Just In
নিয়মিত আঙুর খেলে কি হতে পারে জানেন?
শীতকাল আসলেই আঙুরের বাটি হাতে নিয়ে রোদ পোহানো। কি ভালো লাগে তাই না? আমরা তো আবার বেশীরভাগ সময় সবুজ আঙুরই খাই। তবে, কালো আঙুরও বেশ খেতে লাগে।
শীতকাল আসলেই আঙুরের বাটি হাতে নিয়ে রোদ পোহানো। কি ভালই না লাগে, তাই না? আমরা তো আবার বেশিরভাগ সময় সবুজ আঙুরই খাই। তবে কালো আঙুরও খেতে বেশ লাগে কিন্তু! যারা রেড ওয়াইন খেতে অভ্যস্থ, তারা জানেন যে রেড ওয়াইনের মূল উপাদান হল আঙুর। এই কারণেই তো রেড ওয়াইন এত স্বাস্থ্য গুণে ভরপুর।
প্রাচীনকালে আঙুরের চাষ শুধুমাত্র মধ্য প্রাচ্যেই করা হত। ধীরে ধীরে তা সুরা তৈরির উপাদান হিসাবে ব্যবহার হতে শুরু হওয়ায় পৃথিবীব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। প্রসঙ্গত, এখন তো সারা বছর ধরেই বাজারে আঙুর পাওয়া যায়। তবে সিজিনাল আঙুর বেশি সুস্বাদু হয়। আঙুর যে শুধুই সুস্বাদু, তা কিন্তু নয়। আঙুরের মধ্যে এমন বহু পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা ত্বক এবং স্বাস্থ্যের যত্নে দারুণ উপকারে লেগে থাকে। ঠিক এই কারণেই তো আজ বোল্ডস্কাই-এর এঅ বিশেষ প্রতিবেদনেআমাদের আঙুরের নানা উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বিভিন্ন সময়ে গবেষণার দ্বারা দেখা গেছে কেউ যদি নিয়মিত আঙুর খান, তাহলে শরীরে তা নানারকমভাবে উপকার করে। তো কি কি উপকার পাই আমরা আঙুর থেকে? আসুন পড়ে ফেলা যাক।
১। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি দূর করে:
আঙুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্যারোটেনয়েড এবং পলিফেনল। এই উপাদানগুলি এক ধরণের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, যা ক্যান্সার রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও, হার্টের যত্নে দারুণ কাজ দেয় আঙুরের অন্দরে থাকা এইসব পুষ্টিকর উপাদানগুলি। প্রসঙ্গত, পলিফেনলের মধ্যে আরও এক ধরণের পৌষ্টিক উপাদান থাকে, যা রেসভেরাট্রল নামে পরিচিত। এটি বিভিন্ন ক্ষতিকারক উপাদানকে প্রতিরোধ করে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমায় এবং রক্তের প্রবাহ ঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেই সঙ্গে রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, আঙুরের সবথেকে বেশি উপকারি উপাদান হল এর খাসা এবং এর বীজ। তাই আঙুর খাওয়ার সময় বীজ এবং খোসা সমেত খাওয়ারও চেষ্টা করবেন।
২। নানাবিধ ত্বকের সমস্যা দূর করে
আঙুরের মধ্যে যে রেসভেরাট্রল থাকে, তা ত্বকে বয়সের ছাপ পরতে দেয় না এবং ত্বকের নানা রকম সমস্যা দূর করে। ব্রণ থেকে শুরু করে দাগ, ছোপ, সবকিছুকেই ম্যাজিকের মতো প্রতিরোধ করতে পারে আঙুর। প্রসঙ্গত, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায় রেসভেরাট্রলকে যখন বেঞ্জইল পারক্সাইডের সঙ্গে মেশানো হয়, তখন তা ভীষণই কার্যকরী হয়ে ওঠে। এই মিশ্রনটি ব্রণের সমস্যা কমানোর জন্য দারুন কাজে আসে।
৩। পটাশিয়ামের ঘাটতি মেটায়
আঙুরের মশ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। হিসাব মতো ১০০ গ্রাম আঙুরের মধ্যে প্রায় ১৯১ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। এই কারণে আঙুর খেলে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং আয়োডিনের মাত্রা কমিয়ে শরীরকে নানাদিক থেকে উপকার করে। আসলে আঙুর খেলে শরীরের অতিরিক্ত সোডিয়াম নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে, বহু সমীক্ষায় এটি প্রমাণিত যে কম সোডিয়াম এবং বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। এমনটা হলে রক্তচাপ সঠিক থাকে, খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। এছাড়াও, আঙুর খেলে যেহেতু সোডিয়ামের মাত্রা অনেকটাই কমে যায়, তাই এতে পেটের মেদও খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়।
৪। চোখের জন্য উপকারি
মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে জানা যায় নিয়মিত আঙুর খেলে চোখের খুবই উপকার হয়। এতে চোখের মধ্যে প্রদাহজনিত সমস্যা সৃষ্টিকারি প্রোটিনের ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায় এবং এর বদলে উপকারি উপাদানের সৃষ্টি হয়। ফলে রেটিনার কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। মূলত চোখের যত্ন নিতে আঙুর যে শুধু একভাবেই উপকার করে, তা কিন্তু নয়। চোখের যে কোনও সমস্যা দূর করতেই আঙুর দারুণভাবে সাহায্য করে। তাই আঙুর শুধু ত্বক বা শরীরের জন্য নয়, চোখের জন্যেও দারুণ উপকারি।
৫। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
বহু গবেষণার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, আঙুরের মধ্যে যে রেসভেরাট্রল উপস্থিত থাকে, তা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে সাহায্য করে। এর ফলে যে কোনও পরিস্থিতিতে মস্তিষ্ক খুব দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে পারে। এছাড়াও মস্তিষ্কের বিভিন্ন অসুখ যেমন- অ্যালজাইমারের সমস্যায় আঙুর খুবই উপকার করে। সুইজারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, আঙুরের মধ্যে উপস্থিত রেসভেরাট্রল মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত সরবরাহে সাহায্য করে, তেমনই রক্ত জমাট বেঁধে যেতে বাঁধা দেয়। এমনকি, বিভিন্ন ফ্রি র্যাডিকাল দূর করে মস্তিষ্ককে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষাও করে।
৬। হাঁটুর যত্ন নেয়
টেক্সাস উইমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে জানা যায় যে প্রতিদিন আঙুর খেলে হাঁটুর ব্যথার থেকে মুক্তি মেলে। সবথেকে বেশি কাজ দেয় যাদের অস্টিওআর্থাইটিস হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এর কারণ, আঙুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়াও থাকে পলিফেনলস, যা হাঁটুর শক্তি, নড়াচড়া এবং স্থিতিস্থাপকতাকে বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৭। প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে
আঙুরের মধ্যে অন্যান্য পৌষ্টিক উপাদানের সঙ্গে বজায় থাকে উৎসেচকও। যার ফলে, শরীরে প্রদাহজনিত সমস্যা নিবারনে এটি দারুণ ভাবে কাজ করতে পারে। রক্তনালীকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে এবং হার্টের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি শরীরের সার্বিক উপকার করে আঙুর।