Just In
- 7 hrs ago রঙ খেলার পাশাপাশি দোলে এই খাবারগুলি মাস্ট, আপনিও রাখছেন তো তালিকায়?
- 7 hrs ago হোলিতে ভাগ্য বদলাবে কোন রাশির জাতকদের, কাদেরই বা আর্থিক দিকে লাভ হবে, জানেন
- 2 days ago কেন ভারতীয়দের মধ্যে ওবেসিটির হার বাড়ছে, কী তথ্য উঠে এল গবেষণা থেকে, জানুন
- 2 days ago কবে পড়েছে ফাল্গুন পূর্ণিমা, আর্থিক সঙ্কট কেটে সুখের মুখ দেখবেন কোন রাশির ব্যক্তিরা?
'অপু'-র জীবনের কিছু অজানা কথা...
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা ছবির প্রবীণ মহাতারকা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। একরাশ বিষণ্ণতা রেখে ৮৫ বছর বয়সে তিন ভুবনের পারে পাড়ি দিলেন ' অপু '। রবিবার বেলা ১২ টা ১৫ মিনিটে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। করোনা সেরে গেলেও ক্যান্সারসহ একাধিক কো-মর্বিডিটি থাকার কারণে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। চিকিৎসকেরা প্রাণপনদিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি প্রবীণ অভিনেতাকে। জীবনের ৮৫টি বসন্ত পেরিয়ে অবশেষে হার মানলেন বাঙালির 'মাইল স্টোন'। তিনি কেবল অভিনেতাই ছিলেন না, নাট্যকার, বাচিকশিল্পী, লেখক, কবি, চিত্রকর, সব দিক থেকেই মহারাজা ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দেখে নিন তার জীবনের কিছু অজানা গুরুত্বপূর্ণ কথা সম্পর্কে।
১) ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি, কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রিটে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সৌমিত্র, যা বর্তমানে সূর্য সেন স্ট্রিট নামে পরিচিত। তবে ছোটবেলা কাটে কৃষ্ণনগরে।
২) তিনি বাংলা সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। ১৯৯৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন সিটি কলেজ থেকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা নিয়েই স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি বাংলা থিয়েটারের খ্যাতিমান অভিনেতা-পরিচালক অহিন্দ্র চৌধুরীের কাছ থেকে অভিনয়ের নৈপুণ্য শিখেছিলেন। তবে বিশ্বাস করা হয় যে, থিয়েটারের মহারাজা শিশির ভাদুড়ির একটি নাটক দেখে তাঁর অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছাটি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এমনকি ভাদুড়ির একটি প্রযোজনায় তিনি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
৩) ১৯৬১ সালে নির্মাল্য আচার্য প্রতিষ্ঠিত একটি ম্যাগাজিনের নামকরণ করার জন্য সত্যজিৎ রায়ের কাছে গিয়েছিলেন। সত্যজিৎ বাবু কেবল 'এক্ষণ' (Ekkhon) পত্রিকার নাম রাখেননি, এমনকি তিনি প্রচ্ছদটির ডিজাইনও করেছিলেন । এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন : প্রয়াত হলেন ভারতের প্রথম বাঙালী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, দেখুন তাঁর জীবনের কিছু অজানা তথ্য
৪) ছোট থেকেই পারদর্শী অভিনয় জগতে। পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আলাপ হয় ১৯৫৬ সালে। ১৯৫৯ সালে সত্যজিতের 'অপুর সংসার' ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করে অভিষেক ঘটে সিনেমা জগতে। সত্যজিৎ রায়ের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিত রায়ের পরিচালনায় মোট ১৪টি ছবিতে কাজ করেছেন সৌমিত্র।
৫) অল্প বয়স থেকে অভিনয়ে পারদর্শী হলেও ১৯৫৭ সালে কার্তিক চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত বাংলা ছবি 'নীলাচলে মহাপ্রভু'-র মুখ্য চরিত্রের স্ক্রিনটেস্টে প্রত্যাখ্যান হন। কিন্তু তিনি ভেঙে যাননি, চালিয়ে যান তাঁর থিয়েটার।
৬) দীর্ঘ ছ'দশকের অভিনয় জীবন। প্রায় ৩০০-রও বেশি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। অপুর সংসার, ক্ষুধিত পাষাণ, পুনশ্চ, ঝিন্দের বন্দি, অভিযান, চারুলতা, বাক্স বদল, কাপুরুষ, মনিহার, তিন ভুবনের পারে, বসন্ত বিলাপ, অশনি সংকেত, সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ, নৌকাডুবি, দেবদাস, হীরক রাজার দেশে, চাঁদের বাড়ি, বেলাশেষে, পোস্ত, বেলাশুরু -এর মতো ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
৭) পর্দায় অভিনয়ের পাশাপাশি একই সঙ্গে নাট্যকর, মঞ্চাভিনেতা, বাচিকশিল্পী, কবি, চিত্রকর ছিলেন তিনি। কিং লিয়ারের চরিত্রে অভিনয় করে চমকে দিয়েছেন দর্শকদের।
৮) শুধু সত্যজিৎ রায় নন, তপন সিনহা, মৃণাল সেন, অজয় কর, তরুণ মজুমদার থেকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অতনু ঘোষ, সুমন ঘোষের মতো আজকের প্রজন্মের পরিচালকদের ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
৯) পূর্ণদৈর্ঘ্য ও নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি সুজয় ঘোষ পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি 'অহল্যা' তে অভিনয় করে মন কেড়ে নেন দর্শকের। তাঁর সহ-অভিনেতা ছিলেন রধিকা আপ্তে এবং টোটা রায় চৌধুরী।
১০) ২০০৪ সালে 'পদ্মভূষণ', ২০১১ সালে ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ সম্মান 'দাদাসাহেব ফালকে' পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে ফ্রান্সের সর্বাধিক সম্মানিক ' ওর্ডার ডে আর্টস ' স্বীকৃতি পেয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ২০১৮ সালে ফ্রান্স সরকারের তরফে 'লিজিয়ঁ দ'নর' পেয়েছেন, ২০০৬ সালে 'পদক্ষেপ' ছবিতে জাতীয় পুরস্কার পান, ২০১২ সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির তরফে 'টেগোর রত্ন' সম্মান দেওয়া হয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। এছাড়াও পেয়েছেন বহু ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড।
১১) জীবনে বহু চরিত্রে অভিনয় করলেও মানুষের কাছে তিনি 'অপু' এবং 'ফেলুদা' হিসেবেই পরিচিত থেকে গিয়েছেন।