Just In
Don't Miss
ওয়াল্ড সুইসাইড প্রিভেনশন ডে : এবার অ্যাপ লড়বে মানসিক অবসাদের সঙ্গে!
গতকাল থেকে জ্বলতে শুরু করল প্রদীপটা। এবার মনে হয় কিছুটা হলেও অন্ধকার কাটবে এদেশে। আর হয়তো কেউ স্বেচ্ছায় কেরে নেবে না নিজের প্রাণ। মরবে না হয়তো কোনও দুখি জীবন বারান্দা থেকে ঝাঁপ মেরে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১০ সেপ্টেম্বর দিনটিকে ওয়াল্ড সুইসাইড প্রিভেনশন ডে হিসেবে গণ্য করার পর থেকেই শুরু হয়েছিল প্রচেষ্টা, যা দিনের আলো দেখলো সেই ১০ তারিখেই, প্রায় এক বছরের চেষ্টা চালানোর পরে। মুম্বইয়ের কয়েকজন ডাক্তার এবং আই টি বিশেষজ্ঞরা হাতে হাতে মিলিয়ে তৈরি করল একটি বিশেষ অ্যাপ, যা মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকা মানুষদের পৌঁছে দেবে নিকটবর্তী হেল্প সেন্টারে। দেবে সে বিষয়ক আনেক তথ্যও, যাতে ঠিক মতো গাইডেন্স পেয়ে সেই দুখি মানুষটি আবার সুন্দর জীবনে ফিরে যেতে পারে।
প্রশ্ন করতে পারেন এমন অ্যাপের প্রয়োজন কতটা। আসলে গত কয়েক বছরে নানা কারণে সারা বিশ্বের মধ্যে আমাদের দেশ একেবারে এক নম্বরে উঠে এসেছে আত্মহত্যার সংখ্যার নিরিখে। ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে আমাদের দেশে প্রতি ঘন্টায় একজন করে ছাত্র আত্মহননের পথ বেছে নেয়। যেখানে সারা বিশ্বের ছবিটা আরও ভয়ঙ্কর। ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। অর্থাৎ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন মানুষ নিজেকে শেষ করে দেয়, যাদের বেশিরভাগেরই বয়স ২৫-৫০ এর মধ্যে। মজার বিষয় এদের সবারই পকেটে কম-বেশি থাকে স্মার্ট ফোন। তাই তো এই ধরনের অ্যাপের প্রয়োজন প্রতি মিনিটে বেড়ে চলেছে। আসলে কম বয়সিরা মারা গেলে দেশের অগ্রগতির উপরও মারাত্মক প্রভাব পরে। কলেজে পড়া যে ছেলে বা মেয়েটা আজ নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে, একবার ভাবুন তো সে যদি বড় হয়ে উঠতো, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে কতটা ভূমিকা নিতে পারতো। এই ভাবে লক্ষ ছেলে-মেয়ের হিসেবে করুন। বুঝবেন আত্মহত্যার কারণে সমাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে কতটা পিছিয়ে যাচ্ছে এদেশ।

কিভাবে কাজ করবে অ্যাপটা?
অ্যাপলিকেশনটির নাম দেওয়া হয়েছে "ইমোশনাল সার্পোট হেল্পলাইন ডাইরেক্টরি"। প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করার পর অ্যাপটি অন করলে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে থাকা সুইসাইড প্রিভেনশন সেন্টারের নাম ফুটে উঠবে স্ক্রিনে। শুধু তাই নয়, আপনার লোকেশন থেকে সবথেকে কাছে কোন সেন্টারটি রয়েছে, সে বিষয়েও জানাবে এই অ্যাপলিকেশনটি।

মৃত্যু আটকাতে কিভাবে সাহায্য করবে এই প্রযুক্তি?
একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে আত্মহত্যা করার আগে প্রতিটি মানুষই একবার শেষ চেষ্টা করেন ঘুরে দাঁড়ানোর। সেই সময়ই সে সোসাল মিডিয়ায় তার মনের কথা বলতে শুরু করে অথবা বেছে নেয় অন্য কোনও রাস্তা। এই সময় যদি কোনও বন্ধু বা কাছের কোনও মানুষ এই অ্যাপটি ব্যবহার করে মানসিক ভাবে ভেঙে পরা সেই মানুষটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান, তাহলে কিন্তু একটা প্রাণ শেষ হওয়ার হত থেকে রক্ষা পায়।

কী করে বুঝবেন কাছের কেউ নিজেকে শেষ করার কথা ভাবছে?
কালো মেঘ জমা শুরু করলে বৃষ্টি যেমন হবেই, তেমনি আত্মহত্যার করার আগে ধীরে ধীরে সেই মানুষটির মনের অবস্থাও বদলে যেতে শুরু করে। ফলে বদলাবে জীবনযাপনের ধরণও, যা দেখে বলে দেওয়া সম্ভব সেই মানুষটি মনের অবস্থা সম্পর্কে। এক্ষেত্রে যে যে লক্ষণ দেখে আত্মহত্যার প্রবণতাকে চিহ্নিত করা সম্ভব, সেগুলি হল- মানুষটি তার পছন্দের সব জিনিস দিয়ে দিতে শুরু করবে, কথায় কথায় মরে যাওয়ার কথা বলবে, পছন্দের মানুষদের সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নিজের চলে যাওয়ার কথা বারংবার জানাতে থাকবে, কিভাবে আত্মহত্যা করা যায় সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করবে, কথা বলা কমে যাবে, লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেবে, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে নেশা করা শুরু হবে প্রভৃতি। এইসব লক্ষণগুলির কোনওটা প্রকাশ পেলে একেবারে সময় নষ্ট করবেন না। জানবেন এক্ষেত্রে প্রতিটা মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কিছু কি বদলাবে?
প্রথম পদক্ষেপ যখন নেওয়া হয়ে গিয়েছে তখন পরিস্থিতি যে বদলাবে সে বিষয়ে কেনও সন্দেহ নেই। তবে তার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। চোখ-কান খোলা রেখে বুঝতে হবে আমাদের প্রিয় কেউ অজান্তেই ধ্বংসের পথে এগচ্ছে না তো! এইভাবে যেমন সচেতনতা বাড়বে, তেমনি মানসিক অবসাদে ভোগা মানুষেরা সঠিক চিকিৎসার সন্ধান পাবে। ফলে ধীরে ধীরে হলেও সংখ্যাটা যে কমবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।