For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts

পাঁঠার মাংস খাওয়া কি সত্যিই শরীরের পক্ষে খারাপ?

পুষ্টির দিক থেকে বিচার করলে পাঁঠার মাংসে একাধিক ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে যা শরীরের গঠনে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।

|

আজকাল একটু বয়স হলেই রেড মিটের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেন একদল মানুষ। এমনকি বয়স ৩০ পেরনোর আগেই শুভানুধ্যায়ীরা বলা-বলি শুরু করে দেন- "পাঁঠার মাংস এখটু কম করে খা, না হলে যে অসুস্থ হয়ে পরবি!" আচ্ছা সত্যিই কি আম আদমির ক্ষেত্রে, মানে যাদের জটিল কোনও রোগ ব্যাধি নেই তাদের ক্ষেত্রে রেড মিট খাওয়া কি বিষ খাওয়ার সমান? চিকিৎসা বিজ্ঞান কী বলছে?

পুষ্টির দিক থেকে বিচার করলে পাঁঠার মাংসে একাধিক ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে যা শরীরের গঠনে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। তাহলে এই যে লোকে বলে পাঁটার মাংস খেলে হার্ট খারাপ হয়ে যায়, খপ্পরে পরতে হয় আরও সব রোগের। এই সব ধরাণা কি তাহলে ভুল? এইসব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হল এই প্রবন্ধে।

রেড মিট বলতে মূলত আমরা পাঁটার মাংস বা কোনও কোনও সময় ভেঁড়া বা পর্ক খেয়ে থাকি। তবে আমাদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পাঁটার মাংসটাই বেশি পছন্দ করে থাকেন। একাধিক পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই তৃতীয়াংশই মাংস খেতে ভালবাসে। তাই এই বিষয়ে খোঁজ লাগানোটা জরুরি যে আদৌ মাংস খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক কিনা। কারণ সত্যিই যদি এমনটা হয়, তাহলে বলতে হবে সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার সিংহভাগই বিপদসীমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, যা একেবারেই ভাল লক্ষণ নয়।

রেড মিট কি বাস্তবিকই পুষ্টিকর?

রেড মিট কি বাস্তবিকই পুষ্টিকর?

এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে পাঁটার মাংস খেলে শরীরে একাধিক পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ব৬, আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম প্রভৃতি। এই সবকটি উপাদানই শরীরের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তাহলে গত এক দশকে মাংসের থেকে সবজি খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে কেন?

তাহলে গত এক দশকে মাংসের থেকে সবজি খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে কেন?

মূল কারণটা হল ভয়। সত্য-মিথ্যার হদিশ না রেখেই সারা বেশিরভাগ মানুষ এক প্রকার ভয় পেয়েই ধীরে ধীরে পাঁঠার মাংস সহ বাকি সব রেড মিট খাওয়াও ছেড়ে দিচ্ছে। পরিসংখ্যান ঘাঁটলেই জানতে পারবেন, গত ৫-১০ বছরে ৮-৮০, সবার মধ্যেই পাঁঠার মাংস খাওয়ার বিষয়ে ভীতি জন্মেছে। আসলে অনেকেই মনে করেন, এই মাংস খেতে যতটা সুস্বাদু, শরীরের পক্ষে ততটাই ক্ষতিকারক। যদিও একথা ঠিক যে পাঁটার মাংস বা রেড মিট বাস্তবিকই শরীরে পক্ষে ক্ষতিকারক। কারণ এই মাংসটি নিয়মিত খেলে নানা ধরণের মারণ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এমনকী কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। তাই ভয়টা অবাস্তব নয়। তবে এক্ষেত্রে একটা বিষয়ে জেনে রাখা প্রয়োজন যে পাঁটার মাংস খেলেই যে এই রোগগুলি হবে, এমন নয়। মাত্রাতিরিক্ত হারে রেড মিট খেলেই এই সব রোগ ঘিরে ধরবে, বাড়বে মৃত্য়ুর আশঙ্কাও। তাই পাঁঠার মাংসকে দোষ না দিয়ে কত পরিমাণে তা খাওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে নজর দিলে ক্ষতি কম হবে। তাই তো রেড মিট খাওয়ার স্বাস্থ্যকর পরিমাণটা জেনে নিলেই কেল্লাফতে! তবে এক্ষেত্রে একটা বিষয় জেনে রাখা ভাল যে শারীরিক গঠনের কারণে ভারতীয়দের হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এমনিতেই বেশি থাকে। তাই পশ্চিমি দুনিয়ার মানুষেরা যতটা পরিমাণ রেড মিট প্রতিদিন খেতে পারবেন, ভারতীয়দের ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ পাঁঠার মাংস খাওয়া কিন্তু একেবারেই চলবে না। তাহলে এখন প্রশ্ন হল, প্রতিদিন কতটা পরিমাণ রেড মিট খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কমবে? এই উত্তর মিলবে, তবে তার আগে রেড মিটের কারণে কী কী রোগ হতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

রেড মিট এবং ক্যান্সার:

রেড মিট এবং ক্যান্সার:

