Just In
ডায়াবেটিস তো কি? এই সেলিব্রিটিরাও দেখুন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েও দিব্বি আছেন!
সারা বিশ্বজুড়ে যেন মহামারির আকার ধারণ করেছে ডায়াবেটিস। ছোট থেকে বড় প্রতিটি শরীরেই যেন ঢুকে গেছে এর অভিশাপ। আধুনিকতা এবং ব্যস্ততার জালে জড়িয়ে হারিয়ে ফেলছি আমাদের সামান্য ভালো থাকার আনন্দ। তবে উপায়?
সারা বিশ্বজুড়ে যেন মহামারির আকার ধারণ করেছে ডায়াবেটিস। ছোট থেকে বড় প্রতিটি শরীরেই যেন ঢুকে গেছে এর অভিশাপ। এমন পরিস্থিতিতে বাঁচার উপায় কী? উপায় অবশ্যই আছে। ডায়াবেটিস মানেই যে থেমে যাওয়া, নিজেকে হারিয়ে ফেলা বা সবকিছু শেষ ধরে নিয়ে চিন্তার জগতে হারিয়ে যাওয়া নয়, তা কিন্তু নয়। কারণ এমনটাই প্রমাণ করেছেন বিশ্বখ্যাত বেশ কিছু ব্যক্তিত্ব। এঁদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাদের বয়স শুনলে আপনি চমকে যাবেন। তাই ডায়াবেটিসকে ভয় পেয়ে নয়, তাকে জয় করে বেঁচে থাকতে হবে।
প্রতি বছর ১৪ই নভেম্বর দিনটি ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ডে হিসাবে পালন করা হয়। ১৯৯১ সালে প্রথম এই দিনটি উদযাপন করা হয়। ইন্টারন্যাশানাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে প্রথম এই দিনটি ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ডে হিসাবে পরিচিতি পায়। আজ বোল্ডস্কাইয়ের বিশেষ প্রতিবেদনে পড়ব সেইসকল সেলিব্রিটিদের কথা, যারা ডায়াবেটিস নিয়েও বেঁচে আছেন আনন্দে, উৎফুল্লতায়।
সোনম কাপুর
অবাক হলেন? ভাবছেন এই তন্বী সুন্দরী নায়িকার নাম কি করে এলো? আসলে বয়ঃসন্ধিকালেই সোনমের ডায়াবেটিস ধরা পরে। এর মূল কারণ ছিল সেই সময় সোনম কাপুরের অত্যধিক ওজন। এরপর কেটে গেছে বেশ কিছু বছর। ডায়াবেটিসের প্রতিকূলতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি বলিউড কাঁপাচ্ছে এই নায়িকা। নিয়মিত যোগ ব্যায়াম, পাওয়ার যোগ ব্যায়াম, ওজন কমানো এবং ডায়েট মেনে সোনমের দৈহিক পরিবর্তন তো সবাই দেখতেই পারছেন। এখনও নিয়মিত চিকিৎসা এবং ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিতে হয় সোনমকে। এত কিছুর পরেও তিনি জয় করেছেন ডায়াবেটিসের নেতিবাচক প্রভাবকে।
কমল হাসান
ফিল্মি কেরিয়ার নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। একের পর এক হিট এখনও বক্সঅফিসে চলে শুধু এই একটি নামে। ইনিও কিন্তু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। মূলত টাইপ ১ ডায়াবেটিস রয়েছে কমল হাসানের। বর্তমানে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত বিষয়ে উনি নানা কাজ করে থাকেন। ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ওনাকে অ্যাম্বাসাডারও করা হয়েছে। কমল হাসান নিজের জীবনযাত্রা অনেকটাই বদলেছেন। যেমন, মদ্যপান করেন না, এমনকি দুগ্ধজাত কোনও খাদ্যও খান না। সেই সঙ্গে যোগব্যায়াম এবং নিয়ম মানা জীবনযাপন করেই এখনও বাজিমাত কর চলেছেন কমল হাসান।
বিলি জিন কিং
টেনিস জগতে একের পর এক সাফল্য। এক সময়ের কিংবদন্তি টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন আমেরিকার বিলি জিন কিং। ২০০৬ সালে ওনার ধরা পরে ডায়াবেটিস। ভয় বা আশঙ্কায় কুঁকড়ে থাকা নয়, বরং ১৫ কেজি ওজন কমিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন এই খেলোয়াড়। বর্তমানে ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োগ করেছেন।
ফাওয়াদ খান
পর্দায় তাঁকে দেখে মন দিয়েছেন অনেক নারী। সব নায়ককে পিছনে ফেলে তিনিই যেন মনের কোণে জায়গা করে নিয়েছেন। তবে সেই স্বপ্নের নায়ক ফাওয়াদ খানও ডায়াবেটিসের কবল থেকে রক্ষা পাননি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ডায়াবেটিস ধরা পরে তাঁর। এরপরের ইতিহাস রচনা করেছেন তিনি নিজেই। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ধূমপান করার ফলেই ডায়াবেটিস যেন আঁকড়ে ধরেছিল তাঁকে। সঙ্গে সঙ্গে বদলেছেন নিজের জীবনযাপন পদ্ধতি। কঠোর নিরামিষাশী এবং নিয়ম বাধা জীবনে এখন নিজেকে সবসময় সুস্থ রাখার চেষ্টা করেন এই নায়ক।
