Related Articles
আচ্ছা কাঁচা লঙ্কা খেলে কি সত্যিই গ্যাস্ট্রিকের মতো পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে?
এমনটা অনেকে বিশ্বাস করেন ঠিকই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে কাঁচা লঙ্কা খাওয়া শুরু করে গ্যাস্ট্রিক বা অন্য কোনও ধরনের পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। বরং লঙ্কায় উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার, সোডিয়াম, থিয়ামিন, রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, ফলেট, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ, সি, কে, বি৬, পটাসিয়াম, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো উপাদান নানাভাবে শরীরের উপকারে লাগে থাকে। তাই লঙ্কা খেলে শরীরের ক্ষতি হয়, এই ধরনাটা শুধু ভুল নয়, ভিত্তিহীনও বটে।
প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে নিয়মিত ২-৩ টে করে কাঁচা লঙ্কা খাওয়া শুরু করলে একাধিক রোগ দূরে পালায়। যেমন ধরুন...
১. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
কাঁচা লঙ্কা খাওয়া মাত্র শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি স্যালাইভার উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়, যে কারণে হজম ক্ষমতার এত মাত্রায় উন্নতি ঘটে যে গ্যাস, অম্বল এবং বদহজমের মতো সমস্যা দূরে পালায় চোখের পলকে।
২. মন-মেজাজ চাঙ্গা হয়ে ওঠে:
একেবারেই ঠিক শুনেছেন বন্ধু! বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে কাঁচা লঙ্কা খাওয়া মাত্র শরীরে এন্ডোরফিন নামক একটি হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে স্ট্রেসের প্রকোপ যেমন কমতে শুরু করে, তেমনি মন-মেজাজও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ফলে মানসিক অবসাদের মতো সমস্যার খপ্পরে পরার আশঙ্কা যায় কমে।
৩.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
লঙ্কায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং বিটা-ক্যারোটিন, যা দেহে প্রবেশ করা মাত্র রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই চাঙ্গা করে তোলে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে নানাবিধ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
৪. সাইনাসের মতো রোগ দূরে পালায়:
লঙ্কায় উপস্থিত ক্যাপসিসিন মিউকাস মেমব্রেনের অন্দরে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ঠান্ডা লাগার কারণে হওয়া নানবিধ শারীরিক সমস্যা যেমন কমে যায়, তেমনি সাইনাস ইনফেকশনের কষ্ট কমতেও সময় লাগে না। তাই যারা ঠান্ডা পরলেই এমন ধরনের রোগে ভুগে থাকেন, তারা এই শীতকালে খাবারের সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা খেতে ভুলবেন না যেন!
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:
আপনি কি নতুন বছরে ওজন কমাতে বদ্ধপরিকর? তাহলে তো প্রতিদিন লঙ্কা খাওয়া মাস্ট! আসলে কাঁচা লঙ্কা সবজি না ফল এই নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিশেষজ্ঞরা একটা বিষয় মেনে নিয়েছেন যে প্রতিদিন কাঁচা লঙ্কা খেলে হজম ক্ষমতা এত মাত্রায় বৃদ্ধি পায় যে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে শরীরে জমে থাকা ফ্যাট সেলেরা এত মাত্রায় গলতে শুরু করে যে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে একেবারেই সময় লাগে না।
৬. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে:
একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নিয়মিত কাঁচা লঙ্কা খাওয়া শুরু করলে ইনসুলিনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সুযোগই পায় না। ফলে ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। তাই তো যাদের পরিবারে এই অসুখের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তাদের রোজের ডায়েটে কাঁচা লঙ্কার অন্তর্ভুক্তি মাস্ট!
৭. শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকে:
কাঁচা লঙ্কার স্বাদ কেন ঝাল হয় জানা আছে? আসলে এর মধ্যে উপস্থিত ক্যাপসিসিন নামক উপাদান এক্ষেত্রে নিজের খেল দেখিয়ে থাকে। আসলে এই উপাদানটি স্বাদ গ্রন্থিকে অ্যাকটিভ করে তোলার পাশাপাশি মস্তিষ্কের হাইপোথেলামাস অংশকে অতি মাত্রায় সচল করে তোলে। ফলে শরীরের তাপমাত্র এতটা কমে যায় যে গরমের খারাপ প্রভাব দেহের উপর পরার আশঙ্কা একেবারেই থাকে না। এই কারণেই তো আমাদের দেশ গরমকালে নানাভাবে কাঁচা লঙ্কা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
৮.ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে:
আই সি এম আর এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যানের দিকে নজর ফেরালে এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ থাকে না যে গত কয়েক দশকে আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কাঁচা লঙ্কা খাওয়ার প্রয়োজনও যে বেড়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আসলে রাজের ডায়েটে কাঁচা লঙ্কাকে রাখলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এই উপাদানটি দেহে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের বের করে দিতে একেবারেই সময় নেয় না। ফলে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রস্টেট ক্যান্সারকে দূরে রাখতে কাঁচা লঙ্কা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৯. ব্যথা কমে:
বছর শেষে এত পার্টি করেছেন যে আজ সকাল থেকেই বডি পেন একেবারে মাত্রা ছাড়িয়েছে? চিন্তা নেই! কয়েকটা লঙ্কা খাবারের সঙ্গে কাঁচা আবস্থাতেই খেয়ে ফেলুন। দেখবেন কষ্ট কমতে সময় লাগবে না। আসলে লঙ্কার অন্দরে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান দেহের অন্দরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখাতে শুরু করে যে কোনও ধরনের যন্ত্রণা কমতে সময়ই লাগে না। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতিতে এবং আলসারের মতো রোগকে দূরে রাখতেও কাঁচা লঙ্কা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১০. হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কাঁচা লঙ্কার অন্দরে উপস্থিত একাধিক উপাকির উপাদান রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে ফাইব্রিনোলেটিক অ্যাকটিভিটিকে বাড়িয়ে দিয়ে মস্তিষ্কে যাতে ব্লাড ক্লট না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে লঙ্কা। ফলে স্ট্রোকের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। তাই তো পরিবারে যদি হার্টের রোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে কাঁচা লঙ্কা খেতে ভুলবেন না যেন!
১১. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
লঙ্কায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং বিটা-ক্যারোটিন। এই দুটি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে বলিরেখা গায়েব হতে শুরু করে। ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। সেই সঙ্গে চুলের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। প্রসঙ্গত, এই দুটি উপাদান দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতেও সাহায্য করে। তাই তো বলি বন্ধু, যারা সারাটা দিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করুন, তারা যদি চোখ দুটোকে বাঁচাতে চান, তাহলে নিয়মিত কাঁচা লঙ্কা খেতে ভুলবেন না যেন!