুটবলার হিসেবে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন ভূ-ভারতের ময়দানে, তেমনই কোচ হিসেবেও বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে কুড়িয়েছেন অগাধ সম্মান। তাই হয়তো তিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা কিংবদন্তি ফুটবলার।
আরও পড়ুন : চলে গেলেন 'কেদার', ৬১ তেই থমকে গেল জীবন
১৯৩৬ সালে জলপাইগুড়িতে জন্ম প্রদীপ কুমার ব্যানার্জীর। পড়াশুনা শুরু হয় জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। আর সেই জেলা স্কুলের মাঠ থেকেই শুরু হয় ফুটবল দুনিয়ায় পদার্পণ। সেই থেকেই শুরু, আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ছ'বছর বয়সে জলপাইগুড়ি ছেড়ে জামশেদপুরে চলে আসে তাঁর পরিবার। তাঁর স্বপ্নপূরণের লড়াইয়ে ছেলেবেলা থেকেই পাশে পেয়েছিলেন বাবা প্রভাত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বাবার আশীর্বাদই তাঁকে বিশ্বজয় করতে শিখিয়েছিল।
জাতীয় দলের হয়ে দুরন্ত খেলার সুবাদে ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি হিসেবে পরিণত হন পি কে ব্যানার্জি। তাঁর অধিনায়কত্বকালে ভারতীয় ফুটবলের সেই দিনগুলিকে স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৫৮ সালে টোকিও, ১৯৬২ সালে জাকার্তা এবং ১৯৬৬ সালে ব্যাংকক এশিয়ান গেমসে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিক্সে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিক্সে জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন পিকে। ১৯৬২ সালের এশিয়াডে ফুটবলে ভারতের সোনা জয়ের পিছনে তিনি ছিলেন অন্যতম কারিগর।
সম্মান
১) ১৯৬১ তে অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত হন।
২) ১৯৯০ সালে ভারত সরকার পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেন।
৩) ২০০৫ সালে FIFA,শতাব্দীর সেরা ফুটবলারের সম্মান দিয়েছিল।
৪) আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির তরফ থেকে ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
৫) ২০১১ সালে ভারত নির্মাণ পুরস্কার, লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পান।