Just In
শরীরের কথা ভেবে উপোস করা কি উচিত নয়?
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে উল্লেখ রয়েছে উপোস করলে হার্টের স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটে।
সেই হাজার বছর আগে থেকে বিভিন্ন ধর্মে উপোস করার প্রথা চলে আসছে। মুসলিম ধর্মে যেমন রমজানের সময় সারা দিন না খেয়ে সন্ধ্যা বেলায় খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। অন্যদিকে হিন্দু ধর্মে যে কোনও পুজো বাড়িতে উপোস তো মাস্ট। ভগবানকে প্রসাদ নিবেদন করা হবে। পুজো শেষ হবে। তবে সেই প্রসাদ খেয়ে উপোস ভাঙবেন ভক্তরা। এখানেই শেষ নয়। পৃথিবীর বাকি ধর্মেও উপোস বা ফাস্টিং-এর প্রথা লক্ষ করা যায়। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জয়গায়। ধর্ম, উপোসকে মান্যতা দিলেও আমাদের শরীর কি এমন অভ্যাসকে মেনে নিতে পারে কি? উপোসের কারণে কি শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়, নাকি আদতে ভালই হয়? এইসব নানা অজানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হবে এই প্রবন্ধে।
গবেষণা কী বলছে?
উপোস শরীরের জন্য ভাল কিনা সেই নিয়ে সাধারণের পাশাপাশি চিরিৎসক মহলেও জানার আগ্রহ কম ছিল না। তাই তো এই নিয়ে গবেষণা কম হয়নি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে উল্লেখ রয়েছে উপোস করলে হার্টের স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস প্রভৃতি মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে শরীর থেকে ক্ষতিকর সব টক্সিন বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। ফলে দেহের নানাবিধ অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই একথা বলতেই হয় যে মাঝে মধ্যে উপোশ করা শরীরের জন্য একেবারেই খারাপ নয়। বরং উল্টোটা। এমনটা করলে শরীর আরও বেশি করে চাঙ্গা হয়ে ওটে। তবে এই নিয়ে এখানেই আলোচনা থামিয়ে দিলে চলবে না। উপোস এবং শরীরের যে সম্পর্ক তার আরও গভীরে যাওয়া উচিত। দেখা উচিত আদৌ এতে সুফল হয়, না কুফল!
শরীর এবং উপোস:
ইতিহাসের একেবারে প্রথম অধ্যায়ে চলে যান। তাহলে দেখতে পাবেন আদি মানবেরা মূলত শিকার করে খেত। আর যেদিন কোনও শিকার জুটতো না, সেদিন খালি পেটেই দিন কটাতে হত। তাই মানব শরীরের গঠন এমন হয়ে গেছে যে সে কয়েক দিন পর্যন্ত না খেয়ে আরামে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, মানব ডি এন এ-এর গঠন এই কারণে এমন হয়ে গেছে না খেলেও তা থেকে কীভাবে উপকার পেত হয় তা সে জানে। তাই তো ফাস্টিং করলে শরীরের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাই থাকে না।
খাবার না খেলে শরীরে কী বদল আসে:
এক্ষেত্রে শরীরের অন্দরে নানা পরিবর্তন হতে শুরু করে। যেমন, খাবার খাওয়ার পর আমাদের ডায়জেস্টিভ সিস্টেম সেই খাবারকে ভেঙে কার্বোহাইড্রেট, শর্করা সহ আরও সব উপদান গ্রহন করে শরীরের কাজে লাগায়। ফলে শরীর চাঙ্গা এবং কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। আর যদি কেউ না খায়, তাহলে তার রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে শুরু করে। ফলে দেহে আগে থেকে মজুত শর্করাকে কাজে লাগিয়ে সে সময় শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চালানো হয়। যে মুহূর্তে শরীরে মজুত শর্করা বা গ্লাইকোজেন ভাঙতে শুরু করে, অমনি দেহে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বিও ভাঙতে থাকে। এমনভাবে কয়েকদিন না খেয়ে থাকলে, যা চিকিৎসকেরা একেবারেই করতে মানা করেন, শরীর "কিটোসিস মোডে" চলে যায়। অর্থাৎ শরীর ফ্যাট ভেঙে জ্বালানি তৈরির কাজে লেগে যায়। ফলে ওজন কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বেরনো, ক্লান্তি সহ আরও সব লক্ষণ দেখা দেয়। এর পরেও যদি ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া শুরু না করা হয়, তাহলে কিডনি এবং লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হতে শুরু করে। তাই একদিনের বেশি না খেয়ে থাকা একেবারেই চলবে না।
উপোশ করলে শরীরের অন্দরে আর কী কী ঘটনা ঘটে:
১. হার্ট ভাল থাকে:
মাসে একবার উপোস করলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে মাসে এক দিন না খেয়ে থাকলে প্রায় হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫৮ শতাংশ কমে যায়। শুধু তাই নয় একদিন উপোশ করলে আমাদের শরীরে হিউমেন গ্রোথ হরমোনের মাত্র বৃদ্ধি পায়। ফলে পেশির গঠন ভাল হয় এবং ওজন কমতে শুরু করে।
২.ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়:
একদিন শুধু জল ছাড়া আর কিছু না খেয়ে থাকলে সেল ডিভিশন ধীরে হতে শুরু করে। ফলে ক্যান্সার সেলের বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। তবে এক্ষেত্রে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
৩. আরও রোগ সারাতে সাহায্য করে:
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে মাসে একবার উপোস করলে মাল্টিপল স্কলেরোসিস, আর্থ্রাইটিস এবং অ্যালার্জির প্রকোপ কমে যায়।
সব শেষে:
সবদিক বিবেচনা করে একথা বলাই যায় যে অল্প বিস্তর না খেয়ে থাকলে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। উল্টে ভলই হয়। কিন্তু টানা অনেকদিন না খেয়ে থাকা একেবারেই চলবে না। যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে বহুদিন না খেয়ে থাকলে শরীরের অন্দরে নেতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে একাধিক অঙ্গ ঠিক মতো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে একাদিক জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি আয়ুও কমে যায়।