Just In
খাইকে পান বানারস ওয়ালা!
বিয়ে বাড়িতে ভুড়িভোজের পর কেন পান পরিবেশন করা হয় জানেন? কারণ পানের অন্দরে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়।
এমনিতেই বিখ্যাত, তার উপর অমিতাভ বচ্চন স্বয়ং গুণগান গেয়ে ফেলেছেন, আর দেখে কে!
পানের জনপ্রিয়তা যদিও সেদিনের কথা নয়। আজ থেকে প্রায় হাজার হাজার বছর আগে স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণ পান খেতে খুব ভালবাসতেন। শুধু তাই নয়, সংস্কৃতে লেখা একাধিক প্রাচীন বইয়েও পানের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে লেখা রয়েছে জীবনের ৮ টি আনন্দের মধ্যে একটি হল পান খাওয়া।
পানের এত কদর কেন, সেটাই ভাবছেন নিশ্চয়? কেন হবে নাই বা বলুন, একাদিক গবেষণায় দেখা গেছে পানের শরীরে উপস্থিত একাদিক উপকারি উপাদান শরীরে গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু রোগকে কাবু করতেও পানের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো আয়ুর্বেদ চিকিৎসাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটির বহুল ব্যবহার চোখে পরে।
আসলে পান খাওয়ার পর আমাদের শরীরের অন্দরে একাধিক পরিবর্তন হতে শুরু করে, যে কারণে বেশ কিছু উপকার মেলে। যেমন...
১. হজমের সমস্যা কমে যায়:
বিয়ে বাড়িতে ভুড়িভোজের পর কেন পান পরিবেশন করা হয় জানেন? কারণ পানের অন্দরে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে খাবার হজম হতে একেবারে সময়ই লাগে না। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে পান খাওয়ার সময় আমাদের মুখ গহ্বরে স্যালাইভার উৎপাদন খুব বেড়ে যায়, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে কিন্তু শুধু পান পাতা খেতে হবে, সঙ্গে অল্প জেয়ান চলতে পারে। কিন্তু তার বেশি কিছুই নয়! আসলে মাত্রাতিরিক্ত মশলা সহযোগে পান খেলে তেমন কোনও উপকারই মেলে না।
২. ওরাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:
পান পাতা চিবোনোর সময় স্যালাইভার ভিতরে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড নামে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জন্ম হয়, যা শরীরের অন্দরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের ক্ষতি করার ক্ষমতা কমিয়ে ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পলেন করে থাকে।
৩. মুখ গহ্বরে জীবাণুর প্রকোপ কমে:
পানে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল কম্পাউন্ড মুখ গহ্বরে উপস্থিত একাধিক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদের নিমেষে মেরে ফেলে। ফলে একদিকে যেমন দুর্গন্ধ দূর হয়, তেমনি দাঁতে পোকা হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, পানের সঙ্গে যদি লবঙ্গ এবং দারচিনি খাওয়া যেতে পারে, তাহলে এক্ষেত্রে আরও উপকার মেলে।
৪. গ্যাস্ট্রিক আলসারের কষ্ট কমে:
বেশ কিছু গবেষণাতে দেখা গেছে পান পাতার রসে এমন কিছু উপকারি উপাদান রয়েছে, যা গ্যাস্ট্রিক আলসারের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে এইচ পাইলোরি নামে যে ব্যাকটেরিয়ার কারণে এই রোগ হয়ে থাকে, সেই ক্ষতিকর জীবাণুটির ক্ষতি করার ক্ষমতা কমাতেও পান পাতার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
৫. আঁচিলের চিকিৎসাতেও কাজে আসে:
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এই বিষয়টির উল্লেখ পাওয়া যায় যে আঁচিলের প্রকোপ কমাতে পান পাতা দারুন কাজে আসে। শুধু তাই নয়, ত্বকের যে কোনও দাগ সারাতেও পান পাতার রস ব্যাপোকভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই আপনারও যদি এমন কোনও ত্বকের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে পানকে ভুলে যাবেন না যেন!
৬. ফোঁড়া এবং ব্রণ কমায়:
এক্ষেত্রে পান পাতার সঙ্গে অল্প করে রেড়ির তেল ক্ষতস্থানে লাগালে নিমেষে ফল মেলে। এমনটা করলে ফোঁড়ার যন্ত্রণা এবং অস্বস্তি যেমন কমে, তেমনি ব্রণের প্রকোপও হ্রাস পায়।
৭.ডায়াবেটিস রোগকে দূরে রাখে:
পান পাতা চেবানোর সময় যে রস আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তা রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে চলে এলে ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আর কোনও আশঙ্কাই থাকে না। তাই তো যাদের পরিবারে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে, তারা ইচ্ছা হলে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটির সাহায্য নিতে পারেন। দেখবেন উপকার মিলবে।
৮. সর্দি-কাশি কমায়:
ওয়েদার চেঞ্জ হওয়া মানেই সর্দির মারে কাবু? তাহলে তো মশাই পানের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে উপায় নেই। কারণ দেখা গেছে মধুর সঙ্গে পান পাতার রস মিশিয়ে খেলে এই ধরনের কষ্ট নিমেষে কমে যায়, সেই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার এতটাই উন্নতি হয় যে শুধু ভাইরাল ফিবার নয়, কোনও ধরনের সংক্রমণই আর ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
৯. মাথা যন্ত্রণা কমায়:
পান পাতায় উপস্থিত অ্যানালগেসিক প্রপাটিজ শরীরের অন্দরের প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো মাথা যন্ত্রণা কমাতে এই প্রকৃতিক উপাদানটি এতটা কাজে আসে। এক্ষেত্রে কপালে ১-২ টো পান পাতা রেখে দেবেন। দেখবেন উপকার মিলবে। বিশেষত যারা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন, তারা যদি এই সহজ পদ্ধতিটিকে কাজে লাগান, তাহলে রোজের কষ্ট থেকে মুক্তি মিলতে পারে কিন্তু!