Just In
প্রতিদিন মাছ খেলে যে রোগ ভাগে একথা ঠিক! কিন্তু এই মাছগুলি খেলে নিশ্চিত মৃত্যু!
প্রতিদিন মাছ খাওয়া শুরু করলে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো।
ওমেগা-ত্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে ঠাসা হওয়ার কারণে প্রতিদিন মাছ খাওয়া শুরু করলে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। শুধু তাই নয়, মেলে আরও অনেক উপকার, যে সম্পর্কে এই প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে এমন কিছু মাছ রয়েছে যা বেজায় সুস্বাদু, কিন্তু শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়। যেমন ধরুন...
১. তেলাপিয়া:
সরষের তেলে মাখো মাখো তেলাপিয়া কষা খেতে তো দারুন লাগে। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত একটি স্টাডিতে দেখা গেছে এই মাছটি শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়। কারণ এতে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বেজায় কম থাকে, বরং ওমেগা-সিক্স এত বেশি মাত্রায় থাকে যে এর প্রভাবে শরীরের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাই তো যারা আর্থ্রাইটিস, অ্যাস্থেমা এবং হার্টের অসুখে ভুগছেন, তাদের ভুলেও এই মাছটি খাওয়া উচিত নয়। প্রসঙ্গত, ফার্মে যে সব তেলাপিয়া মাছ চাষ করে বাজারে ছাড়া হয়, সেগুলি তো শরীরের পক্ষে আরও ক্ষতিকারক।
২. সলোমন:
বাজারের চাহিদা মেটাতে আজকাল একাধিক ফার্মে সলোমন মাছ চাষ করা হচ্ছে। তবে ভয়ের বিষয় হল সেই সব মাছগুলিকে চটজলদি বড় করতে কাজে লাগানো হচ্ছে নানা সব অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে। ফলে এমন মাছের শরীরে বাড়চে বিষের মাত্রা। তাই তো এমন মাছ বেশি মাত্রায় খাওয়া শরু করলে শরীরের অন্দরে টক্সিক উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। যার প্রভাবে একাধিক অঙ্গের ক্ষতি তো হয়ই, সেই সঙ্গে নানাবিধ জটিল রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই সাবধান!
৩. মাগুর মাছ:
বেজায় সুস্বাদু এই মাছটির শরীরে এত বেশি মাত্রায় ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যে তা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র হার্টের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে। তাই তো বলি বন্ধু যাদের পরিবারে হার্টের রোগ রয়েছে, তারা যদি হার্ট অ্যাটাকের কারণে হঠাৎ করে মরতে না চান, তাহলে মাগুর মাছ খাওয়ার মতো ভুল কাজটি করবেন না যেন!
৪. কাঁকড়া:
ঘটি-বাঙাল উভয়েরই পাতে ঝড় তোলা এই সামদ্রিক প্রাণীটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি শরীরের অন্দরে ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এই জলজ প্রাণীটির শরীরে উপস্থিত সোডিয়াম শরীরে প্রবেশ করার পর ব্লাড প্রেসারকে এত মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় যে হঠাৎ করে শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, বিশেষত যারা উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগ ভুগছেন তাদের তো আরও বেশি মাত্রায় শারীরিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই রসনা তৃপ্তি করতে মাঝে মধ্যে কাঁকড়া খাওয়া চলতেই পারে। কিন্তু মাসে ২ বারের বেশি যেন না হয়।
উপরে আলোচিত মাছগুলি বাদে বাকি প্রায় সব মাছই কিন্তু বেজায় স্বাস্থ্যকর। তাই তো রোজের ডায়েটে মাছকে জায়গা করে দিলে একাধিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন...
১. ওজন হ্রাস পায়:
একেবারেই ঠিক শুনেছেন বন্ধু! বেশ কিছু গবেষণা অনুসারে মাছে উপস্থিত ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। ফলে শরীরের ইতি-উতি জমে থাকা মেদে ঝরে যেতে সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু, দূর্গা পুজোর আগে যদি অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফলতে চান, তাহলে প্রতিদিন মাছ খেতে ভুলবেন না যেন!
২. ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে থাকে:
আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে প্রতিদিন মাছ খাওয়া শুরু করলে শরীরের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। ফলে এই মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
৩. আর্থ্রাইটিসের মতো রোগ দূরে পালায়:
শুনতে আজব লাগলেও বাস্তবিকই আর্থ্রাইটিসের মতো রোগকে দূরে রাখতে মাছের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে মাছের শরীরে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান, মানব দেহে প্রবেশ করা মাত্র এমন খেল দেখায় যে জয়েন্টে প্রদাহের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস মতো রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
৪. স্ট্রেস এবং ডিপ্রেশনের প্রকোপ কমে:
বর্তমান সময়ে নানা কারণে মানসিক অবসাদে আক্রান্তের সংখ্যাটা যেন ক্রমাগত বাড়ছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই কম বয়সি। এমন পরিস্থিতিতে মাছ খাওয়া প্রয়োজন আরও বেড়েছে। কারণ স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদ কমাতে মাছের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এক্ষেত্রেও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫.ইনসমনিয়ার মতো সমস্যার প্রকোপ কমে:
দিনের পর দিন কি রাত জেগে কাটাতে হয়? তাহলে বন্ধু রোজের ডায়েটে মাছের অন্তর্ভুক্তি মাস্ট! হঠাৎ করে এমন উপদেশ দেওয়া হচ্ছে কেন, তাই ভাবছেন নিশ্চয়? তাহলে জানিয়ে রাখি বন্ধু একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত মাছ খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মিটতে থাকে, যার প্রভাবে অনিদ্রার সমস্যা দূর হতে সময় লাগে না।
৬. ভিটামিন ডি এর ঘাটতি মেটে:
হাড়ের গঠনে এই ভিটামিনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো শরীরে যাতে কানওভাবই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে সামদ্রিক মাছেরা। কারণ এদের শরীরে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে মজুত থাকে ভিটামিন ডি, যা হাড়কে শক্তপোক্ত করার পাশাপাশি নানাবিধ হাড়ের রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৭. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে:
এজেন্সি ফর হেলথ কেয়ার রিসার্চের গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে মাছের শরীরে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো যারা সারা দিন কম্পিউটার বা ডিজিটাল স্ক্রিনের সামনে বসে কাজ করেন, তাদের রোজের ডায়েটে মাছকে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
৮. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে:
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এমনটা দাবি করা হয়েছে যে যারা নিয়মিত মাছ খেয়ে থাকেন, তাদের হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। কেন এমনটা হয় জানেন? আসলে মাছের শরীরে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্য়াটি অ্যাসিড রক্তে উপস্থিত ফ্য়াটের মাত্রাকে কমাতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
৯. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
মাছের শরীরে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের দেহের অন্দরে যাওয়া মাত্র ত্বক এবং চুলের গোড়ায় পুষ্টির যোগান এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে তার প্রভাবে স্কিন টোনের যেমন উন্নতি ঘটতে শুরু করে, সেই সঙ্গে চুলের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ওমাগ থ্রি ফ্য়াটি অ্যাসিড সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের রোগের চিকিৎসাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যারা এমন রোগ ভুগছেন, তারা রোজের ডায়েট থেকে মাছকে বাদ দেওয়ার কতা কখনও ভাববেন না যেন!
১০.ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে মাত্র ১-২ দিন মাছ খেলেই আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে থাকা নিউরনদের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন বুদ্ধির বিকাশ ঘটে, তেমনি স্মৃতিশক্তিরও উন্নতি ঘটে। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে অনুষ্টিত রেডিওলজিকাল সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার বার্ষিক সভায় এই বিষয একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। তাতে উল্লেখ রয়েছে যারা নিয়মিত মাছ খেতে থাকেন তাদের ব্রেণের একটি বিশেষ অংশের ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তির দিক থেকে তারা অনেকটাই পিছনে ফেলে দেয় মাছ না খাওয়া মানুষদের।