সেই হাফ প্যান্টের সময় থেকে শুনে আসছি যে প্রতিদিন ত্রিফলার জল খেলে নাকি দারুন উপকার পাওয়া যায়। কী এমন উপকার মিলতে পারে তা ভাবতেই ভাবতেই আমি এখন ফুল প্যান্টে। তবু আজ পর্যন্ত ত্রিফলা চেখে দেখা হল না। কিন্তু মত বদলালো সেদিন একটা গবেষণা পত্র পড়ার পর। স্টাডি পেপারটি পড়তে পড়তে এক প্রকার চমকে গেলাম। হঠাৎ মনে পরে গেল ঠাম্মার বলা সেই কথাটা, "বুঝলে সোনা, সোনার মতো শরীর পেতে ত্রিফলা খেতেই হবে।" তা কী মশাই আপনার জানা আছে ত্রিফলার উপকারিতা সম্পর্কে?
প্রায় ২০০০ বছর ধরে আুর্বেদ চিকিৎসায় এই প্রকৃতিক উপাদানটির ব্যবহার হয়ে আসছে। আর কেন হবে নাই বা বলুন! শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে ত্রিফলার যে বাস্তবিকই কোনও বিকল্প নেই, তা আধুনিক বিজ্ঞানও মেনে নিয়েছে। এখন প্রশ্ন হল আদতে ত্রিফলা কী? তিনটি ফলকে শুকিয়ে নিয়ে তারপর তা গুঁড়ো করে একসঙ্গে মিলিয়ে যে শক্তিশালী মিশ্রনটি তৈরি করা হয়, তাকেই আযুর্বেদ শাস্ত্রে ত্রিফলা বলা হয়ে থাকে। তিনটি ফল ব্যবহার করে এটি বানানো হয় বলেই তো এর নাম ত্রিফলা। সংস্কৃতে "ত্রি" কথার অর্থ হল তিনটি, আর "ফলা" হল ফল।
কী কী ফল ব্যবহার করে ত্রিফলা বানানো হয়? সাধারণত আমলকি, হরিতকি এবং বিভিতকি সহযোগে বানানো হয় এই ঔষধিটি, যাতে উপস্থিত একাধিক ভিটামিন এবং মনারেল ছোট-বড় নানা রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে এতে উপস্থিত গ্যালিক অ্যাসিড, ইলেগিক অ্যাসিড এবং চেবুলিনিক অ্যাসিড ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও কাজে আসে। তবে এখানেই শেষ নয়, নিয়মিত ত্রিফলা চুর্ণ খাওয়ার অভ্যাস করলে মেলে আরও অনেক উপকার, যেমন...
১.ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে:
২০১৫ সালে ক্যান্সার সেলের গ্রোথ এবং তার উপর ত্রিফলার প্রভাব সম্বর্কে একটি গবেষণা করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল নিয়মিত খালি পেটে এই আয়ুর্বেদিক চূর্ণটি খাওয়া শুরু করলে শরীরের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে ক্যান্সার সেল জন্মে নেওয়ার কোনও সুযোগই পায় না। আর একবার যদি জন্ম নিয়েও ফেলে তাহলেও তার বৃদ্ধি আটকে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত, অরেকটি স্টাডিতে প্রমাণিত হয়েছে যে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধেও ত্রফলা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটির অন্দরে উপস্থিত গ্যালিক অ্যাসডি এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়:
সকালটা যদি আপনার কাছে অভিশাপের সমান হয়, তাহলে আজ থেকেই ত্রিফলা চুর্ন খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ বেশ কিছু কেস স্টাডিতে একথা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যে বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে কনস্টিপেশনের মতো রোগের চিকিৎসায় এই হার্বাল মিশ্রনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, কোলোনকে পরিশুদ্ধ করার মধ্যে দিয়ে আরও নানা ধরনের রোগের আশঙ্কা কমাতেও ত্রিফলার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
৩. অ্যাংজাইটি দূর করে:
নিয়মিত খালি পেটে ত্রিফলা খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের অন্দরে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা ব্রেন পাওয়ার বাড়ানোর পাশাপাশি মানসিক ক্লান্তি এবং স্ট্রেস কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। প্রসঙ্গত, বর্তমানে আমাদের দেশে যেভাবে অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে ত্রিফলার খাওয়ার প্রয়োজনও যে বেড়েছে, সে বিষযে কোনও সন্দেহ নেই।
৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে:
