Just In
রুই মাছ খান তো?
রুই মাছে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হল হার্টের জন্য মহৌষধি।
ফেলুদার যেমন তোপসে, ব্যোমকেশের অজিত। তেমনি আমার রুই মাছ! কী বলছি ঠিক মগছে ঢুকলো না তাই তো! আরে মশাই ফেলুদা আর ব্যোমকেশের মগজাস্ত্রের ধার এতটা বাড়ার পিছনে তাদের সঙ্গীদের ভূমিকা কি কোনও অংশে কম! তেমনি আমি যে এতটা সুস্থ-সবল, বুদ্ধিমান কিনা যদিও জানা নেই। কিন্তু এই যে রোগ মুক্ত শরীরের অধিকারি, তাতে রুই মাছের ভূমিকাকে কিভাবে এড়িয়ে যাই বলুন! তাই তো অজিত এবং তোপসে যেমন সত্যান্বেষী এবং ফেলু মিত্তিরের সঙ্গ ছাড়ে না, তেমনি রুই মাছকে আমার সঙ্গ ছাড়তে দিই না।
আসলে খাস বাঙালী ঘরে জন্মাবার সৌভাগ্যে ছোট থেকেই দুবেলা পাতে মাছ মাস্ট! বিশেষ করে রুই তো চাইই-চাই। আসলে আমার বাবার মতে এই মাছটি হল স্বদের খনি, তেমনি সুস্বাস্থ্যের চাবিকাটি। প্রথমটায় কথাটা সেভাবে আমল না দিলেও কয়েকটি গবেষণা পত্রে চোখ বোলানোর পর বাবার কথা আজকাল মেনে নিতে কিছুটা বাধ্য হয়েছি। আসলে সম্প্রতি আমাদের দেশের বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সাদা চামড়ার বিজ্ঞানীও রুইয়ের গুণগুণ জানতে কয়েকটি গবেষণা চালিয়েছিলেন। তাতে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা বাস্তবিকই অবাক করার মতো।
গবেষণা বলছে রুই মাছের শরীরে রয়েছে ৭৯ ক্যালরি, ৭৬.৭ গ্রাম জল, ২.৬৬ গ্রাম নাইট্রোজেন, ১৬.৬ গ্রাম প্রোটিন, ১.৪ গ্রাম ফ্যাট এবং ১০০ এমজি সোডিয়াম। এখানেই শেষ নয়, রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফলফরাস, আয়রন এবং কপার। এই সবগুলিই যে মারাত্মক পুষ্টিকর উপাদান, তা নিশ্চয় আর জানতে বাকি নেই। এবার ভাবুন তো নিয়মিত যদি এতগুলি শক্তিশালী খনিজ আপনার শরীরে প্রবেশ করে তাহলে কতটাই না উপকার মেলে।
আরে মশাই দাঁড়ান দাঁড়ান। যাচ্ছেন কই? এখনও তো আসল কথাটাই বলা হয়নি! এই যে এতজন পশ্চিমী বিশেষজ্ঞ দিনের পর দিন রুই মাচের পিছনে পরে থেকে কী জানতে পারলেন, তা জানবেন না? এইসব গবেষণায় দেখা গেছে বর্তমানে যে যে নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের দাপাদাপিতে সারা বিশ্বজুড়ে সবথেকে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তার বেশিরভাগ রোগের প্রতিরোধেই এই মাছটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। এখন প্রশ্ন হল, কিভাবে এতসব উপকারে লেগে থাকে রুই মাছ? চলুন এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা চালানো যাক।
১. হার্ট চাঙ্গা থাকে:
রুই মাছে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হল হার্টের জন্য মহৌষধি। তাই তো এই প্রাকৃতিক উপাদনটি যত বেশি করে শরীরে প্রবেশ করবে, তত হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে, সেই সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও হ্রাস পাবে। প্রসঙ্গত, ইন্ডিয়ান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে অনিয়ন্ত্রিত জীবন, বেহিসেবি খাওয়া-দওয়া এবং আরও নানা কারণে কম বয়সিদের মধ্যে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর আমাদের দেশে যত জন হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশেরই বয়স ৪০-এর কম। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন সুস্থ জীবন পেতে রুই মাছ খাওয়াটা কতটা জরুরি।
২. রক্ত প্রবাহের উন্নতি ঘটে:
বেশ কিছু কেস স্টাডি অনুসারে সপ্তাহে কম করে ২-৩ দিন রুইমাছ খেলে শরীরে "ই পি এ" এবং "ডি এইচ এ" এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে, যা শরীরের প্রতিটি অংশে রক্তের প্রবাহ এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে ইকোসোনোয়েড নামক একটি হরমোনের প্রভাব কমতে শুরু করে। যে কারণে ব্লাড ক্লট করার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৩. জয়েন্টের কর্মচঞ্চলতা বৃদ্ধি পায়:
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অস্টোওপোরোসিস রোগের মধ্যে যে গভীর একটা সম্পর্ক রয়েছে সে বিষয়টি নজরে এসেছে বিজ্ঞানীদের। তাদের মতে এই প্রকৃতিক উপাদানটির মধ্যে এমন কিছু শক্তি রয়েছে, যা এই ধরনের হাড়ের রোগের প্রকোপ কমাতে দারুন উপকারে লেগে থাকে।
৪. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে:
কারণটা পড়াশোনা হোক, কী অফিস, দিনের বেশিরভাগ সময় কম্পিউটারে আঠার মতো লেগে থাকাটা এখন রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সবথেকে বেশি ক্ষতি হচ্ছে চোখের। তাই শরীরের সবথেকে মূল্যবান এই অঙ্গটির খেয়াল রাখতে হবে তো! আর কিভাবে করবেন এই কাজটি? খুব সহজ! রই মাছকে বন্ধু বানিয়ে ফেলুন। তাহলেই আর চোখ নিয়ে চিন্তা থাকবে না। আসলে এক্ষেত্রেও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দারুন কাজে আসে। এই উপাদানটি শুধু দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায় না, সেই সঙ্গে ম্যাকুলার ডিজেনারেশনকেও প্রতিরোধ করে।
৫. পুষ্টির ঘাটতি দূর করে:
যেমনটা একেবারেই শুরুতে আলোচনা করেছি যে রুই মাছে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পুষ্টিকর উপাদান, যা শরীরের রোজের চাহিদা মেটাতে দারুনভাবে সক্ষম। তাই তো এক কথায় বলা যেতে পারে যে রুই মাছ হল সেই ব্রহ্মাস্ত্র, যা দিয়ে ছোট-বড় যে কোনও রোগকেই কুপোকাত করা সম্ভব। প্রসঙ্গত, রুই মাছে উপস্থিত সেলেনিয়াম এমন কিছু এনজাইমের জন্ম দেয়, যা ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে:
আচ্ছা মাছ কিভাবে দূষণের হাত থেকে বাচাঁয় মশাই? আসলে রুই মাছে থাকা বিশেষ কিছু উপাদান ফুসফুসের কর্মক্ষমতা এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে বায়ু দূষণের কুপ্রভাব শরীরের উপর পরতেই পারে না। সেই সঙ্গে অ্যাস্থেমার প্রকোপও হ্রাস পায়।
৭. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
বৈজ্ঞানিক নথি অনুসারে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। সেই সঙ্গে একজিমা এবং সোরিয়াসিসের মতো রোগের চিকিৎসাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, মাছে উপস্থিত প্রোটিন কোলাজেনের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বক উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।