Just In
রোজ রাত্রে ঘুমতে যাওয়ার আগে অল্প মধু সঙ্গে এক কোয়া করে রসুন খাওয়া উচিত কেন জানা আছে?
রসুনে উপস্থিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা দেহের আনাচে-কানাচে জমতে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে যদি এক কোয়া করে রসুন, পরিমাণ মতো মধুতে চুবিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে তৎক্ষণাৎ ভিটামিন এ, সি, বি-কমপ্লেক্স, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, কপার এবং আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে দেহে প্রবেশ করে নানা ধরনের উপকারি এসেনশিয়াল অয়েল, অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এলিমেন্ট এবং বেশ কিছু বিরল খনিজ, যেমন ধরুন- টেলুরিয়াম, জার্মেনিয়াম এবং সেলেনিয়াম। প্রসঙ্গত, এই সবকটি উপাদানই শরীরের প্রতিটি ইঞ্চিকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষত বেশ কিছু মারণ রোগকে দূরে রাখতে বাস্তবিকই রসুন এবং মধুর এই জড়ির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। যেমন ধরুন...
১. ব্লাড ক্লট হওয়ার আশঙ্কা দূর হয়:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত রাত্রে রসুন খাওয়া শুরু করলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার প্রভাবে ব্লড ক্লট হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। শুধু তাই নয়, রক্ত সম্পর্কিত নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও আর থাকে না।
২. পেপটিক আলসারের মতো রোগ দূরে থাকে:
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে রাত্রে বেলা রসুন এবং মধু খাওয়া শুরু করলে পাকস্থলিতে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং প্যারাসাইটরা সব মারা পরে। ফলে নানাবিধ পেটের রোগে আক্রান্ত হাওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি পেপটিক আলসারের মতো রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়।
৩.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
রসুনে উপস্থিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা দেহের আনাচে-কানাচে জমতে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। আর একবার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে উঠলে একদিকে যেমন সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে, তেমনি ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
৪. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান বা টক্সিনের কারণে ত্বকের যাতে কোনও ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে রসুন। সেই সঙ্গে কোলাজিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখার মধ্য়ে দিয়ে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। অন্যদিকে প্রায় প্রতিদিন যদি থেঁতো করা রসুন চুলে লাগানো যায়, তাহলও কিন্তু দারুন উপকার মেলে। একবার ভাবুন আকারে ওইটুকু, কিন্তু কত কাজেই, তাই না!
৫. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
হে ভোজনরসিক বাঙালি নানা পদের স্বাদ নিতে নিতে কি হজম ক্ষমতাটা একেবারে গোল্লায় গেছে? তাহলে নিয়মিত রাতের বেলা রসুন খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন হজমের উন্নতি ঘটতে সময় লাগবে না। আসলে রসুনে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান স্টমাকের ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে বদ-হজম এবং নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমে চোখের নিমেষে।
৬. ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে থাকে:
একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিদিন রসুন খেলে পাকস্থলী এবং কলোরেকটাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। তাই যাদের পরিবারে এই ধরনের ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে তারা রসুন খাওয়া কোনও দিন বন্ধ করবেন না। দেখবেন উপকার পাবেই পাবেন!
৭. নানাবিধ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:
রসুনে উপস্থিত একাধিক কার্যকরি উপাদান ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস সহ একাধিক জীবাণুর সংক্রমণ আটকাতে যে কোনও আধুনিক মেডিসিনের থেকে তাড়াতাড়ি কাজে আসে। তাই তো প্রতিদিন ১-২ কোয়া রসুন খেলে এমন ধরনের সব রোগের খপ্পরে পরার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।
৮. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে:
রসুনে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপাটিজ রয়েছে। এই উপাদানটি একদিকে যেমন শরীরে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, তেমনি উচ্চ রক্তচাপকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর একথা তো সবারই জানা আছে যে এই দুটি জিনিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে তো হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার আশঙ্কা একেবারেই থাকে না। প্রসঙ্গত, রক্তে শর্করার মাত্রাকে স্বাভাবিক রাখার মধ্যে দিয়ে ডায়াবেটিসের মতো রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও রসুনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
৯. সব ধরনের মস্তিষ্কঘটিত রোগ দূরে থাকে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে রসুনে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন খেল দেখাতে শুরু করে যে নানাবিধ নিউরোডিজেনারেটিভ অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। বিশেষত অ্যালঝাইমার্স মতো রোগ দূরে থাকে।
১০. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে রসুনের মধ্যে থাকা বায়োঅ্যাকটিভ সালফার, রক্তচাপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে শরীরের অন্দরে সালফারের ঘাটতি দেখা দিলে তবেই রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে। এই কারণেই তো দেহের অন্দরে সালফারের ঘাটতি মেটাতে নিয়মিত রাত্রে এক কোয়া করে রসুন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
১১. শরীর থেকে সব ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যায়:
প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস গরম জলের সঙ্গে দুটো রসুনের কোয়া খেলে রক্তে উপস্থিত নানা বিষাক্ত উপাদানেরা শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে ত্বক এবং শরীর উভয়ই চাঙ্গা হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, যারা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন, তারাও যদি দু কোয়া রসুন খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক গ্লাস গরম জলে লেবু চিপে সেই জল পান করতে পারেন, তাহলে ওজন কমতে একেবারেই সময় লাগে না।
১২. যে কোনও ক্ষতের চিকিৎসায় কাজে আসে:
কেটে গেলে এবার থেকে ক্ষতস্থানে এক টুকরো রসুন রেখে ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিন। তাহলেই দেখবেন জ্বালা-যন্ত্রণা কমে যাবে। সেই সঙ্গে ক্ষতও সারতে শুরু করবে। আসলে রসুনে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই তো যন্ত্রণা কমাতে এটি এতটা কাজে লাগে।
১৩. হাড় শক্তপোক্ত হয়:
শুনে একটু অবাক লাগছে, কি তাই তো? তবে একথার মধ্যে কোনও ভুল নেই যে নিয়মিত রসুন খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি প্রপাটিজের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন নানাবিধ যন্ত্রণা কমে, তেমনি হাড়ের ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
রাত্রে বেলা রসুন খাওয়ার কিছু নিয়ম:
রাতের খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে ২ টো রসুনের কোয়া নিয়ে ভাল করে টুকরো করে নিতে হবে। তারপর কিছু সময় অপেক্ষা করে একটা চামচে রসুনের টুকরোগুলো নিয়ে পরিমাণ মতো মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে, ইচ্ছা হলে মধুর জায়গায় জলের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। তবে মধুর সঙ্গে খেলেই কিন্তু বেশি উপকার পাওয়া যায়।