Just In
- 30 min ago উত্তর-পশ্চিম দিক কোনটি? ভুল করেও এই দিকে রাখবেন না বাড়ির সরঞ্জাম, সাবধান
- 15 hrs ago পেটের মেদ কমাতে চান? দ্রুত চর্বি পোড়াতে এই বসার ভঙ্গি ব্যবহার করে দেখুন, ওজন কমবে
- 17 hrs ago মাছির উপদ্রবে নাজেহাল? জ্বালাতন থেকে বাঁচতে ঘরোয়া টোটকা
- 18 hrs ago দোল পূর্ণিমার পরই ভাগ্যবান ৩ রাশি, হুহু করে আসবে টাকা, ভাগ্য ফিরছে কাদের?
লক্ষ্মী আগরওয়াল : অ্যাসিড হামলার পর বেঁচে থাকা সেই সাহসী, বীর নারী সম্পর্কে জেনে নিন
জীবনে চলার পথে প্রতিদিন নানান বাধা, বিপদের সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। কিন্তু, সবকিছুকে মনে রেখে, ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসলে কোনওদিনই সাফল্য পাওয়া যায় না। বরং ভয়-কে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার আসল নামই জীবন। প্রায়ই খবরের কাগজে চোখ রাখলে দেখা যায়, হিংসা, খুন, নারী নির্যাতনের ঘটনা। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই ভয় কাটিয়ে, পুনরায় উঠে দাঁড়ায়, লড়াই করে, বীরের মতো ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যায়। ঠিক এরকমই একটি জীবন্ত উদাহরণ হল লক্ষ্মী আগরওয়াল, অ্যাসিড আক্রান্তে বেঁচে যাওয়া সেই তরুণী।
বিখ্যাত অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের আসন্ন চলচ্চিত্র 'ছপক', এই অ্যাসিড অ্যাটাক থেকে বেঁচে যাওয়া লক্ষ্মী আগরওয়ালের জীবন সংগ্রাম নিয়েই তৈরি, যেখানে দীপিকা লক্ষ্মী আগরওয়ালের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
আরও পড়ুন : সঙ্গীর জন্য এত খরচার পরেও তার মন রাখতে পারছেন না? রইল ৯টি বাজেট-বান্ধব ডেটিং টিপস্
বর্তমানে, লক্ষ্মী আগরওয়াল 'স্টপ সেল অ্যাসিড ক্যাম্পেইন'-এর প্রধান মুখ। অ্যাসিড আক্রমণের পরে তাঁর বিকৃত চেহারা কখনোই তাঁর দৃঢ় সংকল্পকে থামায়নি বরং তারপর তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। অ্যাসিড আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করা সেই সাহসী, বীর নারী লক্ষ্মী আগরওয়াল সম্পর্কে আরও জানতে নিবন্ধটি পড়ুন।
প্রাথমিক জীবন
১ জুন ১৯৯০ সালে দিল্লির একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে লক্ষ্মী আগরওয়াল জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন গান গাইতে কিন্তু, তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ক্যারিয়ারের জন্য অন্য কিছু ভাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ২০০৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে, ৩২ বছর বয়সী এক ব্যক্তির বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিনি অ্যাসিড হামলার শিকার হন।
অ্যাসিড অ্যাটাক
লক্ষ্মী জানিয়েছে যে, সেই লোকটি তাঁর বন্ধুর ভাই ছিল। টেড টকের একটি এপিসোডে লক্ষ্মী আগরওয়াল বলেছিলেন, "আমার উপর খান মার্কেটে হামলা করা হয়েছিল (নয়াদিল্লির একটি স্থানীয় জায়গা)। কয়েক মাস ধরে সেই মেয়েটি এবং লোকটি আমাকে অনুসরণ করছিল। অবশেষে, আমাকে বিয়ে করার জন্য বলে এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে আমার মুখের উপর অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে। অত্যন্ত জ্বালা এবং ব্যথার কারণে আমি মুহূর্তেই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম।"
আরও পড়ুন : সাবিত্রীবাঈ ফুলে : ১৮৯ তম জন্মবার্ষিকীতে জেনে নিন তাঁর সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
