Just In
লেবুর জলে কি লুকিয়ে আছে জানেন?
লেবুর রস শরীর থেকে ভিটামিন সি-এর অভাব দূর করতেও সাহায্য করে।
আচ্ছা স্কুল, কলেজ বা অফিস থেকে এসে কারা লেবু জল নিয়মিত পান করেন? আমি কিন্তু খাই! যেদিন ব্যস্ততার থেকে ছুটি পাই, সেদিন তো গ্লাসের সংখ্যা বেড়ে যায়। কারণ সেদিন যে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়াটা বেশ জমে ওঠে। তাই সবার শেষে লেবু জল থাকা মাস্ট! তবে অনেকেই আছেন, যারা লেবু জলের স্বাদ এবং গুণ, দুটো থেকেই নিজেদের বঞ্চিত করে রেখেছেন। আপনি যদি তাঁদের মধ্যে থেকে থাকেন, তবে বোল্ডস্কাইয়ের এই প্রতিবেদনটি লেখা হচ্ছে শুধুমাত্র আপনার কথা ভেবেই।
ইতিমধ্যেই লেবু জলের উপকারিতা নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। তবে আপনাকে গবেষণার জটিল ব্যাপার বুঝতে হবে না। আপনি শুধু প্রতিদিন একটু করে লেবু জল পান করা শুরু করুন। তফাৎ আপনি কয়েকদিন পর থেকে বুঝতে পারবেন। কারণ লেবুর জলে লুকিয়ে আছে অনেক শক্তাশালী উপাদান, যা শরীর গঠনে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। যেমন ধরুন...
১. শরীরে জলের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে:
ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড-এর মতে, আমাদের প্রতিদিন প্রায় ৪ লিটার মতো জল পান করা উচিত। যার মধ্যে অন্যান্য খাদ্য থেকে নির্গত জলের পরিমাণও রয়েছে। সমস্যাটা হল অনেকেই আছেন, যাদের জলে পানে অরুচি রয়েছে। ফলে এদের দেহে জলের ঘাটিত দেখা দেওয়ার কারণে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সুস্থ থাকার কোনও উপায় আছে কি? অবশ্যই আছে! এরা জলের মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। এতে জলের স্বাদও বাড়বে। আবার শরীরে জলের ঘাটতিও দেখা দেবে না।
২. ভিটামিন সি-এর উৎস:
লেবুর মধ্যে সাইট্রিক অ্যাসিড আছে, একই সঙ্গে এটি শরীর থেকে ভিটামিন সি-এর অভাব দূর করতেও সাহায্য করে। ফলে কোষেদের নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসে। এখানেই শেষ নয়, ভিটামিন সি হৃদরোগ সংক্রান্ত নানাবিধ সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও দূর করে। অন্যদিকে রক্তচাপজনিত কমাতেও ভিটামিন সি-এর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। প্রসঙ্গত, ‘স্ট্রোক' নামক একটি গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে সাধারণত যাদের শারীরিক ওজন বেশির দিকে থাকে, তাঁদের শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাব দেখা দেয়। এক্ষেত্রে লেবু যেমন শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে, তেমনিই ভিটামিন সি-এর ঘাটতিও কমায়। অন্যদিকে, ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার'- এর পক্ষ থেকে জানা যায়, সাইট্রাস জাতীয় ফলের মধ্যে লেবু সর্বশ্রেষ্ঠ না হলেও শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাব কমাতে লেবু দারুন কাজে আসে। কারণ ১/৪ কাপ লেবুর রস আমাদের শরীরে ২৩.৬ গ্রাম ভিটামিন সি তৈরি করতে পারে, যা প্রতিদিনের প্রয়োজন অনুযায়ী ৩০% ভিটামিন সি-এর ঘাটতি কমায়।
৩. ত্বককে সুস্থ রাখে:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে ভাঁজ পড়তে শুরু করে। আমেরিকান সোসাইটি ফর ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন'- এর বক্তব্য অনুযায়ী, ত্বকের এই ধরণের সমস্যা দূর করতে পারে একমাত্র লেবু। যদিও, ত্বকের যত্নে লেবুর উপকারিতা নিয়ে কম বেশি মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। তবে একটা কথা ঠিক যে, ত্বক যদি তার স্বাভাবিক আদ্রতা হারিয়ে ফেলে, তাহলে ত্বকে ভাঁজ পড়া খুবই স্বাভাবিক। ইউ ডব্লিউ হেলথ-এর পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে যে, দিনে ৮ গ্লাস জল পান অবশ্যই জরুরি, যা ত্বককে আদ্র রাখার পাশাপাশি স্কিনের অন্দরে জমে থাকা নোংরা বের করে দিতে সাহায্য করে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পরেছেন লেবুর রস খাওয়া জরুরি কেন।
৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে:
জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে দেখানো হয়েছে যে, লেবুর মধ্যে যে পলিফেনল নামে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, তা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন, তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মধু মিশ্রিত লেবু জল খেতে পারেন। দেখবেন উপকার মিলবে।
৫. হজম শক্তি বাড়ায়:
আমাদের চারপাশে এমন বহু মানুষ আছেন, যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে কষ্ট পান। তাঁদের জন্য লেবু জল খুবই উপকারি। গরম বা ঠাণ্ডা জলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে পরিপাক তন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করা শুরু করে। ফলে বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে বেড়িয়ে যায়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, লেবুর রস এবং স্বাদ আমাদের শরীরের ভিতরে ‘অগ্নি'-কে উদ্দীপিত করে। যার ফলে আমাদের খাদ্য হজম হয় এবং কোনওরকম সমস্যার সৃষ্টি হতে দেয় না।
৬. মুখের দুর্গন্ধ দূর করে:
আমাদের হাতে দুর্গন্ধ জাতীয় কোনও কিছু লাগলেই হাতে লেবু মেখে থাকি। ঠিক এরকমভাবেই আমরা যখন পেঁয়াজ বা রসুন খাই, আমাদের শ্বাস প্রক্রিয়ায় তা দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। এই সময় লেবু জল খেলে এই ধরণের গন্ধ শ্বাস প্রক্রিয়া থেকে দূর হয়। এমনকি সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে লেবু জল পান করলে আমাদের মুখে জীবাণু সৃষ্টি হতে পারে না। যে কারণেও দুর্গন্ধ দূর হয়।
৭. কিডনির স্টোন দূর করে:
অনেকেই আছেন, যারা কিডনি স্টোনের সমস্যায় ভুগছেন। ইউ ডব্লিউ হেলথ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড এই ধরণের স্টোনের চিকিৎসায় দারুন কাজে আসে। শুধু তাই নয়, লেবু জল আমাদের শরীরে জলের ঘাটতি কমিয়ে এমন ধরনোর রোগকে সমূলে সারাতে দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে। প্রসঙ্গত, ১/২ কাপ লেবুর রস আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক উপায়ে সাইট্রিক অ্যাসিডের যোগান দেয়, যা ওষুধের মাধ্যমেও সম্ভব হয় না।
কিভাবে বানাবেন লেবু মিশ্রিত জল?
লেবুর জল বানানোর সময় সব সময় তাজা লেবু ব্যবহার করা উচিত। লেবুর জল বানাতে অর্ধেক লেবু,৮ আউন্স গরম বা ঠাণ্ডা জলে মেশাতে হবে। সেই সঙ্গে ইচ্ছা হলে লেবু জলের মধ্যে মনের মতো আরও কিছু উপাদান মেশানো যেতে পারে। যেমন- পুদিনা পাতা, মধু, কয়েক কুঁচি আদা, দারচিনি প্রভৃতি। ইচ্ছা হলে কমলা লেবু অথবা শসাও মেশাতে পারেন। একটি জগের মধ্যে লেবুর রস মিশ্রিত জল তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। ইচ্ছামতো যখন খুশি খেলেই হল।
লেবু জলের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
লেবুর রসে যে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে, তা দাঁতের পক্ষে সব সময় ভাল নয়। কারণ সাইট্রিক অ্যাসিড দাঁতের ক্ষয় করে। তাই লেবু জল পান করার সময় স্ট্র-এর ব্যবহার জরুরি। সেই সঙ্গে আরেকটি বিষয মাথায় রাখতে হবে, তা হল লেবু জল পান করার পর ভাল করে মুখ ধুয়ে নিন। তবে আর কোনও চিন্তা থাকবে না।