Just In
রসুনের রহস্য জানা আছে?
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা- যে কোনও সময়েই আমাদের নাক বন্ধ আর সর্দি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে ২-৩ কোয়া রসুন গরম জলে মিশিয়ে খেলেই কেল্লাফতে!
বাঙালি বাড়িতে রান্না মানেই তাতে রসুন-ফোড়ন পরবেই পরবে! ডালে রসুন, ঝোলে রসুন, তেলে রসুন- আরও কত রকমের রান্নায় যে রসুনের ব্যবহার হয়ে থাকে তার কোনও হিসাব নেই। আহা, রসুন গরম তেলের ছোঁয়া পেল তো রান্না আরও হিট। যেমন গন্ধে, তেমনই স্বাদে। এখন তো আবার ইংরেজি খাবারেও এই প্রাকৃতিক উপাদনটি দেওয়া হয়ে থাকে। মোট কথা মুখরচক খাবার মানেই তাতে রসুন থাকা মাস্ট! সে পিৎজা হোক কী পাস্তা। ভাজাভুজি ডুবিয়ে খেতে এখন আবার প্যাকেটবন্দি গারলিক ডিপও বাজারে পাওয়া যায়। তবে শুধু স্বাদ বা গন্ধ নয়, রসুনের প্রচুর গুণও আছে। এমনকি, প্রতিদিন এটির ব্যবহারে অনেক রোগকেও প্রতিরোধও করা যায়। তাহলে আর অপেক্ষা কেন! চলুন দেখে নেওয়া যাক, কিভাবে রসুনকে কাজে লাগিয়ে আমরা উপকৃত হতে পারি।
প্রাচীনকাল থেকেই নানা দেশে একাধিক রোগের চিকিৎসায় রসুনের ব্যবহার হয়ে আসছে, যা আজও করা হয়। যেমন ধরুন, মধ্যযুগে ইউরোপে প্লেগের প্রকোপ কমাতে এবং ইজিপ্টে মৃতদেহের সঙ্গে রসুনকেও সমাধি দেওয়া হতো। কারণ জীবিত থাকাকালীন তো বটেই, মরে যাওয়ার পরেও শরীরে নানা ধরণের জীবাণু বা ছত্রাক ঘটিত সংক্রমণ ঠেকাতে রসুনের জুড়ি মেলা ভার। শুধু তাই নয়, রসুন আমাদের শরীরের অন্দরে সালফার, অ্যালিসিন ইত্যাদি উপাদানের ঘাটতি দূর করে। সেই সঙ্গে ক্যান্সার রোধও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম রসুনে থাকে ১৫০ ক্যালরি, ৩৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ৬.৩৬ গ্রাম প্রোটিন। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৬, ভিটামিন সি, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, আইরন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস,পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং জিঙ্ক। এর ফলে রসুন আমাদের শরীর থেকে নানারকম খারাপ উপাদান বের করে দিতে পারে। এছাড়াও রসুন আমাদের ত্বকের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে। এখানেই শেষ নয়, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া করে রসুন খেলে আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন...
রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে:
আমাদের সকলের মুখেই ব্রণ বা নানারকমের সমস্যা হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা সেগুলি থেকে মুক্তি পেতে বাজার চলতি হাজারো কেমিক্যাল মেশানো প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। আসলে এমন ধরণের ত্বকের রোগ হয় মূলত রক্ত ঠিক মতো শোধন না হওয়ার কারণে! আর তাই, প্রসাধনী ব্যবহার না করে প্রতিদিন যদি সকালে হালকা গরম জলের সঙ্গে দুই কোয়া রসুন খাওয়া যায়, তাহলে রক্ত পরিশোধিত হয়। ফলে এই ধরণের সমস্যা কমতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, যদি রোগা হতে চান, তাহলেও হালকা গরম জলে মধু মিশিয়ে তার সঙ্গে দু কোয়া রসুন চিবিয়ে খান, তাহলে ইতিবাচক পরিবর্তন হবেই হবে।
ঠাণ্ডা লাগার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়:
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা- যে কোনও সময়েই আমাদের নাক বন্ধ আর সর্দি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে ২-৩ কোয়া রসুন গরম জলে মিশিয়ে খেলে অথবা এর মধ্যে একটু মধু এবং আদা মিশিয়ে খেলে সর্দি বা ঠাণ্ডা লাগার হাত থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও এই ঘরোয়া ঔষধিটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, আচ্ছা বলতে পারেন মাংস রান্নার সময় রসুন কেন ব্যবহার করা হয়? প্রাচীন কালে যারা মাংস খেতেন তাঁরা রসুনের ব্যবহার করতেন যাতে মাংস থেকে কোনও ভাবে সংক্রমণ না হতে পারে। অথবা হলেও যেন তা যেন শরীর প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়াও, যারা এমন কোনও কাজের সঙ্গে জড়িত থাকেন, যার ফলে শরীরে সংক্রমণ হতে পারে বা নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, তারাও বহুল পরিমাণে রসুন খেয়ে থাকেন।
হৃদরোগের আশঙ্কা কমায়:
প্রতিদিন রসুন খেলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে রক্ত সঞ্চালন এবং রক্তে সুগারের পরিমাণ যাতে ঠিক থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে হার্টের কোনও রকম ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে।
জীবাণুনাশক:
প্রায় ৭০০০ বছর আগে থেকে রসুন জীবাণুনাশক হিসাবে বহু দেশে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও শিশুদের ফিতাকৃমি রোধ করতেও রসুন দারুণ উপকারী। খুব কম পরিমাণে রসুন জলে মিশিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতের বহু সমস্যা দূর হয়।
ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করে:
বহু গবেষণা থেকে জানা যায় নিয়মিত রসুনের ব্যবহার নানা ধরনের ক্যান্সার, বিশেষত কোলন এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
চুল এবং ত্বকের যত্নে কাজে আসে:
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ত্বকে নানা ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়। যেমন ধরুন, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়। একই সঙ্গে ত্বক কুঁচকেও যেতে পারে। এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রসুনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এছাড়াও ত্বকের যে কোনও ধরণের সংক্রমণ ঠেকাতেও রসুনের জুড়ি মেলা ভার। শুধু তাই নয়, ত্বকে কোনও রকম ঘা হলে তাকেও রোধ করতে পারে এই প্রকৃতিক উপাদানটি। সেই সঙ্গে চুলের যত্নেও রসুন দারুণ কাজ করে। প্রসঙ্গত, রসুন বেটে মাথায় লাগালে স্কাল্প এবং চুলের নানা সমস্যা এবং চুল পড়া পর্যন্ত রোধ হয়।
ঘা বা ফোসকা সারিয়ে তোলে:
শরীরের কোথাও ঘা বা ফোসকা হলে সেই জায়গায় এক টুকরো রসুন ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিলে কিছুদিনের মধ্যেই ক্ষত সেরে যায়।
কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি:
রসুন ব্যবহারের সময় এগুলি মনে রাখুন...
১। শ্বাস কষ্টে ভুগছেন, এমন রোগীদের রসুন না খাওয়াই ভালো। কারণ এই অবস্থায় রসুন খেলে কষ্ট আরও বাড়তে পারে।
২। যে কোনও অপরেশনের কয়েকদিন আগে থেকে রসুন খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
৩। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত একদিনে ২-৩ কোয়ার বেশি রসুন খাওয়া চলবে না।