Just In
আখের রস খাওয়া কতটা স্বাস্থ্যকর?
গরম কালে সুপার হিট। কিন্তু ঠান্ডার সময়ও কি অফিস ফেরতা বা লাঞ্চের পর এক গ্লাস আখের রস চলতে পারে? এমনটা করলে কি শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে?
গরম কালে সুপার হিট। কিন্তু ঠান্ডার সময়ও কি অফিস ফেরতা বা লাঞ্চের পর এক গ্লাস আখের রস চলতে পারে? এমনটা করলে কি শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে? এমন নানা প্রশ্ন আপানদের মাথায় আসে তো? আনেকে তো আবার রাস্তায় বিক্রি হওয়া আখের রস খাওয়া উচিত কিনা সেই নিয়েও ভাবতে বসে পরেন। তাই তো আজ এই প্রবন্ধে আখের রস নিয়ে সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা চালাবো আমরা। আশা করা যেতে পারে একবার প্রবন্ধটি পড়ে ফললে আখের রসের প্রতি আপনাদের এই বিমুখতা অনেকটাই কাটবে!
সারা বিশ্বের মধ্যে আখের উৎপাদেন আমাদের দেশের স্থান একেবারে উপরের দিকে হলেও আমরা ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের আধিকারি। আসলে আখের মধ্যে উপস্থিত একাধিক উপাকারি উপাদান যে আমাদের শরীরের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সে বিষযে অনেকেই জানেন না। তাই তো আজকের ডেটে এত রোগ আমাদের ঘিরে ধরেছে। তবে আর নয়! এবার থেকে আখের রসকে কাজে লাগিয়ে আমরা সুস্থ থাকবোই, এমন প্রতিজ্ঞা করতেই হবে। তবে তার আগে এই প্রকৃতিক উপাদানটি কিভাবে আমাদের শরীরের উপকারে লাগে, সে সম্পর্কে একটু ধারণা করে নেওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, আখের রসে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম সহ আরও সব উপকারি উপাদান নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। যেমন...
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:
আখের শরীরে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের অন্দরে প্রবেশ করার পর ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। প্রসঙ্গত, ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখতেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এবার বুঝেছেন তো আখের রস খাওয়াটা কতটা জরুরি।
২. কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ায়:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আখের রসে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে কিডনি স্টোনের মতো সমস্যা দূর করতেও সাহায্য় করে। প্রসঙ্গত, কিডনি ফাংশনকে ঠিক রাখতেও আখের রসের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
৩. লিভারের খেয়াল রাখে:
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র সম্পর্কিত একাধিক বইয়ে এমন উল্লেখ পাওয়া যায় যে লিভারকে সুস্থ রাখতে আখের রস দারুন কাজে আসে। সেই কারণেই তো জন্ডিসের প্রকোপ কমাতে রোগীকে আখের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। শুধু তাই নয়, শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি প্রোটিনের চাহিদা মেটাতেও আখ বিশেষ ভূমিকা নেয়।
৪. এনার্জির ঘাটতি দূর করে:
সারা দিন অফিস করে কি বেজায় ক্লান্ত হয়ে পরেছেন? তাহলে ঝটপট এক গ্লাস আখের রস খেয়ে ফেলুন। দেখবেন একেবারে চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। আসলে আখের অন্দরে থাকা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম এবং অন্য়ান্য় উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এনার্জির ঘাটতি দূর করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মন এবং শরীর, দুইই চনমনে হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, আখের রস শরীরের অন্দের প্লাজমা এবং বডি ফ্লইডের ঘাটতি মেটায়। এই ভাবেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়য়ে তোলে।
৫. কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা দূর করে:
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে আখের রসে উপস্থিত ল্যাক্সেটিভ প্রপাটিজ বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটায়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা কমতে সময়ই লাগে না। সেই সঙ্গে আখে থাকা অ্যালকেলাইন প্রপাটিজ গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে:
গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে একেবারে তলার দিকে থাকার কারণে আখের রস খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না। বরং এই প্রকৃতিক উপাদানটি গ্রহণ করলে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই তো ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ম খরে আখের রস খাওয়া পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ডায়াবেটিকদের একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আখের রস খাওয়া উচিত। কারণ জেনে নেওয়া উচিত এই রসটি খেলে তাদের শরীরে অন্য় কোনও সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে কিনা!
৭. দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়:
প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকার কারণে নিয়মিত আখের রস খেলে হাড় শক্তপোক্ত তো হয়ই, সেই সঙ্গে দাঁতের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে ক্যাভিটি এবং ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও দূর হয়।
৮. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়:
আখের রসে হাইড্রক্সি অ্যাসিড নামে একটি উপাদান থাকে। এই উপাদানটি ত্বকের অন্দরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি দূর করে। ফলে স্কিনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বক উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
৯. কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়:
হাই কোলেস্টেরলের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে আজ থেকেই আখের রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে থাকা বেশ কিছু উপাদান খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সাহায্য করে।