For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts

দারচিনির দাদাগিরি!

দারচিনির শরীরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মধ্যে রয়েছে পলিফেনল, ফেনলিক অ্যাসিড, ফ্ল্যাভোনয়েডস ইত্যাদি, যা বহু ধরণের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

By Swaity Das
|

দারুচিনি বা দারচিনি, একটা সময় এই অতি অপরিচিত উপাদানটি শুধু বিরিয়ানি, মাংস আর হাতে গোনা কিছু খাবারেই ব্যবহার করা হত। যদিও এখন অনেক বাঙালি মেনুতেও ঢুকে পড়েছে এই প্রকৃতিক উপাদানটি।

ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় প্রায় চার হাজার বছর ধরে দারচিনি যেমন নানা পদে ব্যবহার হয়ে আসছে, তেমনি নানা রোগের চিকিৎসাতেও কাজে লাগছে। তাই তো দরচিনি যতই 'দুরদ্বীপবাসিনী বিদেশিনী' হোক, কালের ছোঁয়ায় সে এখন আমাদের রান্নাঘরে সব সময় হাজির।

একসময় সুদুর মিশরে শুধু দেখা পাওয়া যেত এই উপাদানটির। যদিও প্রচুর দামের জন্য তা সীমাবদ্ধ ছিল কেবল মাত্র উচ্চবিত্তের নাগালে। এমনকি রাজ সিংহাসনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে রাজপরিবারকে উপহার হিসাবেও দেওয়া হত দারচিনি। শুধু কী তাই! বাইবেলের মতো প্রাচীন ধর্মগ্রন্থেও যে কোনওরকম শারীরিক সমস্যার প্রতিষেধক হিসাবে উল্লেখ রয়েছে দারচিনির। বর্তমানে দারচিনির প্রভাব সম্পর্কে আরও জানতে গবেষণা হয়ে চলেছে।

দারচিনি গোটা আকারে তো বটেই, গুঁড়ো হিসাবেও বহুল পরিচিত। এছাড়াও দারচিনির গুণনিঃসৃত তেলও নানা কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, এখনও অবধি সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ২৫০ রকমের দারচিনি চাষ করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে সবথেকে বেশি পরিচিত মাত্র দুরকমের দারচিনি। যাদের নাম হল, সেইলন সিনামন এবং কাসিয়া সিনামন। এর মধ্যে সেইনলই সবথেকে বেশি সুগন্ধ এবং গুণের অধিকারী। এই বিশেষ ধরণের দারচিনিটি পাওয়া যায় একমাত্র শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডে। সেইনল দারচিনির দামও অনেকটাই বেশি। তবে দোকান-বাজারে যে দারচিনিটি পাওয়া যায়, সেগুলি মূলত কাসিয়া বর্গীয়। এগুলি চীনে চাষ করা হয়। তবে এটিও গুণ এবং সুগন্ধে সমৃদ্ধ।

সেইনল এবং কাসিয়া দারচিনির মধ্যে পার্থক্য কি?

সেইনল এবং কাসিয়া দারচিনির মধ্যে পার্থক্য কি?

সেইনল এবং কাসিয়া দুই ধরণের দারচিনিই প্রায় সমবর্গীয় গাছ থেকে উৎপাদন করা হয়। এদের দুজনেরই কিছু শারীরিক দিক থেকে উপকারি গুণ আছে। যদিও গবেষকদের মতে কাসিয়া দারচিনি প্রতিদিন যে কোনও মাধ্যমে সেবন করলে তা লিভারের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে শুরু করে, যা সেইনল দারচিনির গুণাবলী থেকে একদমই আলাদা। কারণ কাসিয়া দারচিনির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কৌমারিন নামক উপাদান থাকে, যার আধিক্য আমাদের শরীরের ক্ষতি করে। অন্যদিকে কৌমারিন নামক উপাদান সেইনল দারচিনির মধ্যে খুবই কম পরিমাণে থাকে। তাবে, পরিমিত পরিমাণে কাসিয়া দারচিনি খেলে কোনও ক্ষতিই হয় না। অন্যদিকে, স্বাদের দিক থেকেও এই দুই ধরণের দারচিনির মধ্যে প্রচুর পার্থক্য রয়েছে। যেমন ধরুন, সাইলন দারচিনি খেতে অপেক্ষাকৃত অনেকটাই হালকা এবং টক জাতীয়। আপরদিকে কাসিয়া দারচিনির মধ্যে ঝাঁঝালো এবং মশলা জাতীয় গন্ধ বেশি থাকে। আপনারা যদি সেইনল দারচিনি খেতে চান, তবে সেরকম দোকান খুঁজে আসল জিনিস কিনতে হবে। এছাড়াও সেইনল দারচিনি গুঁড়ো বা তরল আকারেও কিনতে পারেন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন, ঠকে যাবেন না যেন! তবে যে কোনও রকমের দারচিনি কেনার এক বছরের মধ্যে খেয়ে ফেলার চেষ্টা করবেন। না হলে কিন্তু তেমন উপকার পাবেন না।

