Just In
প্রতিদিন দই খাওয়া কি উচিত?
পেপটিক আলসার হওয়ার পিছনে দায়ি এইচ পাইলোরি নামক ব্য়াকটেরিয়াকে মেরে ফলতে দইয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
সময়টা ৬০০০ বি.সি। হঠাৎ করেই একটা নতুন খাবারের জন্ম হল। একদল মেষপালক তাদের সংগ্রহ করা লিটার লিটার দুধ বেশ যত্নেই রেখেছিল। কিন্তু কয়েকদিন মধ্যে কী একটা হল, দুধ বদলে গেল দইয়ে। সেই শুরু। তারপর সময় বদলেছে। বদলেছে যুগ। তবু দইয়ের জনপ্রিয়তা একটুকুও কমেনি, বরং বেড়েছে।
ইতিহাসবিদদের মতে, সারা বিশ্বে দইয়ের এত জনপ্রিয়তার পিছনে জেঙ্গিস খানের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। ১২০৬ সালের পর থেকে আগামী কয়েক দশক ধরে নিজের সাম্রাজ্যের অবয়বকে এক অন্য় মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন এই মঙ্গোলিয়ান যোদ্ধা। এই সময় এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য অবিয়ান চালানোকালীন দইই ছিল জেঙ্গিস খানের মূল খাবার। আসলে সে সময়েও দইয়ের পুষ্টিগুণ কারও অজানা ছিল না। কিন্তু একটা প্রশ্ন সেই থেকেই উঠতে শুরু করেছিল। কী ছিল সেই প্রশ্ন? আচ্ছা প্রতিদিন দই খাওয়া কি শরীরের পক্ষে ভাল?
এতদিনে সে প্রশ্নের উত্তর মিললো। নানাবিধ গবেষণার পর চিকিৎসকেদের মনে আর কোনও সন্দেহ রইল না যে শরীরকে নানাবিধ জটিল রোগ থেকে দূরে রাখতে এবং সার্বিকভাবে দেহের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দইয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো প্রতিদিন শুধু নয়, দিনে দুবার করে দই খেলেও কোনও ক্ষতি হয় না। আসলে এই প্রোবায়োটিকটির শরীরে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান নানাভাবে শরীরের কাজে লেগে থাকে। যেমন...
১. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:
বেশি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে দইয়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা পাকস্থলিতে হজমে সহায়ক ভাল ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেই কারণেই তো বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমাতে দই খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, পৃথক একটি গবেষণায় দেখা গেছে পেপটিক আলসার হওয়ার পিছনে দায়ি এইচ পাইলোরি নামক ব্য়াকটেরিয়াকে মেরে ফলতেও দইয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। সেই কারণেই তো পেপটিক আলসারের চিকিৎসায় দইয়ের অন্তর্ভুক্তির পিছনে সাওয়াল করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
২. হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
রক্তে খারাপ কোলেস্টরল বা এল ডি এল-এর মাত্রা কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয় দই। তাই তো নিয়মিত এই দুগ্ধজাত খাবারটি খেলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই তো পরিবারে যদি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ইতিহাস থাকলে দইকে সঙ্গ ছাড়ার ভুল কাজটি করবেন না যেন!
৩. দুধের আদর্শ বিকল্প:
এমন অনেকই আছেন যারা একেবারে দুধ খেতে পারেন না। কারও গন্ধ লাগে, তো কারও বমি পাই। এই ধরনের সমস্যাকে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বলা হয়। প্রসঙ্গত, দুধ থেকে দই হওয়ার সময় ল্যাকটোজ, ল্যাকটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়ে যায়। ফলে দই খেলে না গা গোলায়, না বমি পায়।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
দইয়ে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার পর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে দেয় যে সংক্রমণ থেকে ভাইরাল ফিবার, কোনও কিছুই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। ফলে সুস্থ জীবনের পথ প্রশস্ত হয়।
৫. হাড় এবং দাঁতের জন্য খুব উপকারি:
দুধের মতো দইয়েও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম। এই দুটি উপাদান দাঁত এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বুড়ে বয়সে গিয়ে যদি অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো রোগ আক্রান্ত হতে না চান, তাহলে এখন থেকেই নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে দেখবেন উপকার মিলবেই মিলবে।
৬. স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি কমাতে সাহায্য করে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে দই খাওয়ার পর আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হয় যে মানসিক চাপ এবং অ্যাংজাইটি কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে যেসব মারণ রোগগুলির কারণে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তার প্রায় সবকটির সঙ্গেই স্ট্রেসের যোগ রয়েছে। তাই তো নিয়মিত দই খাওয়ার প্রয়োজনয়ীতা যে বেড়েচে, সে বিষযে কোনও সন্দেহ নেই।
৭. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কাজে লাগে:
দইয়ে পরিমাণ মতো বেসন এবং অল্প করে লেবুর রস মিশিয়ে যদি মুখে লাগাতে পারেন তাহলে ত্বক নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকে না। আসলে দইয়ে থাকা জিঙ্ক, ভিটামিন ই এবং ফসফরাস এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পলন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এই ফেস প্যাকটি সপ্তাহে কম করে ২-৩ বার লাগালে দারুন উপকার মেলে।