২০১৫ সালে ওয়াল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল বেশি মাত্রায় রেড মিট খেলে শরীরে কর্সিনোজেনিক এলিমেন্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। বিশেষত কলোরেকটাল ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বলে ভাববেন না সপ্তাহে ১-২ বার পাঁটার মাংস খেলেই এমন অশঙ্কা বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে প্রতিদিন ৫০ গ্রাম করে প্রসেসড রেড মিট খেলে তবেই কলোরেকটাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, এই পরিমাণ রেড মিট যদি প্রতিদিন ফ্রাই করে খাওয়া হয়, তাহলে শুধু কলোরেকটাল নয়, সেই সঙ্গে প্যানক্রিয়াটিক এবং প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের এক রিপোর্ট অনুসারে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা রেড মিটে হেটেরোসাইকেলিক এমিনেস এবং পলিসাইকেলিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বোন নামে রাসায়নিকের জন্ম হয়, যা ক্যান্সারের প্রকোপ বৃদ্ধিকে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই সব শেষে একথা বলতেই হয় যে শুধু পরিমাণ না, কীভাবে মাংসটা রান্না করছেন কার উপরও নির্ভর করে পাঁঠার মাংসের ক্ষতিকারতা।

পাঁঠার মাংস এবং কিডনি ফেলিওর:

পাঁঠার মাংস এবং কিডনি ফেলিওর:

এই ধরণের মাংস বেশি খেলে রক্তে ক্ষতিকর টক্সিনের মাত্রা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনাও থাকে। আর এই তনটি কারণেই কিডনি খারাপ হয়ে যেতে পারে। প্রসঙ্গত, শরীরে টক্সিনের পরিমাণ যত বাড়বে, তত কিডনিকে বেশি মাত্রায় কাজ করতে হবে, ফলে এক সময়ে গিয়ে কিডনি ফেলিওরের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে ডায়াবেটিস এবং ব্লাড প্রেসারের কারণও কিন্তু এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সহজ ভাবে বললে, রেড মিট= ব্লাড প্রেসার+ ডায়াবেটিস+ টক্সিন= কডনি ফেলিওর। এবার বুঝলেন তো রেড মিটের সঙ্গে কিডনি ফেলিওরের কী সম্পর্ক।

হার্টের রোগ:

হার্টের রোগ:

বেশি করে রেড খেলে শরীরে কোলেস্টেরল বা স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আর একথা তো সবাই জানেন যে অনিয়ন্ত্রত কোলেস্টেরলের করণে হার্টের রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে প্রতিদিন ৭৫ গ্রাম বা তার বেশি পরিমাণ রেড মিট খেলে হার্ট ফেলিওর হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১.২৮ গুণ বৃদ্ধি পায়। ২০১৩ সালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা পত্র অনুসারে আমাদের অন্ত্রে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে তা রেড মিটে উপস্থিত কর্নিটাইন নামে এক ধরনের উপাদান হজম করে ট্রিমেথিলেমিন-এন-অক্সিড বা "টি এম এ ও" নামে একটি উপাদানের জন্ম দেয়। এই উপাদানটি রক্ত নালীতে চর্বি জমাতে শুরু করে দেয়। ফলে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়ে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

কত পরিমাণ পাঁঠার মাংস খেলে এই সব রোগ হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই থাকবে না?

কত পরিমাণ পাঁঠার মাংস খেলে এই সব রোগ হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই থাকবে না?

প্রতিদিন রেড মিট খাওয়ার পরিমাণ ৫০-৭০ গ্রামের নিচে রাখুন, অর্থাৎ সপ্তাহে ৩০০-৫০০ গ্রামের বেশি একেবারেই নয়। এই পরিমাণ পাঁটার মাংস খেলে দেখবেন কোনও রোগই আপনাকে ছুঁতে পারবে না। উল্টে আপনার শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হবে।

পাঁঠার মাংস খাওয়া কমানোর ৪ টি কার্যকরি উপায়:

পাঁঠার মাংস খাওয়া কমানোর ৪ টি কার্যকরি উপায়:

১. বেশি করে শাক-সবজি খাওয়া শুরু করুন। মাংস খেতে খুব ইচ্ছা করলে বেশি পরিমাণ সবজির মধ্যে অল্প করে মাংস মিশিয়ে খান। খেয়াল রাখুন সপ্তাহে পাঁঠার মাংস খাওয়ার পরিমাণ যেন ভুলেও ৫০০ গ্রামের বেশি না হয়।

২. মাশরুমের মতো সবজি মাংসের মতো করে রান্না করুন। প্রয়োজনে মাছ বেশি করে খান।

৩. ছুটির দিনে শুধু পাঁঠার মাংস খাবেন, এমন সিদ্ধান্ত নিন।

৪. একবারে অনেকটা মাংস না কিনে অল্প করে কিনুন। যাতে ইচ্ছা হলেও খেতে না পারেন।

English summary

পাঁঠার মাংস খাওয়া কি সত্যিই শরীরের পক্ষে খারাপ?

red meat contains numerous vitamins and minerals that are essential for a healthful, balanced diet. In recent years, however, its reputation has been severely blemished, with studies suggesting that red meat intake can increase the risk of cancer and other diseases. But is it really that bad for us? We investigate.
Story first published: Tuesday, May 16, 2017, 11:31 [IST]
X
Desktop Bottom Promotion