Just In
চটজলদি ধূমপান ছাড়তে চান নাকি? তাহলে প্রতিদিন জগিং করা শুরু করুন!
গবেষণাটি চলাকালীন বিশেষজ্ঞরা লক্ষ করেছিলেন ধূমপান ছাড়ার পর যে যে লক্ষণগুলি সাধারণত প্রকাশ পেয়ে থাকে, সেগুলির প্রকোপ কমতে শুরু করে যদি নিয়মিত জগিং বা হাঁটার অভ্যাস করা যায়।
বন্ধু জগিং-এর সঙ্গে ধূমপান ছাড়ার কী সম্পর্ক তা ঠিক বুঝলাম না তো! আসলে সম্প্রতি একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে নিয়মিত জগিং করলে শরীরের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে নিকোটিন ডিপেনডেন্সি কমতে শুরু করে। তাই তো যারা নতুন বছরে এই কুঅভ্যাস ছাড়ার বিষয়ে মনস্থির করে ফেলেছেন, তারা কাল সকাল থেকেই জগিং শুরু করে দিন। দেখবেন উপকার মিলবে।
গবেষণাটি চলাকালীন বিশেষজ্ঞরা লক্ষ করেছিলেন ধূমপান ছাড়ার পর যে যে লক্ষণগুলি সাধারণত প্রকাশ পেয়ে থাকে, সেগুলির প্রকোপ কমতে শুরু করে যদি নিয়মিত জগিং বা হাঁটার অভ্যাস করা যায়। আসলে হাঁটা বা ধীমে লয়ে দৌড়ানোর সময় আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে এমন কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায় যে নিকোটিনের প্রভাব কমতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে উইথড্রল সিনড্রমও কমতে শুরু করে। তবে এখানেই শেষ নয়, ব্রিটিশ জার্নাল অব ফার্মাকোলজিতে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রটি অনুসারে নিয়মিত জগিং করলে স্মোকিং এর অভ্যাস ছাড়াটা যেমন সহজ হয়, তেমনি আরও অনেক উপকার মেলে। যেমন...
১. হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে:
নিয়মিত জগিং-এর অভ্যাস করলে রক্তচাপ যেমন স্বাভাবিক হতে শুরু করে, তেমনি রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু বৃদ্ধি পায়।
২. ক্যান্সার রোগ দূরে থাকে:
গবেষকরা একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন যে জগিং-এর সময় সারা শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি কোষ অ্যাকটিভ হয়ে পরে, যে কারণে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। আসলে কোনও কোষে যদি ঠিক মতো অক্সিজেন পৌঁছাতে না পারে, তাহলে সেই কোষটি ম্যালিগন্যান্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর এমনটা হওয়া মানেই ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়া।
৩. সংক্রমণের আশঙ্কা কমে:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন কম করে ২০-৩০ মিনিট জগিং করলে শরীরের অন্দরে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া ফাইটিং সেলের জন্ম হতে থাকে যে কোনও ধরনের জীবাণুই শরীরের ক্ষতি করে উঠতে পারে না। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে রোগ ভোগের আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৪. ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:
শুধু জগিং নয়, যে কোনও ধরনের শরীরচর্চাই যদি নিয়মিত করা যায়, তাহলে একদিকে যেমন ওজন বাড়ার আশঙ্কা কমে, তেমনি ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে ডায়াবেটিসে রোগের কিন্তু সরাসরি যোগ রয়েছে। দেহে চর্বির পরিমাণ যত বাড়তে থাকে, তত কিন্তু ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল এবং হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই এই বিষয়টি মাথায় রাখাও একান্ত প্রয়োজন।
৫. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়:
জগিং করার সময় ব্রেনের অন্দরে এন্ডোরফিন নামক ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ বা ডিপ্রেশনের মতো মেন্টাল স্টেটের পরিবর্তন হতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের কগনেটিভ পাওয়ার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধিরও বিকাশ ঘটে।
৬. স্ট্রেস কমায়:
আজকের কর্পোরেট লাইফে স্ট্রেস যেন রোজের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে জগিং-এর প্রয়োজন যে কতটা, তা বলে বোঝানোর নয়! কিন্তু জগিং-এর সঙ্গে স্ট্রেসের কী সম্পর্ক? বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে জগিং বা হাঁটার সময় মস্তিষ্কে নরএপিনেফ্রিন, সেরাটোনিন এবং ডোপেমাইন নামক বেশ কিছু কেমিকেলের ক্ষরণ হয়, যা স্ট্রেস লেভেলকে একেবারে কমিয়ে আনে। ফলে দুশ্চিন্তা কমতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, স্ট্রেস হল এমন একটা রোগ, যা নানাবিধ মারণ রোগকে ধীরে ধীরে ডেকে আনে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। তাই স্ট্রেস থেকে সাবধান থাকাটা জরুরি!
৭. ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
জগিং হল এক ধরনের অ্যারোবিক এক্সারসাইজ। অর্থাৎ যে শরীরচর্চাটি করার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়। সেই কারণেই তো নিয়মিত জগিং করলে স্বাভাবিকভাবেই ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে কার্বোন ডাইঅক্সাইডও শরীর থেকে বেশি মাত্রায় বেরিয়ে যেতে শুরু করে। যে কারণে শরীর আরও চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
৮. পেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
জগিং করার সময় ফুসফুসের পাশাপাশি শরীরের প্রতিটি পেশি বেশি মাত্রায় সংকুচিত এবং প্রসারিত হতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি মাসলের কর্মক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে সার্বিকভাবে শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে শরীরের অন্দরের শক্তিও বাড়তে শুরু করে। ফলে অল্পতেই শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।