Just In
মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণে কি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন?
দিনে রাতে কত না মানুষের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়। তাদের আচার ব্যবহার যেমন ভিন্ন ধরণের হয়, তেমনই তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীও ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। তবে একজন মানুষের প্রতি আমাদের খারাপ দৃষ্টিভঙ্গী তৈরি হওয়ার পিছনে অনেক সময়ই তার মুখের গন্ধ দায়ি থাকে। কারণ সেই ব্যক্তি আমাদের কাছে নোংরা বা অপরিষ্কার হয়ে ওঠেন। কারণ অন্য মানুষের মুখের দুর্গন্ধ আমাদের রীতিমতো বিব্রত করে তোলে। যদিও সেই মানুষটি নানা কারণেই মুখের দুর্গন্ধে ভুগতে পারেন। যেমন- পেটের গণ্ডগোল, গলায় কোনও রোগ, টনসিল বা নাকের সমস্যা, ফুসফুসের সমস্যা প্রভৃতি। এছাড়াও, নানারকম খাবার খেলেও মুখে দুর্গন্ধ হয়। কিন্তু এই নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। কারণ মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পারে, এমন হরেক উপাদান আমাদের চারপাশেই রয়েছে। তাই কি কি উপাদানের মাধ্যমে মুখের দুর্গন্ধকে সহজেই কাবু করা সম্ভব, সে নিয়েই আলোচনা করা হবে বোল্ডস্কাইয়ের এই প্রবন্ধে।
১. নারকেল তেল:
নারকেল তেল দিয়ে মুখ ধুলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। এছাড়াও মুখের ভিতর নানা সংক্রমণ ঠেকাতেও নারকেল তেলের জুড়ি মেলা ভার। কারণ নারকেল তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জীবাণুনাশক রয়েছে, সেই সঙ্গে রয়েছে প্রদাহজনিত সমস্যা করতে পারে এমন উপাদান।
প্রয়োজন- ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল।
পদ্ধতি-
এক টেবিল চামচ নারকেল তেল মুখে নিন। এবার ১০ মিনিট ধরে ভাল করে মুখের ভেতরে নারকেল তেল নাড়াতে থাকুন। খেয়াল রাখবেন, যাতে নারকেল তেল পেটে না চলে যায়। এবার নারকেল তেল মুখ থেকে ফেলে দিন। এবার অল্প গরম জল নিয়ে মুখের ভেতরটা ভাল করে করে ধুয়ে নিন। প্রতিদিন ব্রাশ করার আগে এইভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
২. ইউক্যালিপটাস তেল:
ইউক্যালিপটাস তেলে প্রচুর পরিমাণে জীবাণুনাশক এবং প্রদাহ জনিত সমস্যা দূরীকরণের ক্ষমতা রয়েছে। ইউক্যালিপটাস তেল শুধুমাত্র মুখের দুর্গন্ধ নয়, মাড়ি ফুলে যাওয়া, যে কোনও ব্যাথা ইত্যাদিতেও দারুণ কাজ দেয়।
প্রয়োজন-
দুই থেকে তিন ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল এবং এক কাপ জল।
পদ্ধতি:
দুই থেকে তিন ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল এবং এক কাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার এই জলতি দিয়ে মুখের ভিতর ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে এবং মুখ গহ্বরের অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
৩.আপেল সিডার ভিনিগার:
আপেল সিডার ভিনিগার শারীরিক নানা সমস্যা সমাধানে দারুণ কাজ দেয়। তা সে ওজন কমানো হোক বা দাঁতের যত্ন। সেই সঙ্গে আপেল সিডার ভিনিগারের নিয়মিত ব্যবহারে মুখের দুর্গন্ধও দূর হয়।
প্রয়োজন-
এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনিগার এবং এক গ্লাস জল।
পদ্ধতি:
এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনিগার, এক গ্লাস জলে মিশিয়ে মুখের ভিতরটা ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর শুধুমাত্র জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন একবার করে এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে উপকার মিলবে।
