Just In
চাকরি সংক্রান্ত স্ট্রেসকে সামলাতে না পারলে কি হতে পারে জানেন?
স্ট্রেস হল সেই বিষ, যা ধীরে ধীরে আমাদের শরীরকে ভিতর থেকে শেষ করে। ফলে কমে আয়ু। বাড়ে রোগভোগের আশঙ্কা। সেই সঙ্গে শরীরও ভাঙতে শুরু করে।
স্ট্রেস হল সেই বিষ, যা ধীরে ধীরে আমাদের শরীরকে ভিতর থেকে শেষ করে। ফলে কমে আয়ু। বাড়ে রোগভোগের আশঙ্কা। সেই সঙ্গে শরীরও ভাঙতে শুরু করে। তাই ভুলেও স্ট্রেকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে য়েতে দেওয়া চলবে না, না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ!
আজকের জেট যুগে চাকরি বাঁচাতে গেলে শুধু ভাল কাজ করলেই চলে না। সেই সঙ্গে অফিস পলিটিক্স, ব্রেণ গেম সহ আরও নানা ফ্যাক্টরকে সামলে চলতে হয়। তাই তো কাজের পাশপাশি আরও নানা কারণে মানসিক চাপ এত বাড়তে থাকে যে অনেকের পক্ষেই সেই চাপকে সমলে ওঠা সম্ভব হয় না। রেজাল্ট... সায়কিয়াট্রিস্টের চেম্বারে বাড়ে লাইন। কেউ কেউ তো আবার ঘুমের ওষুধ খাওয়া সহ আরও নানাবিধ নেশায় জড়িয়ে পরেন। আর দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কারণে শরীর ভাঙতে শুরু করে। ফলে কম বয়সেই ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টরল এবং সুগারের মতো লাইফ স্টাইল ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে পরে আজকার নতুন প্রজন্ম। এখানেই শেষ নয়, মিচিগান স্টেট ইউনির্ভাসিটির গবেষকদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে স্ট্রেস লেভেল বাড়তে শুরু করলে ইমিউন সেলের ক্ষমতা কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে পরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আর এমনটা হওয়া মাত্র ছোট-বড় নানা রোগ এসে বাসা বাঁধতে শুরু করে শরীরে। এবার বুঝেছেন তো স্ট্রেস কতটা ভয়ানক। তাই তো অফিস সংক্রান্ত স্ট্রেস যদি সামলে উঠতে না পারেন, তাহলে এই প্রবন্ধে একবার চোখ রাখতেই হবে! কারণ এই লেখায় এমন কিছু নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হল যা, যে কোনও ধরনের মানসিক চাপকে কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে থাকে। আর একবার যদি মানসিক চাপকে বাগে আনতে পারেন তাহলেই কেল্লাফতে!
চলুন আর অপেক্ষা না করে জেনে নেওয়া যাক মানসিক চাপকে সামলে ওঠার সেই সব সহজ উপায় সম্পর্কে...
নিয়ম ১:
অতিরিক্ত কাজের কারণেও কিন্তু স্ট্রেস লেভেল বাড়তে পারে। তাই নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কাজ নেবেন না। তাতে কিন্তু ক্ষতি হবে আপনারই। তাই শরীরকে বাঁচাতে "না" বলার অভ্যাস করাটা জরুরি।
নিয়ম ২:
আপনি কি মনে করেন, যতটা কাজ আপনি করছেন, ততটা সেলারি অপনাকে দেওয়া হচ্ছে না? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে একেবারে সময় নষ্ট না করে আজই ম্যানেজারের সঙ্গে এই বিষয়ে কখা বলুন। কারণ অনেক সময় এমন কারণের জন্যও মানসিক চাপ বাড়ে যায়।
নিয়ম ৩:
যদি বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ থাকে। তাহলে কিছু দিন এমনটা করুন। এতে অফিস সংক্রান্ত স্ট্রেসকে সামলে নেওয়াক সুযোগ পাবেন। কারণ অফিসে না গেলে ওই সব ফ্যাকটারগুলিও আপনাকে আর জ্বালাতন করতে পারবে না, ফল মন কিছুটা শান্ত হবে।
নিয়ম ৪:
যখন দেখবেন একেবারেই স্ট্রেসকে সামলাতে পারছেন না, তখন নিজেকে বোকা না বনিয়ে একটা সোজা প্রশ্ন করবেন। নিজেকে জিজ্ঞাসা করবেন, শরীরকে নষ্ট করে এই চাকরিটি করার সত্যিই কি কোনও প্রয়োজন আছে? উত্তর যদি না হয় তাহেল চাকরি পরিবর্তন করার ছেষ্টা করুন। ভুলে যাবেন না, শরীরকে নষ্ট করে কোনও কিছু করাই কিন্তু খুব বোকামি। কারণ শরীরই যদি ঠিক না থাকে, তাহলে বড় চাকরি, অনেক টাকা সেলারি নিয়েও বা কী করবে বলুন তো!
