Just In
ফেলুদার কথা শুনবেন কি শুনবেন না?
শীর্ষাসন বা হেড স্ট্যান্ডকে যোগ গুরুরা "কুলিং পসচার" নামে ডেকে থাকেন। কেন এমন নাম দেওয়া হয়েছে জানেন?
সেই কবে থেকে ফেলুদা বলে আসছেন। কিন্তু আপনাদের দেখছি সেদিকে খেয়ালই নেই। উল্টে নিজের শরীর এবং মস্তিষ্কের যা নয় তাই ভাবে ক্ষতি করে চলেছেন। আরে মশাই ফেলুদা তো আপনার ভালর জন্যই এই পথ দেখিয়েছিলেন, তাই না!
নিশ্চয় মনে করতে পারছেন না তো শ্রী প্রদোষচন্দ্র মিত্র কী কথা বলেছেন? মনে করুন সোনার কেল্লার সেই সিনটার কথা। তোপসে ঘরে বসে টিনটিন পড়ছে, তখনই ট্রিংংংংং...করে বেলটা বাজল। দরজা খুলতেই দাঁড়িয়ে কোলেজ স্ট্রিটের বইয়ের দোকানের মালিক। তার ছেলের বিষয়ে ফেলুদার সঙ্গে কথা বলতে এসছেন। ঠিক তখনই তোপসের চোখ গেল ঘড়ির দিকে। কারণ ফেলুদার শরীরচর্চা শেষ হতে আরে কিছুটা সময় যে বাকি। মনে পরছে সিনটা। এবার মনে করুন তো ফেলুদা তখন কী করছিলেন? পরছে মনে? বাঙালির বিখ্যাত গোয়েন্দা তখন ব্যস্ত শীর্ষাসনে। এই আসনটি প্রতিদিন করে থাকেন ফেলুদা। আর তাঁকে দেখে অনেক কুঁড়ে বাঙালিও এই আসনটি করতে শুরু করেছেন। কিন্তু সে দলে আপনি তো পরেন না, তাই তো! কারণ নানা অজুহাত। হাতে সময় নেই। করে কী হবে। এই সব নানা প্রশ্ন যখন আপনি তুলতে ব্যস্ত তখন একটা খবর আপনাদের জানিয়ে রাখি, ২১ রজনী সেন রোডের সেই বিখ্যাত বাসিন্দাটির মগজাস্ত্রের জোর বৃদ্ধির পিছনে কিন্তু এই শীর্ষাসনই দায়ি। তাই পড়াশুনো হোক, কী কর্মক্ষত্রে, বুদ্ধির ধার থাকলে সুফলতা পেতে যে তেমন কষ্ট করতে হয় না, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না!
ভাববেন না যে শীর্ষাসনের সুফল কেবল বুদ্ধি বাড়িয়েই থেমে যায়। একেবারেই না! প্রতিদিন যদি শীর্ষাসন করা যায়, তাহলে আরেও বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায়, যেমন...
১. স্ট্রেস কমায়:
শীর্ষাসন বা হেড স্ট্যান্ডকে যোগ গুরুরা "কুলিং পসচার" নামে ডেকে থাকেন। কেন এমন নাম দেওয়া হয়েছে জানেন? কারণ আসনটি করার সময় অ্যাংজাইটি, স্ট্রেস, ভয় এবং দুশ্চিন্তা দূর হয়। সেই সঙ্গে মনও হলাকা হয়। ফলে কর্মক্ষমতা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়। খেয়াল করে দেখবেন যখনই আমরা দুশ্চিন্তা অথবা মন খারাপের মধ্যে দিয়ে যাই, তখন কিছুই যেন ভাল লাগে না। যার প্রভাব কাজের উপরও পরে। তাই তো স্ট্রেসকে মাথায় উঠতে দেওয়া চলবে না।
২. মনোযোগ বৃদ্ধি পায়:
এই আসনটি করার সময় মস্তিষ্কে ব্লাড ফ্লো মারাত্মক বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রেন পাওয়া বৃদ্ধি পায়। আর ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পেলে সেই সঙ্গে মনোযোগ, বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তিও বাড়তে থাকে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রতিদিন ১০ মিনিট করে এই আসন সপ্তাহে ছয় দিন করেন থাকেন, তাদের বুদ্ধির ধার সাধারণ মানুষদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি হয়। আর একথা নিশ্চয় জানেন যে, "কনসেনট্রেশন অ্যান্ড মেন্টাল টাফনেস আর দা মার্জিন অব ভিকট্রি।" তাই ফেলুদার মতো যদি সফল হতে চান, তাহলে প্রতিদিন শীর্ষাসন করা শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন।
৩. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে:
এই আসনটি করার সময় চোখে অক্সিজেন এবং পুষ্টিকর খনিজ সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন সহ একাধিক চোখের রোগ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
৪. চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:
শীর্ষাসন করার সময় মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে চুলের গোড়াতে অতিরিক্ত মাত্রায় রক্ত এবং পুষ্টিকর উপাদান পৌঁছে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই চুলে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। সেই সঙ্গে চুলের সৌন্দর্যতাও বাড়ে।
৫. কাঁধ এবং হাতের শক্তি বাড়ে:
খেয়াল করে দেখবেন এই আসনটি করার সময় কাঁধ এবং হাতের উপর মারাত্মক চাপ পরে। ফলে ধীরে ধীরে শরীরের এই অংশের শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুধু তাই নয়, সারা শরীরের কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং পেশির গঠনে উন্নতি ঘটে। তাই তো যোগ গুরুরা বলে থাকেন এই আসনটি করলে বাস্তবিকই মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশের উন্নতি ঘটে।
৬. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন হেড স্ট্যান্ড করার সময় আমাদের শরীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির একেবারে বিপরীতে চলে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পেটের উপর, বিশেষত পাকস্থলীর উপর চাপ পরে। সেই সঙ্গে শরীরের এই অংশে রক্ত সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্যাস-অম্বল সহ একাধিক পেটের রোগের উপশম ঘটে।
৭. পা এবং গোড়ালিকে রোগমুক্ত করে:
গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত শীর্ষাসন করলে পায়ে এবং গোড়ালিতে জল জমা সহ একাধির রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে, যা দীর্ঘক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থাকার কারণে হতে পারে। আজকের যুগে আমরা সবাই প্রায় দীর্ঘ সময় অফিসে বসে কাজ করে থাকে। ফলে শরীরের নিচের অংশে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে নানান জটিল রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এমনটা যাতে হয়, সেদিকে খেয়ল রাখে এই আসনটি। তাই দীর্ঘ দিন সুস্থভাবে বাঁচতে চান তো নিয়মিত হেড স্ট্যান্ড করার অভ্যাস করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।
image source (Feluda): mid-day