দারচিনির বিশেষ কিছু গুণাবলী:

দারচিনির বিশেষ কিছু গুণাবলী:

গবেষকদের মতে পৃথিবীতে যত রকমের উপকারি ভেষজ আছে, তার মধ্যে সবথেকে উপকারি হল দারচিনি। কারণ এর মধ্যে মজুত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সেই সঙ্গে দারচিনি গাছের ছালের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উপকারি উপাদান, যেমন- সিনামাডিহাইড, সিনামিক অ্যাসিড এবং সিনামেট। এগুলি নানাভাবে শরীরের উপকার করে থাকে।

দারচিনির কি কি গুণ রয়েছে?

দারচিনির কি কি গুণ রয়েছে?

এক টেবিল চামচ দারচিনি গুঁড়োতে ১৯ ক্যালরি, ৪ গ্রাম ফাইবার, দিনের চাহিদার ৬৮% ম্যাঙ্গানিজ, ৮% ক্যালসিয়াম,

৪% আইরন, ৩% ভিটামিন কে রয়েছে। এছাড়াও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি রক্তচাপ সঠিক রাখতে সাহায্য করে, হজমশক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, হৃদরোগ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়, এমনকি নার্ভের অসুখের চিকিৎসাতেও দারুণ কাজ দেয়। এখানেই শেষ নয়, দারচিনির আরও ১৩টি গুণাবলী রয়েছে। যেমন...

১. প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে:

১. প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে:

গবেষকেরা এখনও অবধি দারচিনির মধ্যে ৪১ রকমের ঔষধি গুণ খুঁজে পেয়েছেন। এছাড়াও এটি প্রমাণিত যে দারচিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, দারচিনির শরীরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মধ্যে রয়েছে পলিফেনল, ফেনলিক অ্যাসিড, ফ্ল্যাভোনয়েডস ইত্যাদি, যা বহু ধরণের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রক্ত পরিশুদ্ধ করতে এবং ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। এমনকি ব্রেনের যাবতীয় রোগ সারাতেও কাজে আসে। একানেই শেষ নয়, ক্যান্সার এবং হৃদরোগ সারাতেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দারুন কাজে আসে।

২. প্রদাহজনিত সমস্যা কমায়:

২. প্রদাহজনিত সমস্যা কমায়:

দারচিনির মধ্যে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, তা প্রদাহ জনিত সমস্যা কমাতে অত্যন্ত কাজ দেয়। আর এই কারণেই তো হৃদরোগ, ক্যান্সার, ব্রেনের সমস্যা সহ আরও বহু ধরনের রোগ প্রতিরোধ দারচিনি দারুন কাজে দেয়। গবেষকেরা দারচিনির মধ্যে সাতটিরও বেশি ফ্ল্যাবোনয়েড কমপাউন্ড চিহ্নিত করেছেন, যা ক্ষতিকারক প্রদাহকে সমূলে বিনাশ করতে পারে। সেই সঙ্গে শরীরের কোনও অংশ ফুলে যাওয়া, ব্যাথা ইত্যাদি খুব সহজেই সারিয়ে তোলে দারচিনি।

৩. হার্ট ভালো রাখে:

৩. হার্ট ভালো রাখে:

দারচিনি, কোলেস্টেরলের সমস্যা, উচ্চ ট্রাই গ্লিসারাইড লেভেল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, দারচিনিতে উপস্থিত বিশেষ কিছু কম্পাউন্ড, কোলেস্টেরল ও ট্রাই গ্লিসারাইড কমিয়ে ফেলে শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে এবং ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।

৪. ডায়াবেটিস রোধ করতে সাহায্য করে:

