Just In
ভাতের ফ্যান ফেলে দেন নাকি?
সপ্তাহে তিনবার স্নানের আগে ভাতের ফ্যানে ভাল করে চুলে লাগান। দেখবেন চুল পড়া সহ একাধিক স্কাল্প সম্পর্কিত রোগের প্রকোপ কমতে শুরু করবে।
আগে তো ছিলই, তবে গত কয়েক দশকে সারা বিশ্বেই ভাতের জনপ্রিয়তা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসি হোক কী ক্রেমলিন, সুমাত্রা হোক কী সিডনি, বিশ্বের নানা প্রান্তে ভাতকে কেন্দ্র করে নানা পদ তৈরি হচ্ছে এবং নানা ভাষা, নানা জাতির মানুষ তা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণও করছেন। কিন্তু সমস্যাটা একটা জায়গাতেই। ভাত তৈরির সময় সবাই একটু ভুল করে ফেলছেন। এমনকী ভারতীয়রাও সেই তালিকায় রয়েছেন। কী সেই ভুল?
ভাত রান্নার পর ফ্যানটা দিচ্ছেন ফেলে। ফলে চালের চা গুণাগুণ তা সিংহভাগই সেই জলের সঙ্গে হাইড্রেনে গিয়ে জায়গা পাচ্ছে। ফলে ভাতের সঙ্গে যে পরিমাণ পুষ্টি আমাদের শরীরে প্রবেশ করা উচিত, তা করছে না। ফলে ভাত খেয়ে শুধু ওজনই বাড়ছে, আর কিছু সুফল মিলছে না।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীর এবং ত্বককে চাঙ্গা রাখতে ভাতের ফ্যানের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এমনকি একাধিক রোগের উপশমেরও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এই বিষয়ের উল্লেখ একাধিক প্রাচীন গ্রন্থেও পাওয়া যায়। সেখানেও ভাতের ফ্যানকে কাজে লাগিয়ে শরীরকে কীভাবে রোগমুক্ত রাখা যায়, সে নিয়ে অনেক কিছু লেখা রয়েছে। তাই তো আজ এই প্রবন্ধে আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রাচীন শাস্ত্রকে মিলিয়ে ভাতের ফ্যানের এমন কিছু উপকারিতা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হবে, যা পড়তে পড়তে আপনি অবাক হবেনই। তবে তার আগে কয়েক মিনিটে ভাতের ফ্যান কীভাবে বানাবেন, তা একবার দেখে নেওয়া যাক।
ভাতের ফ্যান তৈরির উপায়:
এক্ষেত্রে প্রয়োজন পরবে হাফ কাপ চাল এবং ৪ কাপ জলের। তারপর একটা বড় সসপ্যান নিয়ে তাতে ৪ কাপ জল নিয়ে ফোটাতে শুরু করুন। যখন দেখবেন জলটা ভাল রকম ফুটে গেছে, তখন পরিমাণ মতো চাল দিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে আঁচটা বন্ধ করে একটা গ্লাসে ফ্যানটা সংগ্রহ করে নিন। পুরোটা গ্লাসে ঢালার পর গ্লাসটা ফ্রিজে রেকে দিন। ফ্যানটা একটু ঠান্ডা হলে প্রয়োজন মতো ব্যবহার শুরু করুন।
এত দূর পড়ার পর নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে ভাতের ফ্যান ব্যবহারের বিষয়ে এত জোর দেওয়া হচ্ছে কেন, তাই তো? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ভাতের ফ্যানে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ, ভিটামিন ই সহ আরও বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান আমাদের শরীরে গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে আরও নানা কাজে লাগে। যেমন...
১. চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
সপ্তাহে তিনবার স্নানের আগে ভাতের ফ্যানে ভাল করে চুলে লাগান। কিছু সময় অপেক্ষা করার পর গরম জল দিয়ে চুলটা ধুয়ে নিন। এমনটা করলে চুলের গোড়ায় পুষ্টির অভাব দূর হবে। ফলে চুল পড়া সহ একাধিক স্কাল্প সম্পর্কিত রোগের প্রকোপ কমতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে চুলের ঔজ্জ্বলতাও বাড়বে।
২. ত্বককে সুন্দর করে:
ফ্যানকে প্রাকৃতিক টোনারও বলা যেতে পারে। বেশ কিছু কেস স্টাডি করার সময় গবেষকরা লক্ষ করেছেন প্রতিদিন মুখে ভাতের ফ্যান লাগিয়ে মাসাজ করলে ত্বকের ছিদ্র ছোট হয়, সেই সঙ্গে স্কিনের উপরিঅংশে জমে থাকা মৃত কোষের আবরণ সরে যায়। ফলে স্বাভাবিকবাবেই ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, রাতে শুতে য়াওয়ার আগে একটা তুলোর সাহায্যে ভাতের ফ্যান সারা মুখে লাগিয়ে ভাল করে মাসাজ করে সারা রাত রেখে দিন। সকালে উঠে মুখটা ধুয়ে নিন। এমনটা রোজ করলেই দেখবেন ত্বক নিয়ে আর কোনও চিন্তা থাকবে না।
৩. ব্রণর প্রকোপ কমায়:
প্রতিদিন দুবার করে ভাতের ফ্যান ভাল করে মুখে লাগালে ব্রণ কমতে শুরু করে। কারণ এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা হ্রাস করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রণ কমে যায়।
৪. ডায়ারিয়ার চিকিৎসায় কাজে লাগে:
জলের মতে পায়খানা হয়েই চলেছে? সেই সঙ্গে পেটে এমন ব্যথা যে আত্মারাম খাঁচা হওয়ার জোগার! তাহলে এখন থেকেই ভাতের ফ্যান খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। আসলে পেট খারাপের সময় এক গ্লাস ভাতের ফ্যানে অল্প নুন দিয়ে খেলে শরীরে উপকারি খনিজের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে রোগের প্রকোপ কমতে শুরু করে।
৫. এনার্জির ঘাটতি দূর করে:
শরীরচর্চার আগে এক গ্লাস ফ্যান খেলে শরীরে ৮টি উপকারি অ্যামাইনো অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা এক্সারসাইজের সময় পেশির গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ফ্যানে উপস্থিত কার্বোহাড্রেট এনার্জির ঘাটতি দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. কনস্টিপেশন দূর করে:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ২ গ্লাস করে ভাতের ফ্যান খাওয়ার অভ্যাস করলে বাওয়েল মুভমেন্টে উন্নতি ঘটে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোষ্ঠকাটিন্যের উপশম ঘটতে শুরু করে।