Just In
জবা ফুলের চা না খেলে খেল খতম!
চা পানে অরুচি, তাও আবার তর্ক প্রিয় বাঙালির! এটা তো হতেই পারে না। তাই তো হে খাদ্য রসিক বাঙালি, কোচি পাঁঠা আর সরষের তেলে ভাসমান তরকারির নানা পদের কারণে যাতে কিডনি,লিভার আর হার্টের কোনও ক্ষতি না হয়,
চা পানে অরুচি, তাও আবার তর্ক প্রিয় বাঙালির! এটা তো হতেই পারে না। তাই তো হে খাদ্য রসিক বাঙালি, কোচি পাঁঠা আর সরষের তেলে ভাসমান তরকারির নানা পদের কারণে যাতে কিডনি,লিভার আর হার্টের কোনও ক্ষতি না হয়, তার জন্য লিকার আর দুধ চা ছেড়ে খাওয়া শুরু করুন জবা ফুলের চা! দেখবেন আর কোনও চিন্তাই থাকবে না।
বলেন কি দাদা, এতো প্রথমবার শুনলাম যে জবা ফুল দিয়েও চা বানানো সম্ভব! আরে মশাই এই ভূ-ভারতে এমন অনেক কিছু রয়েছে যে সম্পর্কে আমাদের কোনও জ্ঞান নেই, তাই তো তর্কে না গিয়ে জেনে নিন প্রতিদিন এই বিশেষ ধরনের চাটি পান করলে কী কী উপকার মিলতে পারে। প্রসঙ্গত, আর্গুয়ে দা জামাইকা নামে পরিচিত জবা ফুল দিয়ে বানানো চায়ে সন্ধান মেলে এমন সব উপকারি উপাদানের যেগুলি নানা রোগ থেকে আমাদের প্রতিনিয়ত বাঁচিয়ে চলে। সেই কারণেই তো সারা বিশ্বে এই চায়ের জনপ্রিয়তা চোখে পরার মতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এদেশে এখনও অনেকেই জবা ফুলের চায়ের সম্পর্কে খোঁজ রাখেন না। সেই কারণেই তো আজ এই চায়ের এমন কিছু গুণাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করবো, যা জানার পর আপনার চোখ কপালে উঠে যাবে।
জবা ফুল দিয়ে বানানো চা খেলে সাধারণত যে যে উপকারগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি হল...
১. রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখে:
দেখুন মশাই এ বিষয়ে আপনিও জানেন, আর আমিও যে আজকাল অফিসে কাজের চাপে ব্লাড প্রেসার আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তাই তো অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই কারও কারও লো তো কারও হাই পিচে পৌঁছাতে শুরু করে রক্তচাপ। সেই কারণেই তো আজকের পরিস্থিতিতে জবা ফুলের চা খাওয়ার প্রয়োজন বেড়েছে। প্রসঙ্গত, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশ করা এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় এই বিশেষ চাটিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ নিমেষে রক্তচাপকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো যারা বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন, তারা দিনে যদি একবার জবা ফুলের চা খান, তাহলে কিন্তু দারুন উপকার পেতে পারেন।
২. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়:
ব্লাড প্রেসারের বেস্ট ফ্রেন্ড কে জানা আছে? না, কে বলুন তো? কে আবার খারাপ কোলেস্টেরল। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে যেসব ছেলে-মেয়েরা আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন, তাদের বেশিরভাগকে দিনের নানা সময় কাজ করতে হয়। ফলে কাজের চাপে একদিকে যেমন ব্লাড প্রেসার উর্ধমুখী হয়, তেমনি অন্যদিকে এদিক-সেদিকের খাবার খাওয়ার কারণে রক্তে বাড়তে শুরু করে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা। ফলে হার্টের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে কম বয়সে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এমন পরিস্থিতির শিকার যদি আপনি হতে না চান, তাহলে আজ থেকেই জবা ফুলের চা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন হার্টের কোনও ক্ষতি হবে না। কারণ এই পানীয়টি ব্লাড ভেসেলের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে ব্রেন এবং হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
৩. লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ে:
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে জবা ফুলে উপস্থিত অ্যান্টিক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর রক্তে ভেসে বেরানো টক্সিক উপাদানদের বার করে দেয়। ফলে লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে আরও অনেক উপকার মেলে। যেমন ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে।
৪. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজে ঠাসা:
জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড, যা একদিকে যেমন ভিটামিন সি-এর ঘাটতি মেটায়, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়ে শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। এখানেই শেষ নয়, এই চায়ের অন্দরে থাকা বেশ কিছু উপকারি উপাদান শরীরের অন্দর মহলে প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকেও বাঁচায়। সেই কারণেই তো সর্দি-জ্বরের প্রকোপ কমাতে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা জবা ফুল দিয়ে বানানো চা খাওয়ার পরামর্শ দেন।
৫. পিরিয়োডের কষ্ট কমায়:
মাসের এই বিশেষ সময় যদি নিয়মিত জবা ফুল দিয়ে বানানো চা খাওয়া যায়, তাহলে পিরিয়োড ক্র্যাম্প এবং যন্ত্রণা অনেকটাই কমে। সেই সঙ্গে অন্যান্য অস্বস্তিও দূর হয়। প্রসঙ্গত, হরমোনাল ইমব্যালেন্স কমাতেও এই পানীয়টি দারুন কাজে আসে। তাই মেয়েরা যদি প্রতিদিন এই চাটি পান করতে পারেন, তাহলে দারুন উপকার মেলে।
৬. মানসিক অবসাদ কমায়:
নানা কারণে মনটা কি বেজায় খারাপ? তাহলে ঝটপট এক কাপ হিবিস্কাস টি বানিয়ে ফেলে পান করে ফেলুন। এমনটা করলে দেখবেন মুড একেবার ফ্রেশ হয়ে যাবে। কারণ এতে উপস্থিত উপকারি ভিটামিন এবং মিনারেল নার্ভাস সিস্টেমে তৈরি হওয়া প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি অ্যাংজাইটি কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডিপ্রেশন কমতে সময় লাগে না।
৭. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:
বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে দিয়ে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘাটতে এই পানীয়টির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে জবা ফুলে উপস্থিত ডিউরেটিক প্রপাটিজ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, কনস্টিপেশনের প্রকোপ কমাতেও এই ঘরোয়া ঔষুধটি দারুন কাজে আসে কিন্তু!
৮. ওজন কমায়:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত হিবিস্কাস টি খেলে শরীরে শর্করা এবং স্টার্চের শোষণ কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে শুরু করে। তবে এখানেই শেষ নয়, বেশ কয়েকজন গবেষক এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আরেকটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন। তাদের মতে জবা ফুলের চায়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে অ্যামিলেস নামক একটি উপাদানের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।