Just In
করলার কেরামতি!
বাঙালিদের নতুন করে করলা খাওয়ার কথা আর কিই বা বলা যায়? কাঁচকলা, বড়ি দিয়ে করলার ঝোল হোক বা ভাতে সেদ্ধ দিয়ে করলা, নানারকম ভাবে বাঙালিরা করলা খেয়ে থাকেন।
বাঙালিকে নতুন করে করলা খাওয়ার কথা আর কিই বা বলা যায়? কাঁচকলা, বড়ি দিয়ে করলার ঝোল হোক বা ভাতে সেদ্ধ দিয়ে করলা, নানা ভাবে বাঙালিরা করলা খেয়ে থাকেন। আর শুধু বাঙালিই কেন? ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটি মানুষই করলা খেতে ভালবাসে। তবে এই তেঁতো ফলটার কি কি গুণ আছে, তা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? তাই তো আজকে সেগুলিই আমরা বোল্ডস্কাইয়ের পাতায় পড়বো। তবে রান্না করে করলা খাওয়া নয়, বরং করলার রস কিভাবে আমাদের শরীরের কাজে আসে, সেটাই হবে আজকের আলোচ্য বিষয়।
করলার রস বানানোর আগে আমাদের জানতে হবে ঠিক কি কারণে আমাদের করলার রস খেতে হবে। কি এমন উপাদান করলাতে আছে, যা খেলে আমরা ফিট থাকবো। আসলে করলার মধ্যে আছে নানারকম পৌষ্টিক উপাদান। যেমন- আইরন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি। এছাড়াও আছে ফাইবার। আরও জানলে আশ্চর্য হতে হয় যে করলার ভেতরে আছে ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, পটাশিয়াম। যদিও, করলা প্রচণ্ড তেঁতো হওয়ায় এর রসের সঙ্গে গুঁড় বা আপেলের মতো মিষ্টি ফল মিশিয়ে নিতে পারেন। আবার শুধু আদা আর গোলমরিচ দিয়েও করলার রস খাওয়া যায়। এবার তাহলে দেখে নেওয়া যাক, করলার রস পান করলে কি কি উপকার মেলে।
১.রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক রাখে:
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বা প্রকাসিত রিপোর্ট থেকে জানা যায় পৃথিবীতে ৩৮২ মিলিয়নের থেকেও অনেক বেশি মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। তাই তো বিশ্বে জুড়ে করলার এত কদর। আসলে করলার ইনসুলিনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে, এক মাস ধরে হওয়া একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রাম করে করলার রস পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক থাকে। একই সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
২.ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়:
করলার রস প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। এর ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত বা স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই দূর হয়ে যায়। করলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত সোডিয়াম শুষে নিতে পারে। এছাড়াও করলাতে প্রচুর পরিমাণে আইরন এবং ফলিক অ্যাসিড থাকায় এটি হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৩. ত্বকের যত্নে দারুণ কাজে দেয়:
করলার মধ্যে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ এবং সি উপস্থিত থাকায়, এটি ত্বককে বলিরেখার হাত থেকে রক্ষা করে এবং ছোপ পড়তে দেয়না। এছাড়াও ব্রণ, ফুসকুড়ি, চুলকানি, ঘা ইত্যাদি সমস্যা থেকেও ত্বককে রক্ষা করে। প্রসঙ্গত, করলার মধ্যে যে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, বায়োটিন এবং জিঙ্ক থাকে, তা ত্বককে উজ্জ্বল করে। এছাড়াও, নিয়মিত করলার রস মাথায় লাগালে চুল পাকে না, চুল ওঠা বন্ধ হয়, চুলের আগা ফাটার সমস্যা কমে যায় এবং খুশকি সহ অন্যান্য নানা সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
৪. নেশা মুক্তি এবং লিভার পরিষ্কারে দারুণ কাজ দেয়:
পার্টিতে গিয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করে ফেলছেন? কিছুতেই নেশা কাটতে চাইছে না? এক্ষেত্রেও দারুণ কাজে দেবে করলার রস। অল্প অল্প করে বেশ কিছুটা করলার রস পান করলে এতে নেশার ঘোর কেটে যায়। এর এই পানীয় লিভারের থেকে মদের বিষাক্ত এবং নেশা সৃষ্টিকারী উপাদান বের করে দেয়। এছাড়াও করলার রস পেট পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে এবং লিভারের কোনও সমস্যা থাকলে তা দূর করে।
৫. ওজন কমাতে সাহায্য করে:
করলাতে ক্যালরি খুবই কম পরিমাণে থাকে। কম থাকে ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটও। এই কারণেই করলার রস খেলে ওজন খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে করলার রস শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে এবং নতুন করে ফ্যাট জমতে বাঁধা সৃষ্টি করে।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে:
করলার রস জীবাণু এবং নানারকম ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। এলার্জির সমস্যা থাকলে তাও দূর করতে পারে করলার রস। এমনকি করলার মধ্যে নানা রকমের ক্যান্সার রোধ করার ক্ষমতাও আছে। ২০১০ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে করলার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি- কার্সিনোজেন এবং অ্যান্টি- টিউমার উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে। মূলত, প্রোস্টেট, স্তন এবং সারভিকাল ক্যান্সার রোধে করলার জুড়ি মেলা ভার।
৭.চোখের জন্য উপকারি:
করলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের জন্য খুবই উপকারি। তাই তো নিয়মিত করলা খেলে চোখের নানা রকম সমস্যা দূর হয় এবং দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে। এছাড়াও, চোখের চারিদিকে যে কালো ছোপ পড়ে, তা দূর করতেও সাহায্য করে করলার রস।