Just In
জানেন কি যন্ত্রণা কমাতে পেনকিলারের থেকেও দ্রুত কাজ করে হলুদ!
প্রাচীনকালে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের উপর লেখা একাধিক বইয়ে এই মশালাটির গুণাগুণের পক্ষে সাওয়াল করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
হাজার হাজার বছর ধরে নানা রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগানো হচ্ছে এই প্রকৃতিক উপাদানটিকে। এমনকী প্রাচীনকালে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের উপর লেখা একাধিক বইয়েও এই মশালাটির গুণাগুণের পক্ষে সাওয়াল করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। আর আজ, এতকাল পরে অবশেষ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও সেকথা মেনে নিল। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে একথা প্রামাণিত হয়ে গেল যে ব্যথা কমাতে বাস্তবকিই হলুদের কোনও বিকল্প নেই।
ইউরোপিয়ান রিভিউ ফর মেডিকাল অ্যান্ড ফার্মাকোলজিকাল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে গভীর কোনও চোট সারাতেও হলুদ দারুন কাজে আসে। এমনকী খেলতে গিয়ে লাগা কোনও চোট সারাতেও এই মশলাটি বেজায় কার্যকরি। তাই এখন থেকে চোট-আঘাত সারাতে আর পেনকিলার নয়, কাজে লাগানো শুরু করুন হলুদকে। কারণ পেনকিলার শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়। একাধিক গবেষণায দেখা গেছে কথায় কথায় পেনকিলার খাওয়া শুরু করলে কিডনি সহ শরীরের একাধিক অঙ্গের উপর খারাপ প্রভাব পরে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই একাধিক মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। তাই যন্ত্রমা কমানোর পাশাপাশি শরীরকে চাঙ্গা রাখতে হলুদকে কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন!
এখন প্রশ্ন হল হলুদে এমন কী আছে, যা ব্যথা কমাতে এতটা কাজে আসে? গবেষকদের মতে এই মশলাটির অন্দরে রয়েছে কার্কিউমিন নামক একটি উপাদান, যা যন্ত্রণা কমানোর পাশাপাশি আরও একাধিক রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন...
১. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখে:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে হলুদে উপস্থিত কার্কিউমিন শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। এই কারণেই তো প্রতিটি ভারতীয়কে প্রতিদিন সকালে অল্প করে হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কেন এমন উপাদেশ দেওয়া হয় জানেন? কারণ প্রতি বছর এদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এই মারণ রোগের প্রকোপ। এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র হলুদই পারে আমাদের বাঁচাতে।
২. রক্তকে বিষ মুক্ত করে:
শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে হলুদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটির মধ্যে থাকা কার্কিউমিন, রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে ব্লাড ভেসেলের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তো কমেই, সেই সঙ্গে নানাবিধ রোগভোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। এবার বুঝেছেন তো শীতকালে হলুদ খেতে কেন বলে থাকেন চিকিৎসকেরা।
৩. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:
একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত হলুদ খাওয়া শুরু করলে হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে বদ-হজমের আশঙ্কা যেমন কমে। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বল এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন কমাতেও এই পানীয় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪. পিরিয়ডের কষ্ট কমায়:
মাসের এই বিশেষ সময়ে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, যা কোনও কোনও সময় এতটাই কষ্টকর হয় যে সহ্যের বাইরে চলে যায়। এমন পরিস্থিতিতে যদি অল্প করে হলুদ খেয়ে নেওয়া যায়, তাহলে কিন্তু দারুন উপকার মেলে। কারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পিরিয়োড সংক্রান্ত কষ্ট কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. অতিরিক্তি ওজন কমিয়ে ফেলে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত হলুদ খাওয়া শুরু করলে শরীরে বিশেষ কিছু উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যার প্রভাবে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। আর একবার মেটাবলিজম রেট বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হয়। তবে এখানেই শেষ নয়, হলুদে কার্কিউমিন নামে একটি উপাদান থাকে, যা শরীরে উপস্থিত ফ্যাট সেলেদের গলানোর মধ্যে দিয়ে অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. হাঁচি-কাশি হওয়ার আশঙ্কা কমে:
হলুদে উপস্থিত অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ একদিকে যেমন নানাবিধ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়, তেমনি এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ রেসপিরেটারি ট্রাক্ট ইনফেকশন এবং সর্দি-কাশির প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কারণেই তো বছরের এই একটা সময় বাচ্চাদের নিয়মিত হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, বিশেষত রাতে ঘুমতে যাওয়ার আগে।
৭. লিভার টনিক হিসেবে কাজ করে:
লিভারকে চাঙ্গা এবং কর্মক্ষম রাখতে হলুদের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ এর মধ্যে থাকা কার্কিউমিন নামক উপাদানটি লিভারের কর্মক্ষমতা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে কোনও ধরনের লিভারের রোগই ধারে কাছে আসতে পারে না। এমনকি ফ্য়াটি লিভারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে। শুধু তাই নয়, হলুদে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি উপাদান লিভারে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে লিভারের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
৮. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়:
নিয়মিত হলুদ মেশানো দুধ খেলে ত্বকের অন্দরে থাকা টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে ত্বক এত মাত্রায় উজ্জ্বল এবং প্রাণচ্ছ্বল হয়ে ওঠে যে বলি রেখা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ব্রণ, অ্যাকনে এবং কালো ছোপের মতো সমস্যাও কমতে শুরু করে। এক কথায় শীতকালেও যদি ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে চান, তাহলে আজ থেকেই হলুদ দুধ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অ্যাকজিমার মতো ত্বকের রোগের চিকিৎসাতেও হলদি দুধ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৯. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে ওঠে:
শীতকালে আমরা এত অসুস্থ হয়ে পরি কেন জানেন? কারণ নানা কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পরে। তাই তো নানা রোগ ঘারে চেপে বসে। এই কারণেই তো এই সময় নিয়মিত হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। আসলে এই পানীয়টিতে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান, ইমিউনিটিকে মারাত্মক বাড়িয়ে দেয়। ফলে কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
১০. নিমেষে মাথা যন্ত্রণা কমায়:
এবার থেকে মাথা যন্ত্রণা হলেই এক কাপ হলুদ মেশানো দুধ খেয়ে নেবেন। দেখবেন কষ্ট কমতে একেবারে সময়ই লাগবে না। কারণ হলুদের অন্দরে থাকা কার্কিউমিন এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি উপাদান শরীরের অন্দরে প্রদাহ কমায়। ফলে মাথা যন্ত্রণা কমতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, শুধু মাথা যন্ত্রণা নয়, যে কোনও ধরনের ব্যথা কমাতেই এই পানীয়টি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর যেমনটা আপনাদের সবারই জানা আছে যে শীতকালে চোট-আঘাত লাগার আশঙ্কা বাড়ে। তাই এই সময় হলুদ-দুধের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা মাস্ট!
১১. শরীরের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা কমায়:
দেহের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে শরীরে প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে নানান রোগ। তাই তো এমনটা যাতে কোনও সময় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন। আর এই কারণেই নিয়মিত হলুদ খাওয়া উচিত। কারণ এই মশলটির অন্দরে মজুত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১২. আর্থ্রাইটিসের মতো রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়:
যেমনটা আগেও আলোচন করা হয়েছে যে হলুদে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে প্রবেশ করার পর জয়েন্টে সৃষ্টি হওয়া প্রদাহ কমতে শুরু করে। ফলে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।