Just In
দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপ-ফোনের সামনে বসে থাকেন? চোখ বাঁচাতে অবশ্যই মানুন এই নিয়মগুলি
কোভিড-১৯ মানুষের অগোছালো ও নিয়ন্ত্রনহীন জীবন ধারণের পদ্ধতিকে বদলে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ক্ষতি করছে বেশি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে থাকার কারণে ও কর্মহীন হয়ে পড়ায়, মানুষ মানসিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ছেন, ভুগছেন মানসিক সমস্যায়ও। আবার লকডাউনের দিন থেকে এখনও পর্যন্ত ঘরে বসে অফিসের কাজ করার ক্ষেত্রে টানা কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ব্যবহার, নয়তো টিভি বা মোবাইলের পিছনে সময় দেওয়া, এই অভ্যাসগুলো শারীরিক দিক থেকে দুর্বল করে তুলছে মানুষকে। কারণ, করোনার আতঙ্কে আমরা ভুলতে বসেছি বাইরের জগতটাকে।
করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে কাজের অবসরে বই পড়া, গান শোনা, খেতে যাওয়া, শপিং করতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কিংবা পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার একটা চল ছিল। কিন্তু এখন এইসব অতীত। সংক্রমণ এড়াতে মানুষ এখন হয়ে উঠেছে 'গৃহে আবদ্ধ জীব'। সারাদিন কেটে যাচ্ছে মোবাইল, টিভি অথবা ল্যাপটপ নিয়ে। ফলে দিনের শেষে দেখা দিচ্ছে চোখ জ্বালা, চোখ শুকিয়ে যাওয়া, চোখে অস্বস্তি, চোখ লাল হওয়া, ভারী ভাব, ঝাপসা দেখা, কপাল, ঘাড়, পিঠ, কোমর, মাথা ব্যথা ইত্যাদি। চাকুরীজীবী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, সকলেই এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই ধরনের সমস্যাকে বিশেষজ্ঞরা কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম বা ডিজিটাল আই স্ট্রেন হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
কিন্তু উপায় কী? শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস, চাকুরিজীবীদের বাড়ি থেকে কাজ, গেম খেলা, সিনেমা দেখা, সবটাই এখন মোবাইল ও ল্যাপটপ এর উপর নির্ভরশীল। তাই এই মুহূর্তে এসবের থেকে দূরে থাকার কোনও উপায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। তবে নিজের চোখকে সুরক্ষিত রাখতে এই সমস্ত ডিভাইস ব্যবহারের সময় যে নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত, তা আজ আমরা এই আর্টিকেলে উল্লেখ করব। দেখে নিন কী করবেন এবং কী করবেন না।
১) ঘন ঘন বিরতি নিন
ডিজিটাল আই স্ট্রেন এড়াতে এবং চোখকে সুস্থ রাখতে কাজের সময় ঘনঘন বিরতি নেওয়ার থেকে ভালো ঔষধ আর হয় না। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রতি ২০ মিনিট অন্তর ২০ সেকেন্ড করে বিরতি নিন এবং ২০ ফুট দূরত্বে কোনও জিনিসের দিকে তাকান। আবার ৩০ মিনিট অন্তর ৫ মিনিটের বিরতি নিন। এই বিরতি নেওয়ার সময় কোনওরকম ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করবেন না। এটি চোখকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও উপকার করবে।
২) চোখের এক্সারসাইজ করুন
কাজ করার মাঝে যখন বিরতি নেবেন তখন চোখের বিভিন্ন এক্সারসাইজ করুন। নিয়মিত চোখের এক্সারসাইজ করলে চোখের পেশীগুলি শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং Myopia, Astigmatism বা Hyperopia-এর মতো অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৩) অক্ষরের সাইজ বড় করে দেখুন
স্ক্রিনে কোনও জিনিস লেখা বা দেখার সময় লেখার সাইজ বাড়িয়ে নিন, যাতে ডিভাইসগুলিকে দূরে রেখে সহজেই পড়তে বা কাজ করতে পারেন। এতে চোখে চাপ কম পড়বে এবং চোখ সুস্থ থাকবে। চেষ্টা করুন বড় স্ক্রিনে কাজ করার।
৪) স্ক্রিনকে দূরত্বে রাখুন
আইপ্যাড, ট্যাবলেট, টিভি, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় চোখের খুব কাছাকাছি রাখবেন না। কম্পিউটারের স্ক্রিনটি আই লেভেল থেকে ১৫-২০ ডিগ্রি নিচে রাখুন এবং দূরত্ব বজায় রাখুন ২০ থেকে ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত। এতে চোখের উপর চাপ কম পড়ার পাশাপাশি ঘাড়, কাঁধ, কোমর ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে।
৫) Anti-Glare স্ক্রীন ব্যবহার করুন
এই Anti-Glare স্ক্রীন কম্পিউটার বা ল্যাপটপের স্ক্রিনের অতিরিক্ত আলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। কর্মক্ষেত্রে এই ফিল্টারের প্রয়োজন না হলেও, বাড়ি থেকে কাজ করার সময় এটি ব্যবহার করতে হবে। কারণ এই ফিল্টার চোখের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে এবং চোখকে সুস্থ রাখে।
৬) আলোর মাত্রা ঠিক রাখুন
অতিরিক্ত বেশি আলো বা কম আলো, চোখে বেশি চাপ সৃষ্টি করে এবং দৃষ্টির ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। তাই যে জায়গায় বসে কাজ করবেন সেখানে যথাযথ পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা করে রাখুন। কখনই কম বা বেশি আলোতে কাজ করবেন না।
৭) কম্পিউটার চশমা ব্যবহার করুন
যারা মাত্রাতিরিক্ত কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করেন তারা অ্যান্টি রিফ্লেকটিভ লেন্স যুক্ত চশমা ব্যবহার করুন। এই চশমা চোখের স্ট্রেস কমাতে, ঝাপসা ভাব, মাথা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৮) চোখের স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখুন
চোখের স্ট্রেন এবং চোখের ক্লান্তি দূর করতে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবারগুলি রোজ খান। শাকসবজি, গাজর, পেঁপে, খেজুর ইত্যাদি খাবার চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। চোখকে হাইড্রেটেড রাখতে ওমেগা-থ্রি অয়েল, ফ্ল্যাকসিড অয়েল, স্যামন ও সার্ডিনের মতো মাছ খেতে পারেন।
এছাড়াও
১) প্রতিদিন অন্তত একবার ডিভাইসের পর্দা মুছুন।
২) প্রতি ৩০ থেকে এক ঘণ্টা অন্তর চোখে জল ঝাপটা দিন।
৩) ছয় মাস অন্তর চক্ষু পরীক্ষা করান।
৪) মোবাইল বা ট্যাবলেট ব্যবহারের সময় চোখের থেকে কমপক্ষে ৫০-১০০ সেন্টিমিটার দূরে রাখুন।
৫) ঘন্টাখানেক অন্তর অন্তর হাতের তালুতে ২-৩ মিনিট চোখ দুটো চেপে ধরে রাখুন।
৬) কোনও সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।