Just In
চিকিৎসকেরা বেশি করে পালং শাক খেতে কেন বলেন জানা আছে?
পালং শাকের শরীরে রয়েছে নানান উপকারি উপদান, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, পেশিকে শক্তিশালী করে তুলতে এবং হার্ট অ্যাটাক আটকাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সত্যি কবে যে আমরা খরচ বাঁচিয়ে সুস্থ থাকতে শিকবো জানা নেই। প্রকৃতি ওষুধপত্র ঢেলে দিয়েছে। তবু সেদিকে কারও খেয়াল নেই। সবাই নকল ওষুধ খেয়ে চাঙ্গা হতে চাইছে। আরে মশাই অ্যালোপ্যাথি মেডিসিনে রোগ সারে ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে শরীরে ছোট-খাট ক্ষতিও তো কম হয় না। কারণ সব ওষুধেরই কম বেশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু দেখুন প্রকৃতির ডিসপেনসারিতে থাকা একটা ওষুধেও কোনও খারাপ উপাদান নেই। উল্টে রোগও সারে দ্রুত। তাই তো বলি, ছাড়ুন এবার অ্যালোপ্যাথি, পরিবর্তে নজর ফেরান ঘরোয়া পদ্ধতির দিকে। তাতে দেখবেন শরীরও চাঙ্গা থাকবে, পকেটও খালি হবে না।
নিশ্চয় ভাবছেন হঠাৎ করে ঘরোয়া ঔষধি নিয়ে এত কথা বলছি কেন, তাই তো? উত্তর পাবেন। তবে তার আগে বলুন তো আপনারা পালং শাক খান কিনা? আসলে কি জানেন এই কদিন আগে বিশ্বব্যাপী একটি গবেষণা করা হয়েছিল। তাতে প্রমাণ মিলেছে পালং শাকের শরীরে রয়েছে নানান উপকারি উপদান, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, পেশিকে শক্তিশালী করে তুলতে এবং হার্ট অ্যাটাক আটকাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, আরও একাধিক রোগের চিকিৎসাতেও পালং শাক নিজের খেল দেখিয়ে থাকে। যেমন ধরুন...
১. ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত পালং শাক খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে যার প্রভাবে ত্বকের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে স্কিনের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
২. হাড়কে শক্তপোক্ত করে:
পালং শাকের অন্দরে উপস্থিত ভিটামিন কে হাড়ের অন্দরে ক্যালসিয়ামের সঞ্চয় বাড়িয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর যেমনটা সবারই জানা আছে যে ক্যালসিয়ামের মাত্রা যখন বাড়তে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই হাড় শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বয়সকালে আর্থ্রাইটিসের মতো নানাবিধ হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে:
আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে পলং শাকে রয়েছে বিপুল পরিমাণে পটাশিয়াম। এই খনিজটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র সোডিয়াম বা নুনের ভারসাম্য ফিরে আসে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, পালং শাকে থাকা ফলেটও ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:
অ্যামাইনো অ্যাসিড হল এমন একটি উপাদান, যা মেটাবলিজম রেট বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রচুর মাত্রায় রয়েছে পালং শাকে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এই শাকটি নিয়মিত খেলে কী হতে পারে!
৫. চোখের ক্ষমতা বাড়ায়:
পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন, লুটেইন এবং জ্যান্থিন, যা রেটিনার ক্ষমতা বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, এই শাকটি ভিটামিন এ-এর ঘাটতি পূরণ তো করেই, সেই সঙ্গে আই আলসার এবং ড্রাই আইয়ের মতো সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
৬. দেহের অন্দরে প্রদাহ কমায়:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে পাংল শাকে প্রায় ১২ ধরনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে, যা নানাভাবে দেহের অন্দরে সৃষ্টি হওয়া ইনফ্লেমেশন কমায়। ফলে শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে ক্যান্সারের মতো রোগও দূরে থাকে। এবার বুঝেছেন তো নিয়মিত পালং শাক খাওয়া কতটা জরুরি।
৭. ব্রেন পাওয়ার বাড়ায়:
পটাশিয়াম, ফলেট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই শাকটি যদি প্রতিদিন খাওয়া যায় তাহলে মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশ এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে স্মৃতিশক্তি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে পটাশিয়ামের দৌলতে মনোযোগও বৃদ্ধি পায়।
৮. স্ট্রোকের আশঙ্কা কমায়:
লুটেইন নামে একটি বিশেষ উপাদানের সন্ধান পাওয়া যায় পালং শাকের শরীরে। এই উপাদানটি ব্লাড ভেসেলের অন্দরে কোলেস্টেরল জমার হার কমিয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকবাবেই স্ট্রোক, অ্যাথেরোস্কেলোসিস এবং হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা কমে।
৯. পেশির শক্তি বাড়ায়:
জার্নাল অব কার্ডিওভাসকুলার নার্সিং- এ প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে পালং শাকের অন্দরে লুকিয়ে থাকা নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্টের পেশির কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য পেশির শক্তি বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে একদিকে যেমন হাইপারলিপিডেমিয়া, হার্ট ফেলিওর এবং করোনারি হার্ট ডিজিজের আশঙ্কা কমে, তেমনি শরীরও সার্বিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওটে।