Just In
Don't Miss
নিয়মিত বেলের শরবত খাওয়া উচিত কেন জানেন?
ছোট বেলায় দেখেছি আমার দাদু-ঠাকুমা প্রায় রোজই এক গ্লাস করে বেলের শরবত খেতেন। কেন খেতেন তখন বুঝিনি যদিও। এখন বুঝি। কারণ আধুনিক কালে হওয়া একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে শরীরকে সব দিক থেকে সুস্থ রাখতে বাস্তবিকই বেলের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো আজকের প্রজন্মকেও নিয়মিত বেলের শরবত খাওয়া পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
বেলের অন্দরে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার, প্রোটিন এবং আয়রন নানাভাবে শরীরের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষত কনস্টিপেশন, বদ-হজম, পেপটিক আলসার, পাইলস, রেসপিরেটরি প্রবলেম এবং ডায়ারিয়ার মতো সমস্যা কমাতেও এই ফলটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তবে এখানেই শেষ নয়, বেশ কিছু কেস স্টাডি করে দখা গেছে নিয়মিত বেলের রস খাওয়া শুরু করলে মেলে আরও অনেক উপকারিতা। যেমন...

১. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
স্টমাকে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার মেরে ফেলে হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বেলের অন্দরে থাকা উপকারি উপাদানেরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে এতে উপস্থিত ফরোনিয়া গাম নামক একটি উপাদান ডায়ারিয়া এবং নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমাতেও সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে বেলের অন্দরে থাকা টেনিন নামক উপাদান পাইলস এবং পেপটিক আলসারেরও প্রকোপ কমায়। একথায় পেট সম্পর্কিত নানাবিধ রোগের ওষুধ হিসেবে আজও আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বেলের উপরই ভরসা করে থাকেন। এবার বুঝেছেন তো রোজের ডায়েটে বেলের শরবতের অন্তর্ভুক্তি ঘটালে কতটাই না উপকার পাওয়া যায়।

২. শরীরকে বিষ মুক্ত করে:
বেশ কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত মাত্র ৫০ এমজি বেলের রস, গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে রক্তে উপস্থিত টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে কোষেদের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, বেলের রস লিভার এবং কিডনির কর্মক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে। ফলে শরীরে কোনও ক্ষতিকর উপাদানই জমতে পারে না, যে কারণে রোগভোগের আশঙ্কাও অনেক কমে যায়।

৩. ডায়াবেটিস রোগকে দূরে রাখে:
বেল ফলের পাশাপাশি বেল গাছের শাখা প্রশাখার অন্দরে ফেরোনিয়া গাম বলে একটি উপাদান থাকে, যা ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, রক্তে যাতে হঠাৎ করে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ডায়াবেটিক রোগীদের কোনও ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা না দেয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে এই উপাদানটি। এই কারণেই তো শুধু ডায়াবেটিক রোগীদের নয়, সবাইকেই প্রতিদিন এক গ্লাস করে বেলের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৪. ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ায়:
বেল গাছের পাতা নিয়মিত ফুটিয়ে খেলে ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে সর্দি-কাশি এবং বুকে কফ জমার মতো সমস্যাও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায় না। প্রসঙ্গত, ঠান্ডা লেগে গলার যন্ত্রণা হলে, তা কমাতে এবং সার্বিকভাবে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. ভিটামিন সি-এর ঘাটতি দূর করে:
বেল ফলের অন্দরে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, যা রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতিতে, শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে, দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে এবং ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ বাড়তে থাকলে হার্টের কর্মক্ষমতাও বাড়ে। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগও ঘারে চেপে বসার সুযোগ পায় না।

৬. এনার্জির ঘাটতি দূর করে:
১০০ গ্রাম বেলের অন্দরে রয়েছে প্রায় ১৪০ ক্যালরি, সেই সঙ্গে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান, যা প্রতিটি কোষের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর, ভিতর এবং বাইরে থেকে খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং ক্লান্তি দূর হয়।

৭. কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ায়:
নিয়মিত এক গ্লাস করে বেলের শরবত খেলে কিডনিতে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানেরা বেরিয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কিডনির কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে শরীরের এই ভাইটাল অর্গানটির কর্মক্ষমতা এতটা বৃদ্ধি পায় যে কোনও ধরনের কিডনি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়।

৮. লিভারের খেয়াল রাখে:
বেলে উপস্থিত বিটা-ক্যারোটিন, থিয়েমিন এবং রাইবোফ্লবিন লিভারের দেখভালে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই যারা নিয়মিত মদ্যপান করে থাকেন, তারা যদি রোজের ডায়েটে বেলের সরবতের অন্তর্ভুক্তি ঘটান, তাহলে লিভারের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যে কমে, সে বিষযে কোনও সন্দেহ নেই!