Just In
নিপাহ ভাইরাস থেকে সাবধান!
একথা ঠিক যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেরালার দূরত্ব প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার। তবে ভয়ের বিষয় হল কোনও ভাইরাসের পক্ষে এই রাস্তা পেরনো কিন্তু মোটেও কঠিন কাজ নয়।
একথা ঠিক যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেরালার দূরত্ব প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার। তবে ভয়ের বিষয় হল কোনও ভাইরাসের পক্ষে এই রাস্তা পেরনো কিন্তু মোটেও কঠিন কাজ নয়। তাই তো বন্ধু, গত ১০ দিনে যে ভাইরাসে প্রায় ১০ জন কেরালাবাসীকে ঘায়েল করে ফেলেছে, সেই ভাইরাসের সম্পর্কে জেনে না নিলে কিন্তু বিপদ। এই কারণেই তো এই প্রবন্ধে নিপাহা ভাইরাস সম্পর্কিত এ-টু-জেট তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে।
১৯৯৮-৯৯ সালে মালয়েশিয়ার নিপাহা নামক গ্রামে প্রথমবার এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়। তাই তো সেদিন থেকে চিকিৎসক মহলে এই ভাইরাসকে নিপাহ ভাইরাস নামে চেনে। প্রসঙ্গত, এই জীবাণুটি মূলত বাদুড়ের শরীর থেকে শুয়োর, কুকুর, বিড়াল, ছাগল এবং ঘোড়ার শরীরে ছড়িয়ে পরে। শুধু তাই নয়, ফল থেকেও ছড়াতে পারে এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসটি। যেমনটা এবার কেরালায় ঘটেছে। আর একবার মানুষের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করে গেলে কিন্তু বেজায় বিপদ! কারণ একজনের শরীর থেকে আরেক মানুষের শরীরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পরতে কিন্তু একেবারেই সময় লাগে না। আর ঠিক মুহূর্তে যদি এই সংক্রমণের চিকিৎসা করা না যায়, তাহলে কিন্তু মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই কেরালা থেকে কলকাতার বাজারে আসা ফল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চালার চেষ্টা করবেন। সেই সঙ্গে সম্প্রতি কোনও বন্ধু বা পরিবারের কেউ যদি কেরালা ভ্রমণ করে ফেরে, তাহলে তাকেও একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিতে বলবেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে নিপাহ ভাইরাস হল এক ধরনের "জনোসিস" কেটাগরির ভাইরাস, যার দ্বার সংক্রমিত হলে সাধারণত যে যে লক্ষণগুলি প্রকাশ পেয়ে থাকে সেগুলি হল...
নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ:
এই জীবাণু একবার শরীরে প্রবেশ করে গেলে প্রথমেই মারাত্মক শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। সঙ্গে লেজুড় হয় প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা, জ্বর, পেশীতে যন্ত্রণা, গলায় ব্যথা, বমি-বমি ভাব, মাথা ঘোরা, নানাবিধ নিউরোলজিক্যাল সমস্যা প্রভৃতি। তবে এখানেই শেষ নয়, কোনও কোনও সময় এই বিশেষ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর নিউমনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কোমায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই তো এই ধরনের সংক্রমণের যত শীঘ্র সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
রোগ ধরা পরবে কীভাবে?
যেমনটা আপনারা লক্ষ করলেন এই রোগের লক্ষণগুলি বাকি অনেক রোগের লক্ষণের মতোই। তাই তো রোগের প্রথম ধাপে শরীরে আদৌ নিপাহ ভাইরাস রয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে অনেকাংশেই বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না। এই কারণেই তো এমন লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করলে সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা সম্ভব শরীরে এই ভাইরাস রয়েছে কিনা। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন, তা হল রক্ত পরিক্ষার পর তা যদি সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার জন্য পাঠানো না যায়, তাহলে কিন্তু অনেক সময়ই ভাইরাসের উপস্থিতি সম্পর্কে জেনে ওঠা সম্ভব হয় না। তাই এই বিষয়টি মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। প্রসঙ্গত,আরেকভাবেও নিপাহ ভাইরাসকে চিহ্নিত করা সম্ভব। কীভাবে? পলিমেরাস চেইন রিয়েকশন বা পি সি আর পরীক্ষার মাধ্যমে এই ভাইরাসের উপস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ লাগানো যেতে পারে। অনেক সময় এক্ষেত্রে এনজাইম-লিঙ্ক ইমিউনোসর্বেন্ট এসে বা "ই এল আই এস এ" পরীক্ষারও সাহায্যও নেওয়া হয়ে থাকে।
চিকিৎসা:
দুঃখের বিষয় এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনও ভ্যাকসিন বাজারে আসেনি। তাই এক্ষেত্রে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীকে বেশি করে জল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ এমনটা করলে অনের ক্ষেত্রেই রোগের প্রকোপ কমে যেতে সময় লাগে না।
বাদুড়ের কী ভূমিকা?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে নানা কারণে বাদুড়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেজায় দুর্বল হয়ে পরছে। ফলে নিপাহ ভাইরাসের মতে জাবীণু খুব সহজে এই প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। আর এরপর বাদুড়ের স্যালাইভা এবং ইউরিনের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পরছে একাধিক মানুষের শরীরে। এইভাবে বাদুড় প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে এই রোগের প্রসার ঘটিয়ে ফেলছে।
কীভাবে এই রোগের থেকে দূরে থাকা সম্ভব?
এক্ষেত্রে "হু" প্রকাশিত গাইড লাইন মেনে চলতে হবে। আর তা হল- ভাল করে পরীক্ষা করে ফল খেতে হবে। প্রয়োজনে এই সময় ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, খাবার খাওয়ার আগে ভাল করে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে দুর্বল না হয়ে পরে তার জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং যতটা সম্ভব বাদুড় থেকে দূরে থকাতে হবে। তাহলেই দেখবেন কেল্লা ফতে!