Just In
Monsoon Health Tips: বর্ষায় সু্স্থ থাকতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি
Monsoon Health Tips: গ্রীষ্মের প্রখর তাপ থেকে বাঁচায় বর্ষা। গুমোট গরমের পর এই হাওয়া বদল অবশ্যই আরামদায়ক। চতুর্দিকে সবুজ প্রকৃতি, ঠান্ডা আবহাওয়া, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি যেন মন জুড়িয়ে দেয়। তবে এই সব ভালোর মধ্যে আবহাওয়ার পরিবর্তন বয়ে আনে শরীরের নানাবিধ সমস্যা। বর্ষায় শরীরকে সুস্থ রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়।
চিকিৎসকদের মতে, বর্ষাকালে সমস্ত রকম ব্যাকটেরিয়া খুব সক্রিয় হয়ে ওঠে। খাদ্য ও জলের দূষণের ফলে খুব অল্পসময়ের মধ্যে বিভিন্ন রোগে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কলেরা, টাইফয়েড, গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস (Gastroenteritis), ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ জলবাহিত রোগের জন্ম নেয়।
উত্তরাখণ্ডের পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বর্ষাকালে ভারতবর্ষে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পায়, যা ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডেঙ্গুর মতো আকার ধারণ করে। এখন আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, বর্ষাকালটা হয়তো উপভোগ করতে পারবেন না! অবশ্যই পারবেন, যদি আপনি নিম্নলিখিত স্বাস্থ্য পরামর্শগুলি সঠিকভাবে মেনে চলেন।
১) ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন
বর্ষাকালে জীবাণু শরীরের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই মেনে চলুন ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি। খাবার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া, বাইরে থেকে বাড়িতে প্রবেশ করার পর হাত, মুখ, পা পরিষ্কার রাখা, পরিশুদ্ধ পানীয় জল পান করা, বাড়ির তৈরি খাবার খাওয়া, ইত্যাদি মেনে চলুন। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যুক্ত সাবান দিয়ে হাত ধুলে ডায়রিয়া রোগের সংক্রমণের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
২) বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখুন
এই সময় বাড়ির আশেপাশে জল জমতে দেবেন না এবং বাড়ির বাগান থেকে শুরু করে বাড়ির উঠোন ও বাড়ির ভেতর পরিষ্কার রাখবেন। বাড়ির চারিপাশকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ইনসেক্ট কিলার স্প্রে ছড়ান। তবেই আপনি ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা পাবেন।
৩) পর্যাপ্ত জল পান করুন
নিজেকে ফিট রাখতে বেশি পরিমাণে জল পান করুন। কারণ জল শরীরে থাকা ক্ষতিকারক উপাদানগুলি বের করে দিতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। তবে এই সময় পরিশুদ্ধ জল পান করুন অথবা জলকে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তারপর পান করুন। এর ফলে জলে থাকা জীবাণুগুলি ধ্বংস হয়ে যায়, যা জলবাহিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৪) হার্বাল টি পান করুন
এই সময় আদা, গোলমরিচ, মধু, পুদিনা, তুলসী যুক্ত চা খেতে পারেন। এই সমস্ত উপাদানে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৫) ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান
বর্ষার সময় সর্দি, জ্বর এড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। কারণ ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে জ্বর, সর্দি-কাশি ও বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। কমলালেবু, পেয়ারা, টমেটো, সাইট্রাস ফল, আলু, ব্রকলি এবং সবুজ শাকসবজি, কাঁচা লঙ্কা ও অন্যান্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার মরশুমি রোগ-ব্যাধির হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে।
৬) রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলুন
এই সময় রাস্তার খাবার যেমন - কাটা ফল ও ফুটপাতে বিক্রি হওয়া ভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, এই সব খোলা খাবারে Bacillus cereus, Clostridium perfringens, Staphylococcus aureus এবং Salmonella spp -এর মতো খাদ্যজনিত ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা ডায়রিয়া, কলেরা এবং টাইফয়েডের মতো রোগ সৃষ্টি করে। তাই সাবধান থাকুন।
৭) নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
ফিট এবং সুস্থ থাকতে প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। বৃষ্টির কারণে যদি আপনি বাইরে বের হতে না পারেন তবে বাড়িতেই স্কোয়াট, পুশ-আপস্ ও ভিন্ন ধরনের ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ এবং যোগব্যায়াম করুন। এগুলি আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখবে, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
অন্যান্য প্রতিরোধমূলক টিপস্
১) এই সময় পরিষ্কার ও শুকনো পোশাক পরবেন। বর্ষায় ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে কাপড় পড়বেন না। কাপড়ের পাশাপাশি ভেজা জুতো বেশিক্ষণ পরে থাকবেন না।
২) বর্ষাকালে কেনা সবজিগুলি পরিষ্কার জলে ভালো করে ধরে রাখুন। পাশাপাশি রান্না করার আগে সবজি কেটে ভাল করে ধুয়ে নেবেন।
৩) বৃষ্টিতে ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে প্রবেশ করবেন না। কাপড় জামা পরিবর্তন করে শরীর ভালো করে মুছে তারপর প্রবেশ করুন।
৪) বৃষ্টিতে ভিজে গেলে বা ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে বাড়িতে প্রবেশ করার পর গরম স্যুপ, ভেষজ চা পান করুন।
৫) অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে রোজ টক দই খান।
৬) স্নানের জলে জীবাণুনাশক যুক্ত করুন এবং গরম জলে স্নান করুন।
৭) নিয়মিত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমোন। অল্প ঘুম শরীরকে দুর্বল করে দিতে পারে।
৮) মশা কমাতে মশা মারার ঔষধ প্রয়োগ করুন। মশারি খাটিয়ে ঘুমান। সবসময় মসকিউটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন।
৯) তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।