গতকাল আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন নতুন এক মাপকাঠি প্রকাশ করেছে, যাতে ১৪০/৯০-কে নয়, ১৩০/৮০ এম এম এইচ জিকে উচ্চ রক্তচাপের মাপকাঠি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আর তারপর থেকেই আলোড়ন পরে গেছে সারা বিশ্ব জুড়ে!
আসলে নতুন মাপকাঠি ধরে যদি চিকিৎসকেরা রোগীর রক্তচাপ পরীক্ষা করতে শুরু করেন, তাহলে আমেরিকা এবং ভারতের মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশই উচ্চ রক্তচাপের শিকার হিসেবে মেনে নিতে হবে এই দুই দেশকে। কারণ বেশ কিছু কেস স্টাডি অনুসারে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা, মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ সহ একাধিক কারণে এই দুই দেশের যুবসমাজের একটা সিংহভাগেরই রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার থেকে অনেকটাই বেশি। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত তা নজরে আসেনি কারণ সারা বিশ্বে উচ্চ রক্তচাপের মাপকাঠি ছিল ১৪০/৯০ এম এম এইচ জি। তাই তো এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই রোগের সার্বিক চিত্রটাই বদলে গেছে।
উচ্চ রক্তচাপ নির্ধারণের মাপকাটি কিছুটা কমে যাওয়ার কারণে একদিকে যে ভালই হয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কারণ তাদের মতে এবার থেকে অনেক আগে থেকেই হাই ব্লাড প্রেসারের চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে। ফলে উচ্চ রক্তচাপের কারণে শরীরের মারাত্মক কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমবে। প্রসঙ্গত, এই বিষয়টা যখন স্পষ্টই হয়ে গেছে যে নানা কারণে ভারতীয় জনসংখ্যার একটা বড় অংশই এমন একটা মারণ রোগের শিকার, তখন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনও অনেকাংশে বৃদ্ধি পয়েছে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে বেশ কিছু খাবার রয়েছে, যা নিয়মিত খেলে যে কোনও পরিস্থিতিতেই ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। তাই দীর্ঘদিন যদি সুস্থ থাকতে চান এবং রক্তচাপকে লাগাম পরিয়ে রাখতে চান, তাহলে এই প্রবন্ধে আলোচিত খাবারগুলি খাওয়া শুরু করতেই হবে।
এক্ষেত্রে যে যে খাবারগুলি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি হার্টের স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেগুলি হল...
১. কলা:
রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখার যদি ইচ্ছা থাকে, তাহলে ব্রেকফাস্টে কখনও কলা খেতে ভুলবেন না। কারণ এই ফলটির শরীরের থাকা পটাশিয়াম শরীরে প্রবেশ করার পর সোডিয়ামের মাত্রা কমাতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও কলার ভূমিকাকে মেনে নিয়েছে চিকিৎসক মহল।
২. পালং শাক:
পালক পনির না ঠাকুমার হাতে রান্না করা পালং শাক, কোন পদটা খেতে বেশি মুখরোচক? আপনার উত্তর যাই হোক না কেন, তাতে কিছু এসে যায় না। মধ্যা কথা হল হার্টকে চাঙ্গা রাখতে এবং রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে প্রায় প্রতিদিনই পালং শাক খেতে হবে। কারণ এই শাকটির অন্দরে ঠাসা পটাশিয়াম, ফলেট, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার শুধু রক্তচাপ কমায় না, সেই সঙ্গে শরীরের একাধিক অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. ওটস:
ফাইবার সমৃদ্ধ এই খাবারটি নিয়মিত খেলে সিস্টোলিক প্রেসারের পাশাপাশি ডায়াস্টোলিক প্রেসারও কমতে শুরু করে। সেই কারণেই তো ব্লাড প্রেসার রোগীদের নিয়মিত ওটস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
৪. অ্যাভোকাডো:
উচ্চ রক্তচাপের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে নিয়মিত এই ফলটি খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ অ্যাভোকাডোর মধ্যে থাকা ওলেয়িক অ্যাসিড শুধুমাত্র ব্লাড প্রেসার কমায় না, সেই সঙ্গে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হর্টকে সুস্থ রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. জাম:
এই ফলটির শরীরে থাকা ফ্লেবোনয়েড নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই উপাদানটি শরীর থেকে টক্সিক উপাদানদের বের করে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
৬. বিট:
রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই সবজির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে বিটে উপস্থিত নাইট্রিক অ্যাসিড ব্লাড ভেসেলের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সারা শরীরজুড়ে রক্তের প্রবাহ এতটাই বেড়ে যায় যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগই পায় না।
সাবস্ক্রাইব করুন বোল্ডস্কাই বাংলা | Subscribe to Bengali Boldsky.