Just In
বেশি মাত্রায় খেলে কি হতে পারে জানা আছে?
বেশি মাত্রায় খাবার খেলে কী কী সমস্যা হতে পারে, চলুন জেনে নেওয়া নিন সে সম্পর্কে...
সামনেই বিয়ে বাড়ির মরসুম। আবার শীতকাল। তাই কবজি ডুবিয়ে খাওয়ার মোক্ষম সময় চলেই এল। অন্যদিকে, ওজনটাও বেশ বেড়ে যাচ্ছে। তবে, কিছুতেই যেন খাওয়াদাওয়াটা মিস করা যাচ্ছে না। খেতে বসলেই পেট ভরে খাওয়া হচ্ছে। বাড়ি হোক বা বিয়েবাড়ি, রেস্তোরা থেকে রাস্তার খাবার সব মিলিয়ে জীবনটা শুধু খাওয়াদাওয়াতেই মগ্ন। তাই তো দিন দিন বেড়ে চলেছে গ্যাস, অম্বলের প্রকোপ। হজমের ওষুধ খেয়েও কিছুতেই কাবু হচ্ছে না এইসব সমস্যা। মূলত, আমরা যখন কোনও খবারের ঘ্রান নিই বা চোখে দেখি, তখনই পাচনতন্ত্র কাজ করতে শুরু করে। এরফলে, খাদ্য গ্রহণ করার তাগিদ আমরা অনুভব করতে পারি। খাদ্যগ্রহণ করার সময় সেটি মুখ থেকে পেটে, পেট থেকে ক্ষুদ্রান্ত্র এবং ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে বৃহদন্ত্রে যায়। আর ঠিক তখনই পাকস্থলী এবং লিভার থেকে হজমের উপযোগী রস নিঃসরণ হতে থাকে।
তাহলে ওজন কমানোর উপায় কিছু আছে কি? উপায় অবশ্য আছে। সেটা হল, খাওয়া কমানো। তাই বলে একেবারে উপোষ করে থাকা নয়। সবকিছু পরিমাণ মতো খান আর নিজেকে সুস্থ রাখুন। আর যদি তা না করতে পারেন, তাহলে একবার এই প্রতিবেদনটি পড়ে দেখুন। বেশী খাবার খেলে কি হতে পারে, তার কিছুটা ছবি তুলে ধরা হল এই লেখায়।
বেশি মাত্রায় খাবার খেলে কী কী সমস্যা হতে পারে, চলুন তাহলে জেনে নেওয়া নিন সে সম্পর্কে...
পেট ফুলে ওঠে
আমরা যখন একসঙ্গে অনেকটা বেশি খেয়ে নিই, তখন আমাদের পেট বেলুনের মতো ফুলে যায়। এর মূল কারণ হল, আমরা কোনও খাবার শুধু ভালো লাগলে বা অনেক খাবারের স্বাদ একসঙ্গে নিতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে খেয়ে নিই। যেমন- যে কোনও অনুষ্ঠান বাড়ি বা কোনও রেস্টরেন্টে প্রায়ই এমনটা হয়ে থাকে। পেট বেলুনের মতো ফুলে যাওয়ার কারণ হল, আমরা যতবেশি পরিমাণ খাই, তত পরিমাণ খাদ্য পেটে জায়গা দেওয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে। তখন অনেক জায়গা জুড়ে অতিরিক্ত খাবারকে জায়গা দেওয়া হয়। এতে শরীরের অন্যান্য প্রত্যঙ্গের ওপর প্রচুর পরিমাণে চাপ পরে।
পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
আমরা যখনই খাদ্য গ্রহণ করি, তখন পাচনতন্ত্রে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস জমা হতে থাকে। ধীরে ধীরে এই গ্যাস পেটের মধ্যে জমা হতে থাকে এবং পেট ফুলে যায়। এটি আরও বৃদ্ধি পায়, যখন আমরা খাবারের সঙ্গে কার্বোনেটেড কোনও পানীয় গ্রহণ করি। আর এই কারণেই শুধু পেট ফুলে যাওয়া নয়, প্রচুর পরিমাণে ঢেঁকুরেরও সৃষ্টি করে, যা পেটের ভিতর জমা গ্যাসকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।
বুকজ্বালা শুরু হয়
আমরা যখন খাদ্য গ্রহণ করি, তখন পেটের ভিতরে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। এতে খাবার চূর্ণ- বিচূর্ণ হতে পারে এবং হজম হতে পারে। কিন্তু আমরা যখন প্রচুর পরিমাণে খাবার খাওয়া শুরু করি, তখন এই অ্যাসিড বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হতে শুরু করে এবং এর ফলে আমাদের অম্বল এবং বুকজ্বালার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
ক্যালরি জমতে থাকে
খাদ্য গ্রহণ করার পর তা পাচনতন্ত্র হয়ে ক্ষুদ্রান্তের দিকে যায়। এই সময় ক্ষুদ্রান্তে সমস্ত পৌষ্টিক উপাদান শোষিত হয়। একই সঙ্গে লিভার এবং পাকস্থলি থেকে উৎসেচক বেড়িয়ে আসতে থাকে, যাতে ফ্যাট, প্রোটিন সহ অন্যান্য উপাদান সহজে হজম হতে পারে। পাচনতন্ত্রের কোষগুলি এই সময় ভিটামিন, খনিজ পদার্থের মতো উপাদানগুলিকে একত্রিত করতে বা ভবিষ্যতের এনার্জির জন্য জমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। যদিও খুব বেশি খাবার খেয়ে যে অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরে জমা হয়, তা কখনই এনার্জিতে রূপান্তরিত হয় না।
প্রত্যঙ্গগুলির ওপর চাপ পরে
খুব বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করলে তা অর্গানের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি করে। এর কারণ, অতিরিক্ত খাদ্য হজম করতে অতিরিক্ত হরমোন এবং উৎসেচকের প্রয়োজন পরে। এরফলেই খাদ্য চূর্ণ- বিচূর্ণ হতে পারে। প্রসঙ্গত, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের উপর প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি চাপের সৃষ্টি হলে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়।
শরীর ক্লান্ত হয়ে পরে
অতিরিক্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা হলে সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই দুটি হরমোনের ক্ষরণ যত বাড়তে থাকে, তত ক্লান্তি এবং ঝিমুনি আসতে থাকে। এই কারণেই দেখবেন দুপুর বেলা একটু বেশি খাওয়া হয়ে গেলেই চোখ বুজে আসে। মনে হয় ঘুমের ছোটে কাজ মাথায় উঠবে।
বমি হতে পারে
অতিরিক্ত খাবার খেলে অনেক সময়ই মনে হয়, যদি কোনওক্রমে বমি করে শরীর হালকা করা যেত। আসলে এই গা বমি ভাবের মূল কারণ যেমন অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা, তেমনই, লেপ্টিন হরমোনের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করাও। আসলে এই হরমোন আমাদের মস্তিষ্ককে বার্তা দেয় যে আমাদের পেট ভরতি আছে না খালি আছে। শুধু তাই নয়, কখন খাবার খাওয়া থামিয়ে দেওয়া উচিত, তারও বার্তা দেয় এই হরমোন। যদিও, আমরা যখন পছন্দের কোনও খাবার কব্জি ডুবিয়ে খাই, তখন এই সব অনুভূতিকে গ্রাহ্য করা আর হয়ে ওঠে না। আর তখনই নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে পেট অতিরিক্ত পরিমাণে ভরে যায়া। সেই সঙ্গে শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে। ফলে বমি ভাব দেখা দেয়।