Just In
Don't Miss
সুস্থভাবে বাঁচতে চাইলে মাসে ১-২ দিন উপোস করতে ভুলবেন না যেন ভায়া...!
চিকিৎসকেরা নানা দিক বিচার করে মেনে নিয়েছেন যে মাসে ১-২ বার উপোস করলে ভগবান কতটা সন্তুষ্ট হন, জানা নেই, তবে শরীর নামক মন্দির যে বেজায় শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
উপোস, এই তিনটি শব্দের সঙ্গে আসমুদ্র-হিমাচলের সম্পর্ক আজকের নয়। কিন্তু জানেন কি হিন্দু ধর্মের হাত ধরে বড় হয়ে ওঠা এই অভ্যাস আজ বিজ্ঞানের সঙ্গ পয়েছে। চিকিৎসকেরা নানা দিক বিচার করে মেনে নিয়েছেন যে মাসে ১-২ বার উপোস করলে ভগবান কতটা সন্তুষ্ট হন, জানা নেই, তবে শরীর নামক মন্দির যে বেজায় শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ উপোস করলে হার্টের স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক এবং ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে। শুধু তাই নয়, একদিন না খেয়ে থাকলে শরীরের অন্দরে উপস্থিত ক্ষতিকর সব টক্সিন উপাদানেরাও বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে নানাবিধ অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। আর এমনটা যখন হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই যে আয়ু বৃদ্ধি পায় সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই! তাই একথা মেনে নিতেই হবে যে মাঝে মধ্যে উপোস করা শরীরের পক্ষে খারাপ নয়। বরং উল্টোটা। কারণ এমনটা করলে শরীর আরও বেশি মাত্রায় চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
প্রসঙ্গত, হিন্দু ধর্মের উপর লেখা বেশ কিছু বই অনুসারে কেউ যখন উপোস করেন, তখন তার শরীরের অন্দরে অনবরত যাতায়াত করতে থাকা বেশ কিছু শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে শরীর এবং মন বেজায় চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ফলে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। অন্যদিকে আধুনিক বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা যারা করে থাকেন তাদের গবেষণা অনুসারেও উপোস করা বেজায় স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
তবে একদিনের বেশি উপোস করা কিন্তু উচিত নয়। কারণ খাবার না খেলে শরীরের অন্দরে নানা পরিবর্তন হতে শুরু করে। যেমন ধরুন রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে শুরু করে। ফলে দেহে আগে থেকে মজুত শর্করাকে কাজে লাগিয়ে সে সময় শরীর তার প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। প্রসঙ্গত, যে মুহূর্তে শরীরে মজুত শর্করা বা গ্লাইকোজেন ভাঙতে শুরু করে, অমনি দেহে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বিও ভাঙতে থাকে। কিন্তু এমনটা কয়েকদিন চলতে থাকলে শরীর "কিটোসিস মোডে" চলে যায়। অর্থাৎ শরীর ফ্যাট ভেঙে জ্বালানি তৈরির কাজে লেগে যায়। ফলে ওজন কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বেরনো, ক্লান্তি সহ আরও সব লক্ষণ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এই সময়েও যদি ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া শুরু না করা হয়, তাহলে কিডনি এবং লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হতেও সময় লাগে না। তাই একদিনের বেশি না খেয়ে থাকার ভুল কাজটি করতে যাবেন না যেন!
বেশি দিন উপোস করাটা যে উচিত নয়, তা না হয় জানা গেলে। কিন্তু মাসে একদিন উপোস করলে কী কী উপকার পাওয়া যেতে পারে? এক্ষেত্রে যে যে সুফলগুলি মেলে, সেগুলি হল...
১. দেহের অন্দরে প্রদাহ কমে:
নানাবিধ ব্যাকটেরিয়ার মার থেকে বাঁচাতে প্রতিদিনই শরীর নিজের অন্দরে ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহের জন্ম দেয়। কিন্তু কোনও করণে যদি ইনফ্লেমেশনের মাত্রা বেড়ে যেতে শুরু করে, তাহলে কিন্তু বিপদ! কারণ সেক্ষেত্রে নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন বাড়ে, তেমনি ক্যান্সার এবং আর্থ্রাইটিসের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই দেহের অন্দরে কোনও ভাবেই যাতে প্রদাহের মাত্রা বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে উপোস। কীভাবে? বেশ কিছু স্টাডি অনুসারে মাঝে-মধ্যে উপোস করলে শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমতে সময় লাগে না। ফলে কোনও ধরনের বিপদ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে।
২. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়:
বুদ্ধির ধার বাড়ুক, সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাক স্মৃতিশক্তিও, এমনটা যদি চান তাহলে কখনও-সখনও উপোস করতে ভুলবেন না যেন! কারণ এমনটা করলে মস্তিষ্কের অন্দরে ইনফ্লেমেশনের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে ব্রেন ফাংশানের এত মাত্রায় উন্নতি ঘটে যে কোনও ধরনের ব্রেন ডিজিজ যেমন ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না, তেমনি আরও নানাবিধ উপকার পাওয়া মেলে।
৩. বাল্ড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:
উপোস করলে শরীরে নুনের পরিমাণ কমতে শুরু করে। আর যেমনটা আপনাদের সবারই জানা আছে যে রক্তে নুনের পরিমাণ যত কমে, তত ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসার সম্ভাবনা যায় বেড়ে। তাই তো যাদের পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস রয়েছে, তাদের মাঝে মধ্যেই উপোস করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
৪.ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে:
একদিন শুধু জল ছাড়া আর কিছু না খেয়ে থাকলে সেল ডিভিশন ধীরে হতে শুরু করে। ফলে ক্যান্সার সেলের বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। তবে এক্ষেত্রে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
৫. শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ে:
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে মাঝে মধ্যে উপোস করলে শরীরের অন্দরে বেশ কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে। বিশেষত হরমোনের ক্ষরণে কিছু বদল আসে, যার প্রভাবে ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়া যেমন ত্বরান্বিত হয়, তেমনি সার্বিকভাবে শরীরে ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
৬. হজম ক্ষমতা বাড়ে:
উপোস করলে শরীররে অন্দরে লেপটিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যে কারণে হজম ক্ষমতার মারাত্মক উন্নতি ঘটে। ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা কমে যেতে সময় লাগে না। এবার বুঝেছেন তো খাদ্যরসিক বাঙালি মাঝে মাঝে উপোস করলে কত উপকারই না পাওয়া যায়।
৭. ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে মাসে ১-২ দিন উপোস করা শুরু করলে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না।
৮. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:
মাসে একবার উপোস করলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে মাসে এক দিন না খেয়ে থাকলে প্রায় হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫৮ শতাংশ কমে যায়। শুধু তাই নয় একদিন উপোশ করলে আমাদের শরীরে হিউমেন গ্রোথ হরমোনের মাত্র বৃদ্ধি পায়। ফলে পেশির গঠন ভাল হয় এবং ওজন কমতে শুরু করে।