Just In
Don't Miss
মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খাচ্ছেন না তো?
হলকা গ্যাস-অম্বল মানেই এক-দুটে অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট চুসতে শুরু করে দেওয়া। এমন প্রবণতা প্রয়শই দেখতে পাওয়া যায় পরিবারে বা বন্ধুবান্ধবদের অন্দর মহলে।
হলকা গ্যাস-অম্বল মানেই এক-দুটে অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট চুসতে শুরু করে দেওয়া। এমন প্রবণতা প্রয়শই দেখতে পাওয়া যায় পরিবারে বা বন্ধুবান্ধবদের অন্দর মহলে। কিন্তু জানেন কি এইভাবে লাগাম ছাড়া অ্যান্টাসিড খেলে কি হতে পারে?
অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ খাওয়া মাত্র হজমে সহায়ক অ্যাসিডের প্রভাব কমতে শুরু করে। ফলে বুক জ্বালা বা অম্বলের মতো কষ্ট কমে যায়। কিন্তু টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে বারে বারে যদি এই ওষুধ খেতে শুরু করেন, তাহলে একাদিক যেমন নানা অঙ্গের কর্মক্ষমতা কমে যায়, তেমনি ক্যান্সারের মতো মারণ রোগে আক্রান্তে হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। আসলে যে যে উপাদানগুলি দিয়ে এমন ধরনের ওষুধগুলি বানানো হয়ে থাকে, সেগুলি অনেক সময় আমাদের শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে। সেই কারণেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেতে মানা করা হয়।
যাদের কিডনি বা লিভারের সমস্যা আছে, খাবারে নুন কম খান, থাইরয়েডের ওষুধ খেতে হয় এবং ব্লাড থিনার মেডিসিন নিয়ে থাকেন, তারা ভুলেও অ্যান্টাসিড খাবেন না। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে অ্যান্টাসিড এই ধরনের ওষুধের কাজ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। তাই এমন রোগীরা কোনো ধরনের গ্যাস-অম্বল কমানোর ওষুধ খাওয়ার আগে মনে করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না।
বেশি মাত্রায় অ্যান্টাসিড খেলে সাধারণত যে যে সমস্য়াগুলি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে, সেগুলি হল...
১. স্টমাক ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে:
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে একথা প্রমাণ হয়ে গেছে যে অনিয়ন্ত্রত হারে অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেলে স্টমাক ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বীগুণ হারে বৃদ্ধি পায়। আসলে এই জাতীয় ওষুধ বেশি মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে নানা কারণে পাকস্থলির উপর খারাপ প্রভাব পরে। ফলে এমনটা হতে থাকলে স্টমাক এতটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয় যে ক্যান্সার রোগে সেখানে বাসা বাঁধার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই দয়া করে ওভার দা কাউন্টার অ্যান্টাসিড জাতীয় মেডিসিন কিনে খাওয়া বন্ধ করুন। না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ!
২. হাত-পা ফুলে যায়:
বেশ কিছু কেস স্টাডি করে দেখা গেছে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি রয়েছে এমন অ্যান্টাসিড নিয়মিত খেলে শরীরে নানাবিধ খনিজের ভারসাম্য বিগড়ে যেতে শুরু করে। ফলে পায়ের পাতা, গোড়ালি এবা হাত ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এমনটা যদি আপনার সঙ্গেও হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না যেন। কারণ শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াটা মোটেও সুখবর নয়।
৩. কনস্টিপেশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে:
বেশ কিছু অ্যান্টাসিডে অ্যালুমিনিয়াম দিয়েও বানানো হয়ে থাকে। এই ধরনের ওষুধ শরীরে বেশি মাত্রায় প্রবেশ করলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতাও কমতে শুরু করে। কারণ শরীরে প্রতিটি খনিজ এবং ভিটামিনের মাত্রায় ভারসাম্য থাকাটা জরুরি। আর যখনই এই ব্যালেন্স বিগড়ে যায়, তখনই নানা সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। যেমনটা এক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
৪. ডায়ারিয়ার প্রকোপ বাড়ে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যেসব অ্যান্টাসিডে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে, সেই সব ওষুধ বেশি মাত্রায় খেলে শরীরে এই খনিজের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আর এমনটা হলে ডায়ারিয়ার মতো রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
৫. কিডনি স্টোন:
এমনটা দেখা গেছে যে বেশ কিছু অ্যান্টাসিড বেশি মাত্রায় খেলে কিডনি স্টোন হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তবে কোন ধরনের অ্যান্টাসিডের কারণে এমনটা হয়ে থাকে, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তাই গ্যাস-অম্বলের সমস্যা হলে সব সময় ঘরোয়া টোটকার মাধ্যমে তা সারিয়ে ফেলার চেষ্টা করবেন, নচেৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। নিজের মন মতো অ্যান্টাসিড খেলে কী হতে পারে, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না।
৬. হাড় দুর্বল হয়ে পরে:
অ্যালুমিনিয়ামের মাত্রা বেশি রয়েছে এমন অ্যান্টাসিড মাত্রা ছাড়া ভাবে খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমতে শুরু করে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেই জানা আছে যে হাড়কে শক্তপোক্ত রাখতে ক্যালসিয়ামের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই এই খনিজটির মাত্রা কমতে শুরু করে ধীরে ধীরে হাড় এতটাই দুর্বল হয়ে পরে যে নানা ধরনের বোন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
৭. ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি দেখা দেয়:
শরীরে রক্তের যোগান ঠিক রাখতে এই ভাটিমিনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই কোনওভাবেই যাতে বি১২ এর গাটতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই অজান্তে এমন একটা কাজ করে থাকি, যা ধীরে ধীরে শরীরে এই ভিটামিনটির মাত্রা কমাতে শুরু করে। কী সেই ভুল কাজ? বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অ্যান্টাসিডের চরিত্র না বুঝে দিনের পর দিন তা খেয়ে গেলে শরীরে ধীরে ধীরে বি১২ ভিটামিনের ঘাটতি হতে শুরু করে। ফলে ক্লান্তি এবং রক্তাল্পতা সহ একাধিক শারীরিক সমস্যা ঘিরে ধরতে শুরু করে।