৪. ডায়াবেটিস রোধ করতে সাহায্য করে:

দারচিনির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ডায়াবেটিসরোধী উপাদান রয়েছে। এটি রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। একইভাবে ওজন বৃদ্ধি এবং উৎসেচকের কোনও সমস্যাতেও দারচিনি দারুণ কাজে দেয়। দারচিনি অতিরিক্ত সুগারকে রক্তে মিশে যেতে বাঁধা দেয়। ফলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বহুল পরিমাণে কমে।

৫. স্নায়ুরোগ প্রতিরোধ করে:

৫. স্নায়ুরোগ প্রতিরোধ করে:

পারকিন্সন এবং অ্যালজাইমার রোধ দারচিনির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, দারচিনির মধ্যে থাকা নিউরো প্রটেক্টিভ প্রোটিন ব্রেন এবং স্নায়ুর স্বাস্থ্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে।

৬. ক্যান্সার প্রতিরোধ কাজে আসে:

৬. ক্যান্সার প্রতিরোধ কাজে আসে:

দারচিনির মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় এটি ডিএনএ নষ্ট হতে দেয় না, এমনকি ক্যান্সার সৃষ্টিকারি টিউমারের বৃদ্ধিতেও এটি বাধা দান করে। দারচিনির মধ্যে সিনাম্যালডিহাইড নামক একটি উপাদান উপস্থিত রয়েছে, যা ক্যান্সার রোধ করতে পারে।

৭. জীবাণু ধ্বংস করে:

৭. জীবাণু ধ্বংস করে:

দারচিনি খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী ওঠে। এক্ষেত্রে দারচিনির তেল বা ক্যাপসুলও দারুণ কাজে আসে।

৮. দাঁতের যত্নে দারুণ উপকারি:

৮. দাঁতের যত্নে দারুণ উপকারি:

দারচিনির গুঁড়োতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, মুখের দুর্গন্ধ, দাঁতে ফুটো হয়ে যাওয়া, মুখের সংক্রমণ ইত্যাদি সমস্যা কমাতে ঠেকাতে দারচিনি দারুণ কাজ দেয়। দাঁতের যত্নে দারচিনির নির্যাসযুক্ত তেলও দারুন কাজে আসে।

৯. ত্বকের যত্নে দারচিনি:

৯. ত্বকের যত্নে দারচিনি:

দারচিনিতে জীবাণুনাশক উপাদান থাকায় এটি ত্বকের চুলকানি, অ্যালার্জি এবং সংক্রমণ রোধে দারুন কাজে আসে। এক্ষেত্রে দারচিনির নির্যাসযুক্ত তেল সরাসরি ত্বকে লাগালেও উপকার পাওয়া যায়। ত্বকের কোনও জায়গা ফুলে যাওয়া, ব্যাথা হওয়া, লালচে হয়ে যাওয়া কমাতেও কাজে আসে এই প্রকৃতিক উপাদানটি। প্রসঙ্গত, দারচিনি এবং মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি ত্বকের রোগ থেকে মুক্তি মেলে।

১১. অ্যালার্জির প্রকোপ কমায়:

১১. অ্যালার্জির প্রকোপ কমায়:

যে কোনও ধরনের অ্যালার্জির চিকিৎসাতেই দারচিনি দারুণ কাজে আসে। এমনকি শ্বাসকষ্টের হাত থেকেও রক্ষা করে দারচিনি। কোনও খাবার থেকে অ্যালার্জি হলেও তা রোধ করতে পারে দারচিনি।

১২. চিনির বদলে দারচিনি ব্যবহার করতে পারেন:

১২. চিনির বদলে দারচিনি ব্যবহার করতে পারেন:

স্বাদে মিষ্টি হওয়ায় এটি যে কোনও খাবার মিষ্টি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া প্রাকৃতিক গুণে সমৃদ্ধ বলে এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

Read more about: রোগ শরীর
English summary

আকারে ছোট, কিন্তু দৈহিক শক্তিতে একেবারে বাহুবলী!

Some research has found that a particular type of cinnamon, cassia cinnamon, may lower blood sugar in people with diabetes. However, other studies have not found a benefit. Studies of cinnamon for lowering cholesterol and treating yeast infections in people with HIV have been inconclusive.
Story first published: Saturday, September 9, 2017, 17:01 [IST]
X
Desktop Bottom Promotion