হালকা ধোঁয়া উঠছে। সেই ধোঁয়ার চাদর উড়িয়ে রাজার মতো শুয়ে আছে কয়েকটি ফুলকোপি, আর ফাঁক থেকে উুঁকি মারছে কয়েকটি ভেটকি মাছের ঠুকরো। উফফ...! শতাব্দি প্রাচীন এই বাঙালি পদটি বাস্তবিকই স্বাদে একশোয় একশো, তাই না?
একেবারেই! কিন্তু একবার ভাবুন তো,ফুলকোপি ছাড়া এই রেসেপিটি কি এতটা হিট হতো? মনে তো হয় না। কারণ এই সবজিটি যেভাবে রান্নার স্বাদ বাড়ায়, তা বাস্তবিকই অন্য কারও পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাই তো লুচির সঙ্গে কুঁচো আলির তরকারি হোক, কী মাছের ঝোল, সবেতেই ফুলকোপির অবাধ বিচরণ। তবে প্রশ্নটা অন্য জয়গায়! বাঁধাকোপি খেতে মন্দ না হলেও এই সবজিটি কি আদৌ স্বাস্থ্যকর?
অসময়ের ফুলকোপি শরীরের ক্ষতি করে, এমনটা অনেকেই বিশ্বাস করেন ঠিকই। কিন্তু এই ধরণার মধ্যে কোনও সত্যতা নেই। কারণ ক্রসিফেরাস পরিবারের সদস্য এই সবজিটির শরীর পুষ্টিকর উপাদানে ঠাসা। সেই সঙ্গে এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা নানাভাবে শরীরের উপকারের লেগে থাকে। তাই বাঁধাকোপি যে একেবারেই হাঁদা নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এখন প্রশ্ন হল, চিকিৎসকেরা যে সপ্তাহে কম করে ৩-৪ বার বাঁধাকোপি খেতে বলছেন, এমনটা করলে কী কী উপকার মিলতে পারে?
১. ক্যান্সারের আশঙ্কা কমে:
২০১৪ সালে প্রকাশিত এক ডেটা অনুসারে, যে হারে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বাড়ছে, তাতে আগামী ২০ বছরের মধ্যে আমাদের দেশে নতুন করে ক্যান্সার রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ ছাড়াবে, এমনটাই ধরণা চিকিৎসক মহলের। এমন পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকতে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের খেয়াল রাখতে ফুলকোপিকে সঙ্গে রাখাটা মাস্ট! কারণ এই সবজিটির শরীরে রয়েছে সালফরাফেন নামে একটি উপাদান, যা ক্যান্সার সেলকে মারতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, ম্যালিগনেন্ট টিউমারকে ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। এখানেই শেষ নয়, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ফুলকোপিতে সালফরাফেন ছাড়াও কিউকারমিন নামে আরেকটি উপাদানের খোঁজ পাওয়া গেছে। এই উপাদানটি প্রস্টেট ক্যান্সার রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. হার্টের শক্তি বাড়ায়:
ফুলকোপিতে উপস্থিত সালফরমেন, রক্ত চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে হার্ট খারাপ হয়ে যাওয়ার পিছনে যে যে কারণগুলি বিশেষভাবে দায়ি থাকে, রক্তচাপ তার মধ্যে অন্যতম। তাই তো নিয়মিত ফুলকোপি খেলে হার্টকে নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকে না।
৩. প্রদাহ কমে:
নানা কারণে আমাদের বিভিন্ন অঙ্গে প্রদাহ বা ইনফ্লেমশন দেখা দেয়। এই সময় যথাযত চিকিৎসা করে যদি প্রদাহ কমানো না যায়, তাহলে সেই অঙ্গের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। তাই তো ঠিক সময়ে ইনফ্লেমেশন কমানোর দিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এই কাজটি করবেন কিভাবে? কিছুই না, ফুলকোপি দিয়ে বানানো নানা পদ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। আসলে ফুলকোপির শরীরে রয়েছে একাধিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪. ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি দূর হয়:
শরীরকে সচল রাখতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় ভিটামিন এবং খনিজের প্রয়োজন পরে। আর এইসব পুষ্টিকর উপাদানের যোগান আসে নানা খাবার থেকে। যার মধ্যে ফুলকোপি অন্যতম। এই সবজিটির অন্দরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, প্রোটিন, থিয়ামিন, রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার, ভিয়ামিন বি৬ সহ আরও অনেক খনিজ, যা শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. ব্রেন পাওয়ারের উন্নতি ঘটে:
কোলিন নামে একটি উপাদান রক্তে যত মিশবে, তত মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়তে থাকবে। সেই সঙ্গে বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগেরও উন্নতি ঘটবে। কিন্তু প্রশ্নটা হল কোলিনের যোগান কে দেবে? কে আবার ফুলকোপি! এই সবজিটির শরীরে প্রচুর মাত্রায় কোলিনের খোঁজ মেনে, যা ব্রেন পাওয়ার বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।
৬. হজমে সহায়ক:
ফুলকোপিতে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কনস্টপেশনের মতো রোগের প্রকোপও কমে। তাই ফুলকোপি খেলে উইন্ড পাস বেড়ে যায়, এই ধারণা কতটা সঠিক, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
সাবস্ক্রাইব করুন বোল্ডস্কাই বাংলা | Subscribe to Bengali Boldsky.
Related Articles
দীর্ঘদিন সুস্থভাবে যদি বাঁচতে চান তাহলে রোজ লবঙ্গ চা পান করতে ভুলবেন না যেন!
জানেন কি মিল্ক পাউডার মুখে মাখলে কি হতে পারে?
হলুদ দাঁতকে ঝকঝকে সাদা করার ইচ্ছা আছে নাকি? তাহলে কাজে লাগাতে ভুলবেন না এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলিকে!
বয়স ৩০ পেরিয়েছে নাকি? তাহলে সুস্থ থাকতে রোজের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে এই খাবারগুলিকে!
নিয়মিত মুখে এবং হাতে পায়ে ঘি লাগিয়ে মাসাজ করলে কী কী উপকার মেলে জানা আছে?
চিকিৎসকেরা প্রতিদিন ব্রাহ্মী শাক খেতে কেন বলছেন জানেন?
টানা ৪ ঘন্টা বসে কাজ করেন নাকি? তাহলে খুব শীঘ্র মরতে চলেছেন আপনি!
নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে কত উপকার পাওয়া যায় জানা আছে?
চটজলদি ওজন কমাতে চান? তাহলে প্রতিদিন খাওয়া শুরু করুন এই খাবারগুলি!
সাদা চুলকে নিমেষে কালো করতে কাজে লাগাতে ভুলবেন না এই প্রকৃতিক উপাদনগুলিকে!
ওয়ার্ল্ড লিভার ডে: এই খাবার এবং পানীয়গুলি খেলে দেখবেন কোনও দিন লিভার খারাপ হবে না!
হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের কারণে মরতে না চাইলে প্রতিদিন সামদ্রিক মাছ খেতে ভুলবেন না যেন!