Just In
ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ডে: প্রতিদিন ৭ ঘন্টা ঘুমোন তো? না হলে কিন্তু!
ডিপার্টমেন্ট অব নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ এর প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে সারা বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের দেশেও ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডিপার্টমেন্ট অব নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ এর প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে সারা বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের দেশেও ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত কম বয়সিদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ একেবারে মাত্রা ছাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে অনিয়ন্ত্রণত জীবনযাত্রা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমনোর কারণেই কম বয়সিরা আজ এই মারণ রোগের শিকার।
কিন্তু ঘুমের সঙ্গে ডায়াবেটিসের কী সম্পর্ক? একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে অফিসের চাপের কারণে অনেক কম বয়সিই যেমন রাত জেগে কাজ করে থাকেন, তেমনি এমনও অনেকে আছেন যা কেবলমাত্র ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ করতে করতে রাত একটা বাজিয়ে দেন ঘুমতে যেতে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ঠিক মতো ঘুম হয় না। ফলে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে ইমব্যালেন্স মেটাবলিজম সমস্যা। আর এমনটা হওয়া মাত্র ধীরে ধীরে ওজন বাড়তে শুরু করে। আর ওজন বাড়লে যে ডায়াবেটিস রোগও দূরে থাকে না, তা নিশ্চয় আর নতুন করে বলে দিতে হবে না। প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, সি ভি ডি অ্যান্ড স্ট্রোকের রিপোর্ট অনুসারে এখনই যদি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে আগামী দিনে পরিস্থিতি যে আরও ভয়ানক আকার নেবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ ঠিক মতো না ঘুমনোর কারণে যে কেবল ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে, এমন নয়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে দিনের পর দিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাব ঘটলে একাধিক মারণ রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধতে শুরু করে। যেমন...
১. ব্রেন পাওয়ার কমে যায়:
আমরা যখন ঘুমোই তখন আমাদের মস্তিষ্ক নিজেকে রিজুভিনেট করতে থাকে। সেই সঙ্গে সারা দিন ধরে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা এবং তথ্য ব্রেনে স্টোর করার কাজটাও এই সময় ঘটে থাকে। তাই তো ঠিক মতো ঘুম না হলে প্রথমেই স্মৃতিশক্তির উপর প্রভাব পরে। সেই সঙ্গে কগনিটিভ ফাংশন কমে যাওয়ার কারণে মনোযোগ এবং বুদ্ধি কমে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলিও ঘটে থাকে। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের কোনও কিছু শেখার ক্ষমতার সঙ্গে ঘুমের সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই তো ঠিক মতো ঘুম না হলে এই ক্ষমতাও কমে যেতে শুরু করে। তাই সাবধান!
২. হার্ট দুর্বল হয়ে যায়:
একাধিক গবেষণার পর এই বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই যে ঘুমের সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের সরাসরি যোগ রয়েছে। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা দৈনিক কম করে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আসলে এমনটা না করলে ধীরে ধীরে হার্ট দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে হার্ট ফেলিওর, ইরেগুলার হার্ট বিট সহ আরও নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
৩. মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে:
২০০৫ সালে হওয়ার বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছিল দিনের পর দিন ঠিক মতো ঘুম না হলে ধীরে ধীরে মস্তিকের অন্দরে ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটির মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই হাজারো চাপের মাঝেও মনকে যদি চাঙ্গা রাখতে চান, তাহলে ভুলেও ঘুমের সঙ্গে আপোস করবেন না যেন!
৪. ত্বকের সৌন্দর্য কমে যেতে শুরু করে:
দিনের পর দিন ঠিক মতো ঘুম না হলে কর্টিজল নামক স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যেতে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে যা, সেই সঙ্গে ত্বকের অন্দরে কোলাজেনের মাত্রা কমতে শুরু করার কারণে সৌন্দর্যও হ্রাস পায়। তাই যদি না চান যে কম বয়সেই ত্বক বুড়িয়ে যাক, তাহলে ঘুমের মাত্রা কমানোর কথা ভুলেও ভাববেন না!
৫. আয়ু কমে যায়:
প্রায় দশ হাজার ব্রিটিশ ছাত্রের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা ৫ ঘন্টা বা তার কম সময় ঘুমায়, তাদের হঠাৎ করে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষদের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আসলে যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে ঘুমের সঙ্গে হার্ট এবং ব্রেনের স্বাস্থ্যের সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই তো ঘুম ঠিক মতো না হলে শরীরেই সবথেকে দুটি ভাইটাল অঙ্গ দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করে। আর এমনটা হতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু চোখে পরার মতো কমে যায়।
৬. সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকে:
একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে মাসের পর মাস ঠিক মতো ঘুম না হলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশ এতটাই ক্লান্ত হয়ে পরে যে ঠিক মতো কাজ করে উঠতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। সেই সঙ্গে কেরিয়ারে দ্রুত উন্নতি করার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। তাই প্রফেশনাল জীবনে যদি একের পর এক শৃঙ্গ জয় করতে চান, তাহলে ঘুমের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে ভুলবেন না যেন!