হ্যালি বেরি
জগৎ বিখ্যাত এই নায়িকার জীবনে ডায়াবেটিস থাবা বসিয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। লিভিং ডল নামক একটি অনুষ্ঠানের সেটে ১৯৮৯ সালে জ্ঞান হারান হ্যালি বেরি। টানা সাতদিন কোমাতে থাকার পর তাঁর জ্ঞান ফেরে। আসলে সাতদিন ধরে অজ্ঞান হয়ে থাকাটা ছিল ডায়াবেটিক কোমা। তখন হ্যালের বয়স মাত্র ২৩ বছর। এরপর একের পর এক ছবি এবং হিটের তালিকায় নাম ওঠে তাঁর। সে সময় একটি সাক্ষাৎকারে এই নায়িকা জানিয়েছিলেন, ডায়াবেটিস তাঁকে সত্যের মুখে দাঁড়াতে সাহস জুগিয়েছে। তিনি এর থেকে মানসিক শক্তি পেয়েছেন। ফলে হেরে যাননি। বরং হেরে যাওয়ার উলটো পথে হেঁটে আজ তিনি জয়ী। এখনও নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয় এই নায়িকাকে এবং একইসঙ্গে যোগ চর্চাও করেন।
শ্যারন স্টোন
এই বিশ্বখ্যাত আমেরিকান নায়িকা টাইপ ১ ডায়াবেটিস দ্বারা আক্রান্ত। এখনও প্রতিদিন ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিতে হয় এবং অন্যান্য ওষুধ খেতে হয়। এসব সত্ত্বেও নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রেখেছেন তিনি। যদিও ব্যস্ততার মধ্যেও নিজেকে ডায়াবেটিসের হাত থেকে মুক্তি দিতে সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সুধা চন্দ্রন
প্রতিকূলতা যেন ভাগ্যেই লেখা আছে সুধা চন্দ্রনের। মাত্র ১৬ বছর বয়সে দুর্ঘটনায় পা হারানো এবং পরবর্তীকালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যদিও থেমে থাকেননি কোনও অবস্থাতেই। পা না থাকা সত্ত্বেও নকল পা নিয়েই নাচের জগতে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এর অনেক বছর পরে তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। যদিও নিয়ম এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এখন অনেক সুস্থ আছেন সুধা।
সালমা হায়েক
গর্ভবতী থাকাকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন সালমা। আসলে তাঁর পরিবারে সকলেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ফলে বংশের দিক থেকে এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আগে থেকেই ছিল। প্রসঙ্গত, গর্ভবতী থাকাকালীন অবস্থায় রক্তচাপ বেসি থাকলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
গৌরব কাপুর
টেলিভিশনের পর্দায় এখন জনপ্রিয় সঞ্চালকদের মধ্যে একজন হলেন গৌরব কাপুর। ভি টিভিতে নিয়মিত সঞ্চালকের ভুমিকায় থাকার পর এখন আইপিএল- এর সময় আপামর জনতাকে গ্যালারির উত্তেজনায় ভরিয়ে রাখার কৃতিত্ব গৌরবেরই। ইনিও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। মূলত ব্যস্ত জীবন, চাপ এবং খাওয়ার দাওয়ার সময় না মেনেই এই রোগের থাবা যে জীবনে এসে বসেছে, তা উনি নিজেই জানিয়েছেন। বর্তমানে কঠিন ডায়েট মেনে তবেই খান। বাদ দিয়েছেন অ্যালকোহল। নিয়মিত যোগ চর্চা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ থাকার চেষ্টা করে এখন অনেকটাই ভাল আছেন গৌরব।
ওয়াসিম আক্রম
তাঁকে নিয়ে নতুন কিছু লেখার নেই। খেলা থেকে ব্যক্তিগত জীবন সবকিছুতেই তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ওয়াসিম আক্রমের ডায়াবেটিস ধরা পরে যখন তিনি মাত্র বছর তিরিশের। যদিও তাঁর পরিবারে কেউই এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত নন। তাই স্বভাবতই ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। কঠিন নিয়ম এবং চিকিৎসার মাধ্যমে নিজেকে ভাল রাখার চেষ্টা করে চলেছেন তিনি।
বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মধ্যে এই দশ জন মাত্র ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তা কিন্তু নয়। আরও অনেক অনেক উদাহরণ আছে। তাই ভেঙে পরা নয়। নিজেকে সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা এবং আনন্দে রাখাটা খুবই জরুরি।