নিয়ম ৫:
এক্ষেত্রে মনকে শান্ত রাখাটা খুব জরুরি। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে মেডিটেশন। প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পর কম করে ১৫ মিনিট মেডিটেশন করলেই দেখবেন মন ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। আর একবার মন ভাল হয়ে যাবে তো পৃথিবীর কোনও নেগেটিভ শক্তিই আপনার কোনও আর কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।
নিয়ম ৬:
কয়েক মাস অন্তর অন্তর কাজের থেকে ব্রেক নিয়ে কোথাও ঘুরে আসবেন। এমনটা করলে দেখবেন স্ট্রেস লেভেল একেবারে কমে যাবে। তবে ছুটিতে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে আবার অফিস ল্য়াপটপটা নিয়ে যাবেন না যেন! তাতে স্ট্রেস লেভেল তো কমবেই না, সেই সঙ্গে ছুটি নষ্ট হওয়ার কষ্টে আরও মন খারাপ হয়ে যাবে।
নিয়ম ৭:
অনেকে একটা কথা আজকাল খুব বলে থাকেন, "অফিসে সবাই কলিগ, কেউ বন্ধু নয়!" এমন ধরণা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। অফিসেও পছন্দের কিছু মানুষ থাকা একান্ত প্রয়োজন। কারণ মনের চাপ বাড়লে তা উজার করে দিতে ইচ্ছা করে। আর সে সময় একজন বন্ধুই কিন্তু সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া একাদিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে যেসব মানুষেরা অফিসে খুব একটা মেলামেশা করেন না, তাদের মানসিক অবসাদের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
নিয়ম ৮:
আপনি কি আপনার কাজটা করে খুশি পান? কেন এই প্রশ্নটা করলাম জানেন! কারণ একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে মনের মতো কাজ করলে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ সেভাবে ছুঁতে পারে। কিন্তু যখনই মনের মতো কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায় না, তখনই মন খারাপ হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে আরও কিছু নেতিবাচক কারণ যদি এসে জড়ো হয়, তাহলে জীবন ধীরে ধীরে দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।
নিয়ম ৯:
কী কী কারণে স্ট্রেস হচ্ছে, সে সম্পর্কে এক জায়গায় লিখতে শুরু করুন। এমনটা করলে আপনার পক্ষে অফিস সংক্রান্ত নানা বিষয়কে সুন্দরভাবে মানিয়ে নিতে কোনও অসুবিধা হবে না। কারণ অপিন বুঝে যাবেন কাজ সংক্রান্ত কোন কোন ফ্যাক্টরগুলি আপনার মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। আসলে ইংরেজিতে ওই একটা কথা আছে না, "ইউ ক্যান ফাইট বেটার হোয়েন ইউ নো ইয়োর এনিমি"। এক্ষেত্রেও সেই একই স্ট্রেটেজি মানার পরামর্শ দেওয়া হল।
নিয়ম ১০:
প্রয়োজনে উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করুন। তাদের জানান কী কী কারণে আপনার স্ট্রেস হচ্ছে। এমনটা করলে অনেক সময়ই উচ্চ আধাকারিকরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। ফলে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। প্রসঙ্গত, বেশিরভাগকেই দিনের প্রায় ৮-১০ ঘন্টা সময় অফিসে কাটাতে হয়। তাই এই সময়টা যদি ভাল না কাটে তাহলে কিন্তু খুব বিপদ! আর এক্ষেত্রে অনেক সময়ই একার পক্ষে সব কিছু সামলে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই তো সহকর্মী বা টিম লিডারদের সাহায্য নেওয়ার বিষয়ে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়।