৪.টি ট্রি অয়েল:
টি ট্রি অয়েলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মজুত থাকে। এর ফলে এটি ত্বকের যত্নে যেমন কাজে আসে, তেমনই কাজে আসে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও।
প্রয়োজন-
এক থেকে দুই ফোঁটা টি ট্রি অয়েল এবং এক গ্লাস জল।
পদ্ধতি:
এক থেকে দুই ফোঁটা টি ট্রি অয়েল, এক গ্লাস জলে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর পাঁচ মিনিট ধরে মুখের ভিতরটা ধুয়ে নিতে হবে। দিনে তিন থেকে চার বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে গন্ধ দূর হতে সময় লাগবে না।
৫.লবঙ্গ:
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে লবঙ্গের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এতে উপস্থিত নানা পুষ্টিকর উপাদান মুখ গহ্বরের লুকিয়ে থাকা জীবাণুদের মেরে ফেলে।
প্রয়োজন-
দুটো লবঙ্গ।
পদ্ধতি:
দুটো লবঙ্গ মুখের মধ্যে নিয়ে আস্তে আস্তে চিবোতে হবে। এছাড়াও লবঙ্গ মেশানো চাও নিয়মিত পান করতে পারেন। এতেও মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।
৬.মৌরি:
আমরা অনেকেই খাওয়ার পর মৌরি খাই। এতে খাবার হজম হয় তাড়াতাড়ি, সেই সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধও কমে।
পদ্ধতি:
এক চা চামচ মৌরি মুখে নিন। এরপর ধীরে ধীরে চিবোতে থাকুন। মৌরি দিনের যে কোনও সময় খাওয়া যেতে পারে।
৭.সূর্যমুখী বীজ:
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সূর্যমুখী বীজ দারুণ কাজে দেয়।
প্রয়োজন-
এক চা চামচ সূর্যমুখী বীজ এবং এক গ্লাস জল।
পদ্ধতি:
এক চা চামচ সূর্যমুখী বীজ মুখে নিয়ে চিবোতে হবে। এরপর এক গ্লাস জল খেয়ে নিতে হবে।
৮. আদা:
আদার যে কত গুণ, তা গুনে শেষ করা যাবে না। এই প্রকৃতিক উপাদানটির হাজারোগুণের মধ্যে একটি হল এটি মুখের গন্ধ দূর করতে দারুনভাবে কাজে আসে।
প্রয়োজন-
এক গ্লাস হালকা গরম জল এবং এক চা চামচ আদার রস।
পদ্ধতি:
আদার থেকে রস বের করে নিন। এবার গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। ভাল করে এই জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। খাওয়ার পর এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন। মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে গেলে দুই দিনে একবার করে আদা জল ব্যবহার করুন।
৯.গ্রিন টি:
সকালে চা পান করার অভ্যাস আছে? তাহলে গ্রিন টি খেতেই পারেন। এতে মুখের দুর্গন্ধ ম্যাজিকের মতো দূর হয়। কারণ গ্রিন টি- এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জীবাণুনাশক উপাদান থাকে, যা মুখের অন্দরে থাকা জীবাণুদেরমেরে ফেলে গন্ধ করে।
প্রয়োজন-
এক কাপ গরম জল। একটি গ্রিন টি ব্যাগ এবং মধু।
পদ্ধতি:
এক কাপ গরম জলে একটি গ্রিন টি ব্যাগ ডুবিয়ে রাখতে হবে। কয়েক মিনিট পর কাপ থেকে গ্রিন টি ব্যাগটি সরিয়ে রাখতে হবে। এরপর এর মধ্যে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে পান করতে হবে। দিনে তিন কাপ গ্রিন টিও পান করতে পারেন।
১০. বেকিং সোডা:
বেকিং সোডার মধ্যে অ্যাসিড জাতীয় উপাদান বজায় থাকে। যে কারণে এটি মুখের ভিতরের জীবাণু খুব সহজেই ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে, মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
প্রয়োজন-
এক চিমটে বেকিং সোডা, দাঁত মাজার পেস্ট এবং ব্রাশ।
পদ্ধতি:
ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে তার মধ্যে এক চিমটে বাকিং সোডা দিয়ে দিন। এরপর দাঁত মেজে নিন। দিনে একবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করতেই হবে।