Just In
তুলসি পাতা চিবোলে কি হতে পারা জানা আছে?
হাজার হাজার বছরে ধরে হাজারো রোগ সারাতে তুলসি পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে।
হাজার হাজার বছরে ধরে হাজারো রোগ সারাতে তুলসি পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটির শরীরে উপস্থিত বেশ কিছু শক্তিশালী উপাদান নানাবিধ রোগ সারাতে দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে, যার উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও। কিন্তু একথা জানা আছে কি তুলসি পাতা চিবোলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে শরীরের?
এই বিষয়ে হওয়া বেশি কিছু সম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে তুলসি পাতা চেবানোর সময় তা থেকে প্রচুর মাত্রায় আয়রন এবং মার্কিউরি স্যালাইভা সঙ্গে মিশতে শুরু করে। ফলে দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি হয়। সেই সঙ্গে শরীরের উপরও কু-প্রাভাব পরে। তাই তো তুলতি পাতা না চিবিয়ে জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশষজ্ঞরা। আর যদি জলের সঙ্গে খেতে ইচ্ছা না করে, তাহলে সরাসরি পাতাটা গিলেও ফেলতে পারেন। আর যদি এমনটাও করতে ইচ্ছা না করে, তাহলে তুলতি পাতা দিয়ে বানানো চা খেতে পারেন। এমনটা করলেও দারুন উপকার মেলে।
নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে প্রতিদিন তুলসি পাতা খাওয়া শুরু করলে কী কী উপকার মিলতে পারে জানেন?
১. রক্ত পরিশুদ্ধ হয়:
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২-৩ টি তুলসি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান এবং টক্সিন শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর ভিতর থেকে চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
২. ব্রণর প্রকোপ কমে:
তুলসি পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুদের সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলে। ফলে ব্রণর প্রকোপ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে নানাবিধ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, ব্রণর চিকিৎসায় তুলসি পাতা খেতে পারেন অথবা সরাসরি মুখে পেস্ট বানিয়ে লাগাতেও পারেন। দুই ক্ষেত্রেই সমান উপকার পাওয়া যায়।
৩. ডায়াবেটিস দূরে থাকে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত তুলসি পাতা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাও বাড়ে। ফলে শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। প্রসঙ্গত, মেটাবলিক ড্য়ামেজের হাত থেকে লিভার এবং কিডনিকে বাঁচাতেও তুলতি পাতা দারুনভাবে সাহায্য করে।
৪. ক্যান্সার দূরে থাকে:
তুলসি পাতায় উপস্থিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট শরীরের অন্দরে ক্যান্সার সেল যাতে কোনও ভাবেই জন্ম নিতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে ক্যান্সার রোগ ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগই পায় না। প্রসঙ্গত, গবেষণায় দেখা গেছে তুলসি পাতা লাং, লিভার, ওরাল এবং স্কিন ক্যান্সারের প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে ফাইটোনিউট্রেয়েন্টের পাশাপাশি তুলসি পাতার অন্দরে থাকা একাধিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. স্ট্রেস কমায়:
তুলসি পাতা খাওয়া মাত্র কর্টিজল হরমোনের ক্ষরণ কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্ট্রেস লেভেলও কমতে শুরু করে। কারণ কর্টিজল হরমোনের সঙ্গে স্ট্রেসের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। প্রসঙ্গত, ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমাতেও তুলসি পাতা দারুনভাবে সাহায্য করে। তাই তো এবার থেকে যখনই মনে হবে মানসিক চাপ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখনই তুলসি পাতা খাওয়া শুরু করবেন। দেখবেন উপকার মিলবে।
৬. সর্দি-জ্বরের প্রকোপ কমায়:
তুলসি পাতা হল প্রকৃতির অ্যান্টিবায়োটিক। তাই তো জ্বর এবং সর্দি-কাশি সারাতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে তুলসি পাতা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র যে যে ভাইরাসের কারণে জ্বর হয়েছে, সেই জীবাণুগুলিকে মারতে শুরু করে। ফলে শরীর ধীরে ধীরে চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
৭. মাথা যন্ত্রণা কমায়:
সিডেটিভ এবং ডিসইনফেকটেন্ট প্রপাটিজ থাকার কারণে তুলসি পাতা যে কোনও ধরনের মাথা যন্ত্রণা কমাতে দারুনভাবে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি প্রায়শই সাইনাস বা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে কষ্ট কমাতে তুলসি পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন।
৮. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে:
একাধিক পুষ্টিগুণে ভরপুর তুলসি পাতা, দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ছানি এবং গ্লকোমার মতো চোখের রোগকে দূরে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সেই সঙ্গে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন আটকাতেও সাহায্য করে।
কিভাবে তুলসি পাতা খাওয়া উচিত?
চিবনো যখন যাবে না, তখন তো অন্য রাস্তা বার করতেই হবে। কি তাই তো? একেবারেই! কিন্তু অন্য কোনও রাস্তা আছে কি? আছে তো! বিশেষজ্ঞদের মতে সরাসরি চিবিয়ে না খেয়ে বরং তুলসি পাতা দিয়ে বানানো চা খাওয়া যেতে পারে। অথবা অল্প করে মধুর সঙ্গে মিশিয়েও তুলসি পাতা গ্রহণ করতে পারেন। এমন পদ্ধতিতে খেলে শরীরের কোনও ক্ষতি তো হবেই না, বরং একাধিক উপকার হবে।