Just In
নিয়ম করে নিম পাতা খাওয়া জরুরি কেন?
নিয়মিত নিম পাতা খেলে রক্ত পরিশোধিত হয় এবং ত্বক পরিষ্কার হয়।
শীতের শেষে বসন্ত এলেই বাড়িতে বাড়িতে নিম বেগুন খাওয়ার পালা শুরু হয়। যে কোনও বাঙালি বাড়িতে এই সময় এই মেনু একেবারে ধরা বাধা। এমনও অনেকে আছেন যারা সারা বছরই নিমপাতা ভেজানো জল বা নিমপাতা খেয়ে থাকেন। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও একথার মধ্য়ে কোনও ভুল নেই যে নিমে প্রায় ১৩০-এর বেশি জৈবগুণ রয়েছে। নিম এমনই একটি গাছ যার পাতা, ফুল, ফল, কাণ্ড-বীজ সব কিছু আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিমের নিয়মিত ব্যবহারে প্রদাহ, জ্বরের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, দাঁতের সমস্যা ইত্যাদি দূর হয়। শুধু তাই নয়, নিমের মধ্যে রয়েছে জীবাণু নাশক, ক্যান্সাররোধক এবং প্রদাহ বিনাশকারী উপাদান। ফলে এমন ধরনের শারীরিক সমস্যা নিবারণও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
অনেক সময় যে বিছানায় কোনও রোগী থাকেন, সেই বিছানায় নিমের জলের ছিটে দেওয়া হয়। এছাড়াও মূল দরজার উপর নিমের ডাল ঝুলিয়ে রাখা হয়। মনে কর হয় যে এমনটা করলে বাড়ির হাওয়া বাতাস জীবাণুমুক্ত এবং শুদ্ধ হয়ে ওটে। প্রতিদিন নিমের দুটি তাজা পাতা খেলে বা নিমপাতা মিশ্রিত চা পান করলে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে ওঠে। এত উপাকারিতা পাওয়া যায় বলেই না সেই দুই হাজার বছর ধরে নিমের ব্যবহার বিভিন্ন দেশে হয়ে আসছে।
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, নিমপাতা আমাদের স্নায়ু রোগ জনিত সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও আমাদের রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ বার করে দেয়। সেই সঙ্গে চুল এবং ত্বকের যত্নেও নিমের জুড়ি মেলা ভার। এখানেই শেষ নয়, নিম পাতার আরও উপকারিতাও আছে। যেমন ধরুন...
১. ত্বকের যত্নে নিমের ম্যাজিক:
‘আয়ুর্বেদ ফর অল: এফেক্টিভ আয়ুর্বেদিক সেলফ কিওর ফর কমন অ্যান্ড ক্রনিক এইলমেন্টস' শীর্ষক পুস্তিকায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক মুরলি মনোহর নিমের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে ত্বক এবং শরীরে নিমের সদর্থক প্রভাবের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, নিয়মিত নিম পাতা খেলে রক্ত পরিশোধিত হয় এবং ত্বক পরিষ্কার হয়। এছাড়াও ত্বকের নানা রকম সমস্যাও নির্মূল হয়। অন্যদিকে নিমপাতা এবং কাঁচা হলুদ বাটা পোকামাকড়ের কামড়, চুলকানি, ঘা, কুচো কৃমির সমস্যা মেটাতে দারুণ কাজ দেয়। প্রসঙ্গত, অনেক ভাবে নিম পাতা খেতে পারেন। চিবিয়ে খেতে পারেন, নিম পাতার সঙ্গে মধু মিশিয়েও খাওয়া চলতে পারে। নিমপাতা জলে সেদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে ব্যবহার করলে অ্যাকনে সহ একাধিক ত্বকের সমস্যা কমে যেতে শুরু করে।
২. চুলের যত্নে নিম পাতা:
চুলের যত্নে নিম খুবই উপকারি। কারণ নিমের মধ্যে রয়েছে জীবাণু নাশক উপাদান, যা স্কাল্পে হওয়া যে কোনও রকম সংক্রমণ ঠেকাতে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে খুশকি, রুক্ষ চুলের সমস্যা মেটাতেও নিমপাতা ফুটিয়ে সেই জল ব্যবহার করতে পারেন। আচ্ছা বলতে পারেন চুলে কেন খুশকি হয়? ম্যালাসেজিয়া নামক এক ধরণের ছত্রাক এক্ষেত্রে দায়ি থাকে। এমন ছত্রাক জনিত সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে নিমপাতা। তাই আপনি যদি এমন ধরনের চর্মরোগে ভুগে তাকেন, তাহলে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটির সাহায্য় নিতেই পারেন।
৩. চোখের জন্য উপকারি:
দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে নিমপাতার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। প্রতিদিন যদি নিয়ম করে নিমপাতা খেতে পারেন তাহলে অল্প দিনেই চোখের দৃষ্টি ভাল হতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, চোখের যে কোনও রকমের সংক্রমণ, লালচে হয়ে যাওয়া, ক্লান্তির কারণে চোখের সমস্যা দূর করতেও নিম পাতা সেদ্ধ করা জল চোখে লাগাতে পারেন।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
নিম পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জীবাণু নাশক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় এমন উপাদান। তাই তো নিয়মিত নিম পাতা খেলে জ্বর থেকে ক্যান্সার, সমস্ত ধরনের রোগের আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
৫. হজম শক্তি বাড়ে:
নিম পাতা আমাদের হজম শক্তি বহু গুণে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই তো নিয়মিত নিম পাতা খেলে আমাদের লিভার সুস্থ থাকে। এর ফলে খুব সহজে হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সেই সঙ্গে পেটের যাবতীয় সমস্যাও দূর হয়।
৬. দাঁতের যত্নে নিমপাতা
দাঁতের যত্নে নিম পাতা খুব ভালো কাজে দেয়। আগেকার দিনে নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজা হতো। নিমপাতা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাসও অনেকেরই ছিল। নিমপাতার মধ্যে জীবাণুনাশক উপাদান থাকায় তা থুতুর মধ্যে অ্যাল্কালাইনের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে দাঁতের মধ্যে গর্ত হওয়া এবং জীবাণু সংক্রমণের মতো সমস্যাও রোধ করে। নিয়ম করে নিমপাতা খেলে দাঁত সাদা ঝকঝকে হয়। যদিও নিমপাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। যেমন, চার পাঁচ মাসের গর্ভবতীদের ভুলেও নিমপাতা খাওয়া উচিত নয়। কারণ নিমপাতা খেলে শরীরের ভিতর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য ভালো নয়।
এছাড়াও যারা সন্তান ধারণের চেষ্টা করছেন, তাঁদের নিমপাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।