Just In
চুইং গাম খেলে কি হতে পারে জানা আছে?
যে চুইং গামকে শরীরের "দুশমন" বলে মেনে আসতেন চিকিৎসকেরা, তা আসলে আমাদের কোনও ক্ষতিই তো করে না, বরং ব্রেন এবং শরীরের একাধিক উপাকারে লাগে চুইং গাম। কীভাবে এমনটা করে থাকে এই চ্যাটচ্যাটে খাবারটি?
এতদিন জানা ছিল এক কথা। এবার তো একেবারে নতুন তথ্য সামনে এনেছেন গবেষকরা। সম্প্রতি একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে, তাতে চুইংগাম সম্পর্কে একেবারে উল্টো মতের পক্ষে সাওয়াল করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা বেজায় আশ্চর্যের।
কী বলছেন গবেষকরা? তাদের মতো এতদিন যে চুইং গামকে শরীরের "দুশমন" বলে মেনে আসতেন চিকিৎসকেরা, তা আসলে আমাদের কোনও ক্ষতিই তো করে না, বরং ব্রেন এবং শরীরের একাধিক উপাকারে লাগে চুইং গাম। কীভাবে এমনটা করে থাকে এই চ্যাটচ্যাটে খাবারটি?
সারা বিশ্বজুড়ে বছরে প্রায় ৩৭৪ বিলিয়ান চুইং গাম বিক্রি হয়, যা প্রায় ১৮৭ বিলিয়ান ঘন্টা নষ্ট করে চিবিয়ে থাকি আমরা। তবে এটি চিবোনোর সময় শরীরের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে থাকে যে তাতে শরীরের নানাবিধ উপকার হয়, যেমন...
১. নিমেষে স্ট্রেস কমিয়ে ফেলে:
আমাদের দেশে যে হারে লাফিয়ে লাফিয়ে মানসিক অবসাদগ্রস্থের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে চুইং গাম খাওয়ার প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে আরও বেশি করে। কিন্তু স্ট্রেসের সঙ্গে চুইং গামের কী সম্পর্ক? বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে চুইং গাম খাওয়ার সময় ব্রেনে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে কর্টিজল হরমোনের ক্ষরণ কমতে থাকে। ফলে স্ট্রেস কমতে সময়ই লাগে না। প্রসঙ্গত, কর্টিজল হল এক ধরনের স্ট্রেস হরমোন। এর ক্ষরণ যত বাড়তে থাকে, তত মানসিক চাপও বাড়তে থাকে।
২. ব্রেন পাওয়া বাড়ে:
আপনি কি চান আপানার স্মৃতিশক্তি মারাত্মক শক্তিশালী হয়ে উঠুক? সেই সঙ্গে বুদ্ধিও হোক প্রদোষ মিত্রের মতো? তাহলে রোজ এক-দুটো চুইং গাম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। আসলে ২০০৪ সালে জার্নাল অব অ্যাপেটাইট-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে চুইং গাম খাওয়ার সময় মস্তিষ্কে শর্করার সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে স্মৃতিশক্তি বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে ব্রেনের নিউরাল নেটওয়ার্ক এত মাত্রায় অ্যাকটিভ হয়ে যায় যে অ্যালার্টনেস এবং মনোযোগ রকেটের স্পিডে বাড়তে শুরু করে। তবে তাই বলা বেশি মাত্রায় চুইং গান খাবেন না যেন, এমনটা করলে কিন্তু উপকারের থেকে অপকার হবে বেশি।
৩. গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ কমায়:
খাবার খাওয়ার পর পরই খুব অম্বল হয়? সেই সঙ্গে দোসর হয় টক ঢেকুর? তাহলে নিয়মিত চুইং গাম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। আসলে গাম খাওয়ার সময় স্যালাইভা উৎপাদন বেড়ে যায়, যা খাবার হজম হতে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, গ্যাস্ট্রো ইসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা টক ঢেকুর হওয়ার মতো সমস্যা হতে থাকলে দাঁতেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও চুইংগাম দারুন কাজে আসে। একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে গ্যাস-অম্বলের কারণে যাতে দাঁতের কোনও ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে চুইং গাম।
৪. দাঁতের পোকা দূর করে:
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে চুইং গাম খাওয়ার সময় আমাদের মুখ গহ্বরে এত মাত্রায় স্যালাইভা তৈরি হয় যে ব্যাকটেরিয়া কোনও ধরনের ক্ষতি করার সুযোগ পায় না। ফলে ক্য়াভিটিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, স্যালাইভা অন্দরে থাকা পি এইচ, মুখের অন্দরের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, কেবল মাত্র সুগার ফ্রি চুইং গাম খেলেই কিন্তু এমন উপকার মেলে। না হলে উপকার তো ছাড়ুন, উল্টে দাঁতের ক্ষতি হয় মারাত্মকভাবে।
৫. ওজন কমায়:
সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে দিতে চুইং গাম বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে চুইং গাম খাওয়া মাত্র নানা কারণে খিদে কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খাওয়ার পরিমাণ কমতে থাকার কারণে অতিরিক্ত মেদ জমার আশঙ্কাও কমে।
৬. কনস্টিপেশন সমস্যা কমায়:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে চুইং গাম খাওয়ার সময় মুখ গহ্বরে তৈরি হওয়া স্যালাইভা, বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য মতো সমস্যা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে তাই বলে ভাববেন না যেন কিলো কিলো চুইং গাম খেলেই কনস্টিপেশন একেবারে কমে যাবে। যদিও কিছুটা অরাম মিলবে বৈকি!
৭. কানের ব্যথা কমায়:
অনেকেরই প্লেনে যাতায়াতের সময় কানে খুব যন্ত্রণা হয়, সে সময় যদি চুইং গাম খাওয়া যায়, তাহলে কিন্তু দারুন উপকার মেলে। আসলে চুইং গাম খাওয়ার সময় কানের পেশির সচলতা এমন বেড়ে যায় যে কষ্ট কমতে সময় লাগে না।