Just In
কলা পাতায় খাবার খাওয়া উচিত কি?
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কলা পাতায় খাবার পরিবশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে একাধিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পয়েছে।
এখন সেভাবে দেখা না গেলেও একটা সময় ছিল যখন পুজো পার্বণে কলা পাতাতেই খাবার পরিবেশন করা হতো। এমনকি বিয়ে বাড়ির মশলাদার খাবার এবং ফুলকো লুচিও পরিবেশিত হত কলা পাতাকে সঙ্গী করে। কিন্তু এইভাবে কলা পাতায় খাবার খাওয়া কি আদৌ উচিত?
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কলা পাতায় খাবার পরিবশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে একাধিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পয়েছে। কারণ কলা পাতায় খাবার খাওয়ার সময় এই প্রকৃতিক উপাদানটির শরীর থেকে নানা উপকারি উপাদান আমাদের দেহের অন্দরে প্রবেশ করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভিতর থেকে শরীর এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত, কলা পাতায় পলিফেনল নামে এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, সেই সঙ্গে থাকে লিগনিন, হেমিসেলুলোস, প্রোটিন এবং অ্যালোয়েনটাইন নামক বেশ কিছু উপকারি উপাদান, যা রোগ মুক্ত শরীর পাওয়ার স্বপ্ন পূরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, কলা পাতা আরও নানাভাবে শরীরের উপকারে লাগে। যেমন...
১. ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে:
কলা পাতায় উপস্থিত পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের অন্দরে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়, সেই সঙ্গে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সার রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার ইমিউনিটি বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই কোনও রোগ ধারে কাছে আসতে পারে না।
২. গলা ব্যথা কমায়:
ঠান্ডা-গরমের কারণে গলায় কি ব্যথা হয়েছে? তাহলে আজ থেকেই কলা পাতায় খাওয়া শুরু করুন। আর যদি এমনটা করা সম্ভব না হয়, তাহলে পরিমাণ মতো কলা পাতা ফুটিয়ে সেই জল পান করুন। এমনটা করল দেখবেন কষ্ট একেবারে কমে যাবে। কারণ কলা পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. জ্বরের প্রকোপ কমায়:
কলা পাতার অন্দরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যাস্ট্রিনজেন্ট আমাদের শরীরে প্রবেশ করার পর প্রদাহ কমাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে যে যে ভাইরাসের কারণে জ্বর হয়েছে তাদেরও মারতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জ্বরের জ্বালা কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে কলা পাতায় যেমন খাওয়া শুরু করতে পারেন, তেমনি কলা পাতা দিয়ে বানানো পানীয় খেলেও সমান উপকার পেতে পারেন।
৪. পেটের রোগ কমায়:
অ্যালেনটোইন এবং পলিফেনল নামক দুটি উপাদান যে কোনও ধরনের পেটের রোগ সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই দুটি উপাদান প্রচুর মাত্রায় রয়েছে কলা পাতায়। তাই তো নিয়মিত কলা পাতায় খাবার খেলে ইন্টেস্টাইনাল ব্লিডিং কমে, সেই সঙ্গে স্টমাক পেনের মতো সমস্যাও মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। তাই হে খাদ্যরসিক বাঙালি পেটের রোগ থেকে যদি মুক্তি পেতে চান, তাহলে আজ থেকেই কলা পাতায় খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।
৫. ক্ষত সারায়:
না, কলা পাতা খেলে ক্ষত সারে না। বরং ক্ষতস্থানে কলা পাতা বেঁটে লাগালে যন্ত্রণা তো কমেই। সেই সঙ্গে রক্তপাতও বন্ধ হয়ে যায়। প্রসঙ্গত, টোচের জায়গায় ২-৩ দিন কলা পাতা বেঁধে রাখলে ক্ষত একেবারে শুকিয়ে যায়।
৬. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে:
আজও কেরালার ট্র্যাডিশনাল স্পা সেন্টারে কলা পাতার পেস্ট মুখে লাগানোর রেওয়াজ রয়েছে। আসলে এমনটা করলে কলা পাতার অন্দরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের অন্দরে যাওয়ার সুযোগ পায়, ফলে স্কিনের ভিতরে জমে থাকা টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যায়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল এবং প্রাণচ্ছ্বল হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, কলা পাতায় খাবার খেলেও একই উপকার পাওয়া যায়। কারণ সেক্ষেত্রেও খাবারের সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ পায়। ফলে সমান উপকার মেলে।
৭. ওজন কমায়:
শুনতে অবাক লাগলেও একথা একেবারে ঠিক যে ওজন কমাতে বাস্তবিকই কলা পাতা দারুন কাজে আসে। এক্ষেত্রে প্রমাণ মাপের একটি কলা পাতা নিয়ে গরম জলে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পাতাটা শরীরের সেই অংশে রাখতে হবে, যেখানকার চর্বি গলানোর ইচ্ছা রয়েছে। কলা পাতাটা ১-২ ঘন্টা রাখার পর সরিয়ে ফেলতে হবে। তারপর এক কাপ কলা পাতা দিয়ে বানানা চা খেলেই কেল্লাফতে! এমনটা যদি নিয়মিত করতে পারেন, তাহেল ওজন কমতে দেখবেন একেবারেই সময় লাগবে না।