অতিরিক্ত ওজনরে কারণে যদি চিন্তায় থাকেন, তাহলে ডায়েট কন্ট্রোলের পাশাপাশি আপনার প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত ত্রফলা চুর্ন। কারণ নিয়মিত এই প্রাকৃতিক উপাদানটি গ্রহন করলে বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটার কারণে শরীরে মেদ জমার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে শুরু করে।
৫. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়:
শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে হার্টে রক্ত সরবরাহকারি আর্টারিগুলি বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত না পাওয়ার কারণে হার্ট দুর্বল হয়ে পরে । সেই সঙ্গে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। সেই কারণেই তো নিয়মিত ত্রিফলা খাওয়া পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। আসলে এমনটা করলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, জার্নাল অব ফার্মাসিউটিকাল সোসাইটি অব জাপানে প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে ত্রফলায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একদিকে যেমন এল ডি এল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তেমনি হার্টের অন্দরে যাতে কোনওভাবেই প্রদাহ সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোনও ধরনের করনারি আর্টারি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
৬. আর্থ্রাইটিসের প্রকোপ কমায়:
ত্রিফলায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনল শরীরে প্রবেশ করার পর প্রদাহ কমাতে শুরু করে। আর একবার ইনফ্লেমেশন কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই জয়েন্ট পেন কমতে থাকে। সেই সঙ্গে শরীররে সচলতাও বৃদ্ধি পায়। তাই এমন ধরনের কোনও রোগে যদি ভুগতে থাকেন, তাহলে নিশ্চিন্তে একবার এই প্রকৃতিক উপাদানকে কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন। এমনটা করলে উপকার যে মিলবে, তা হলফ করে বলতে পারি।
কীভাবে ত্রিফলাকে ব্যবহার করতে হবে?
এই আয়ুর্বেদিক ওষুধটি ডিনারের ৩০ মিনিট আগে খেতে হবে, হয় ট্যাবলেট হিসেবে খেতে পারেন, নয়তো ত্রিফলা পাউডারকে গরম জলে গুলে চায়ের মতো করেও পান করতে পারেন। তবে যেভাবেই গ্রহণ করুন না কেন, মধ্যা কথা প্রতিদিন যদি ত্রফলা চূর্ন খেতে পারেন, তাহলে শরীর নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকবে না।
সাবস্ক্রাইব করুন বোল্ডস্কাই বাংলা | Subscribe to Bengali Boldsky.
Related Articles
দীর্ঘদিন সুস্থভাবে যদি বাঁচতে চান তাহলে রোজ লবঙ্গ চা পান করতে ভুলবেন না যেন!
জানেন কি মিল্ক পাউডার মুখে মাখলে কি হতে পারে?
হলুদ দাঁতকে ঝকঝকে সাদা করার ইচ্ছা আছে নাকি? তাহলে কাজে লাগাতে ভুলবেন না এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলিকে!
বয়স ৩০ পেরিয়েছে নাকি? তাহলে সুস্থ থাকতে রোজের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে এই খাবারগুলিকে!
নিয়মিত মুখে এবং হাতে পায়ে ঘি লাগিয়ে মাসাজ করলে কী কী উপকার মেলে জানা আছে?
চিকিৎসকেরা প্রতিদিন ব্রাহ্মী শাক খেতে কেন বলছেন জানেন?
টানা ৪ ঘন্টা বসে কাজ করেন নাকি? তাহলে খুব শীঘ্র মরতে চলেছেন আপনি!
নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে কত উপকার পাওয়া যায় জানা আছে?
চটজলদি ওজন কমাতে চান? তাহলে প্রতিদিন খাওয়া শুরু করুন এই খাবারগুলি!
সাদা চুলকে নিমেষে কালো করতে কাজে লাগাতে ভুলবেন না এই প্রকৃতিক উপাদনগুলিকে!
ওয়ার্ল্ড লিভার ডে: এই খাবার এবং পানীয়গুলি খেলে দেখবেন কোনও দিন লিভার খারাপ হবে না!
হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের কারণে মরতে না চাইলে প্রতিদিন সামদ্রিক মাছ খেতে ভুলবেন না যেন!