Just In
মা তুমি শুনছো তো?
ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে ভুলেও দিনে ৪০০ এমজি-এর বেশি ক্যাফিন গ্রহণে চলবে না।
ছোট থেকে দেখে আসছি মা তুমি কখনও বিশ্রাম নাওয়া না। সকালে চোখ খোলা থেকে ছুটছো। আমাকে স্কুলের জন্য তৈরি করে বাসে তুলে দিয়ে দৌড় লাগাও বাজারে। সেখান থেকে এসে বাবার টিফিন। সঙ্গে কফি তাঁর মাস্ট! এরপর তুমি কোনও মতে নাকে-মুখে গুঁজে ছোট স্কুলে। আমার আর বাবার ব্যাগে টিফিনের প্যাকটা থাকলেও, প্রায়দিনই তোমার ব্যাগে টিফিন নিতে ভুলে যাও। তাই তো দুপুরে মুখে কিছু ওঠে না তোমার। বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ছলে ছাত্র পড়ানো। তারপর বাড়ি ফেরা। এরপর শুরু হয় আরেক পর্ব। আমাকে পড়ানো। সঙ্গে চলে রাতের রান্না। এইভাবেই সময় কেটে যায়। শেষ হয় এক একটা দিন। কিন্তু মা থামে না। চলে পরিশ্রম! আচ্ছা মা তুমি এত কাজ কী করে করো গো!
এমন প্রশ্ন নিশ্চয় আপনাদের মনেও আসে। তাই তো! গবেষণা বলছে মেয়েদের মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশ এতটাই কর্মক্ষম হয় যে একসঙ্গে অনেক কাজ করতে তাঁদের কোনও সমস্যাই হয় না। শুধু তাই নয়, মেয়েদের ব্রেনের কর্টেক্স নামক অংশে অতিরিক্ত পরিমাণে রক্ত পৌঁছে যাওয়ার কারণে আবেগ নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেই সঙ্গে একই সময়ে একাধিক কাজ নিপুনভাবে করার ক্ষমতাও বাড়ে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জার্নাল অব অ্যালঝাইমারস ডিজিজ- এ প্রকাশিত এই গবেষণা অনুসারে মেয়েরা যদি চায় তাহলে তাদের মস্তিষ্কের এই অভিনব ক্ষমতাগুলিকে আরও বাড়াতে পারে। আর তার জন্য ডায়াটে কিছু রদবদল করার প্রয়োজন পরে। তাই মা, তোমরা যদি নিজেদের ব্রেন পাওয়ার এবং সার্বিক কর্মক্ষমতা আরও বাড়াতে চাও, তাহলে দয়া করে এই ডায়েটটা মেনে চলো। দেখবে অফিস এবং বাড়িতে তোমাদের কেউ হারাতে পারবে না।
এক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে যে যে নিয়মগুলি মেনে চলতে হবে, সেগুলি হল...
১. কফি কম খাবেন:
এই পানীয়টিতে উপস্থিত ক্যাফিন বেশি মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে ঘুম কমে যায়। সেই সঙ্গে অ্যাংজাইটি এবং স্ট্রেস বেড়ে যাওয়ার মতো আশঙ্কাও থাকে। তাই তো ভুলেও দিনে ৪০০ এমজি-এর বেশি ক্যাফিন গ্রহণে চলবে না।
২. পর্যাপ্ত ঘুম চাই:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বেশি ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন পরে। কারণ সারা দিনে যে পরিমাণ শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রম একজন মেয়ে করে থাকেন, তা একজন ছেলে জীবনেও করতে পারবেন না। তাই তো চিকিৎসকেরা শরীর এবং মস্তিষ্ককে আরাম দিতে কম করে ৮ ঘন্টা ঘুমনোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন মেয়েদের। প্রসঙ্গত, একথা ভুলে গেলে চলবে না যে মস্তিষ্ক ঠিক মতো বিশ্রাম না পেলে ব্রেন পাওয়ার কমতে শুরু করবে। ফলে মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে।
৩. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে হবে:
ফ্যাট এবং অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল। কারণ এমন খাবার খেলে হজম ক্ষমতা কমে যায়। ফলে খাবার হজম হতে যেমন সময় নেয়, তেমনি শরীরের কাজ করার ক্ষমতাও হারিয়ে যেতে শুরু করে। এক কথায় কুঁড়েমি বৃদ্ধি পায়। তাই তো এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল।
৪. বাদাম খেতে হবে বেশি করে:
লাঞ্চ এবং ডিনারের মাঝে যখনই খিদে পাবে তখনই বাদাম বা ড্রাই ফ্রউটস খাবেন। এই ধরনের খাবার ব্রেন এবং শরীরকে সচল রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে দেহের অন্দরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি দূর করে একাধিক রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. সাইট্রাস ফল খেতে হবে বেশি করে:
কমলা লেবু, মৌসাম্বি লেবু এবং পাতি লেবু জাতীয় সাইট্রাস ফল বেশি বেশি করে খেতে হবে। কারণ এমন ধরনের ফলে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা ব্রেন পাওয়ার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, ভিটামিন সি-এর ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি ডার্ক চকলেট, ডিম, বিনস, ডাল এবং সবুজ শাক-সবজিও প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। প্রতিদিন যদি এই খাবারগুলি খেতে পারেন, তাহেলে আমৃত্যু ব্রেনকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
৬. জল খেতে হবে পরিমাণ মতো:
মানসিক এবং শরীরিক ক্লান্তি দূর করতে জলের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুনতে যতই আজব লাগুক না কেন, একথার মধ্যে কোনও ভুল নেই যে জল শরীরকে আদ্র রাখার মধ্যে দিয়ে দেহ এবং মস্তিষ্ককে চাঙ্গা এবং কর্মক্ষম রাখতে জল বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর যদি তুলসি পাতা, লেবু অথবা নিম পাতা সহযোগে জল পান করতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই!
৭. শরীরচর্চা মাস্ট:
ব্রেন এবং শরীরের সচলতা বজায় রাখতে ডায়েট যেমন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনি শরীরচর্চার অবদানকেও অস্বীকার করা সম্ভব নয়। কারণ এক্সারসাইজ করার সময় শরীরের অন্দরে যে পরিবর্তন হতে থাকে, তা একই সঙ্গে শরীর এবং মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়। তাই তো দিনে কম করে ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিয়ে তাকেন চিকিৎসকেরা।