তিনি আরও জানিয়েছিলেন যে, সেখানে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা 'পরবর্তীতে কী হবে' তার জন্য বেশ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কিন্তু, তাদের সাহায্যের হাত বাড়াননি। অবশেষে, একজন লোক এসে তাঁর মুখে জল ঢেলে তাঁকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।
"আমাকে হাসপাতালে আনার সাথে সাথে আমার মুখে ২০ বালতি জল ঢালা হয়েছিল। সেইসময় আমার বাবা আসার পর আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরি, অ্যাসিডের প্রভাবের কারণে বাবার জামাও জ্বলে গিয়েছিল," অ্যাসিড হামলার পর লক্ষ্মী তাঁর অবস্থার কথা বর্ণনা করেছিলেন।
অ্যাসিড আক্রমণের পরে লক্ষ্মী আগরওয়ালের লড়াই
লক্ষ্মী জানান, নতুন চেহারাটি গ্রহণ করা তাঁর পক্ষে বেশ বেদনাদায়ক ছিল। তিনি বলেছিলেন, "আমি আর বাঁচতে চাইনি বলে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম।" কিন্তু, তাঁর মৃত্যুর পরে বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কথা ভেবে তিনি আর মৃত্যুর কথা ভাবেননি।
আরও পড়ুন : নিউ ইয়ার ২০২০ : নতুন বছরে নতুন ভাবে বাঁচুন, করুন নতুন প্রতিজ্ঞা
২০১২ সালে তাঁর ভাই অসুস্থ হয়ে পড়ায়, চিকিৎসকরা বলেছিলেন যে, সে বাঁচবে না। এটি শোনার পর, তাঁর বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। লক্ষ্মীর পক্ষে এই সময়টি সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল কারণ, তাঁর বাবাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি। এরপর, তিনি কাজের সন্ধানে বেরোন কিন্তু, কেউই তাঁকে চাকরি দিতে রাজি হননি।
অ্যাক্টিভিস্ট লক্ষ্মী আগরওয়াল
২০০৬ সালে তিনি একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন (পিআইএল)। সেখানে তিনি কঠোর আইন গঠন করার জন্য বলেন এবং বিদ্যমান আইন সংশোধন করে অ্যাসিড বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। আট বছর অবিরাম লড়াইয়ের পর, ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটি আইন পাশ করে, যেখানে অ্যাসিডের বিক্রয় ও ক্রয়কে সীমাবদ্ধ করার কথা বলা আছে।
এরপর, লক্ষ্মী স্টপ অ্যাসিড অ্যাটাক ক্যাম্পেইনে যোগ দেন এবং অ্যাসিড আক্রান্তদের সহায়তা করেন। বর্তমানে, লক্ষ্মী তার নিজস্ব প্রচার 'স্টপসেলঅ্যাসিড'-এর নেতৃত্ব দেন, যার মূল লক্ষ্য হল, অ্যাসিড আক্রমণ এবং অ্যাসিড বিক্রির বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো।
এখন তিনি নিউ এক্সপ্রেসে প্রচারিত উড়ান নামে একটি টেলিভিশন শো-তে হোস্ট হিসেবে কাজ করছেন।
আরও পড়ুন : মস্তিষ্ক অস্ত্রপ্রচারের সময় বেহালা বাজাচ্ছেন রোগী! পুরোটা পড়লে আপনিও অবাক হবেন
২০১৪ সালে তিনি আমেরিকার তৎকালীন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার কাছ থেকে ইন্টারন্যাশনাল ওম্যান অফ কারেজ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। এছাড়াও, ২০১৯ সালে তিনি UNICEF থেকে ইন্টারন্যাশনাল ওম্যান এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
লক্ষ্মী আগরওয়ালের মতে, বাহ্যিক সৌন্দর্যে কিছু যায় আসে না। তিনি বলেন, "উসনে মেরে চেহেরে পে অ্যাসিড ডালা হ্যায়, মেরে স্বপ্নো পে নেহি (তিনি আমার মুখে এসিড নিক্ষেপ করেছেন, আমার স্বপ্নতে নয়)।"
কয়েক বছর ধরে লক্ষ্মী আগরওয়াল অ্যাসিড আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া অন্যান্য অনেকের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের সাহস যুগিয়েছেন। আমরা এমন শক্তিশালী নারীকে স্যালুট জানাই, যিনি হাল ছাড়েননি এবং একজন সত্য যোদ্ধার মতো জীবনযাপন করছেন।