Just In
PCOD vs PCOS : উভয়ের মধ্যে পার্থক্য কী? এতে আক্রান্ত হলে কী কী সমস্যা দেখা দেয়? জেনে নিন
আজকের দিনে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ (PCOD) এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) এর সমস্যা খুবই সাধারণ ব্যাপার। প্রায় বেশিরভাগ মহিলাই এই সমস্যার ভুক্তভোগী। তবে এখনও অনেকের মনেই PCOD এবং PCOS নিয়ে, বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়।
এই দু'টি রোগই ডিম্বাশয়ের সাথে যুক্ত এবং একই সাথে এই দুটি রোগ অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সাথেও সম্পর্কিত। তবে PCOD এবং PCOS-এর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য বিদ্যমান, যা আপনার জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাহলে পরে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এগুলি মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাহলে দেখে নেওয়া যাক, PCOD এবং PCOS কী? আর কীই বা এদের মধ্যে পার্থক্য?
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ বা (PCOD) কী?
PCOD হল এমন একটি অবস্থা, যেখানে ডিম্বাশয়ে অনেক অপরিপক্ক অথবা আংশিক পরিপক্ক ডিম থাকে। এই অপরিপক্ক কিংবা আংশিক পরিপক্ক ডিমগুলিই পরবর্তী সময় সিস্টে পরিণত হয়। জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত ওজন, স্ট্রেস অথবা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে, এই অবস্থার সৃষ্টি হয়।
PCOD-এর সাধারণ উপসর্গ হল অনিয়মিত ঋতুস্রাব, পেটের ওজন বৃদ্ধি, বন্ধ্যাত্ব এবং চুল পড়ে যাওয়া। PCOD-এর কারণে ডিম্বাশয় বড় হয়ে যায় এবং প্রচুর পরিমাণে এন্ড্রোজেনের নিঃসরণ করে। যার ফলে মহিলাদের শরীর এবং প্রজনন ক্ষমতার উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) কী?
PCOS হল এক ধরনের বিপাকীয় ব্যাধি, যা PCOD-এর তুলনায় বেশি মারাত্মক। PCOS-এর ক্ষেত্রে, ডিম্বাশয় পুরুষ হরমোন উচ্চমাত্রায় উৎপন্ন করে। যার ফলে প্রতি মাসে দশটিরও বেশি ফলিকুলার সিস্ট ডিম্বাশয়ে তৈরি হয়। এটি ডিমের নিঃসরণ বন্ধ করে দেয়, অ্যানোভুলেশনের দিকে নিয়ে যায়। PCOS-এর লক্ষণগুলির মধ্যে চুল পড়া, স্থূলতা এবং বন্ধ্যাত্ব অন্যতম।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ (PCOD) এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) - এর মধ্যে পার্থক্য কী?
১) PCOS বেশি গুরুতর
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, PCOD-এর তুলনায় অনেক বেশি গুরুতর অবস্থা। PCOD মূলত রোগ হিসেবে বিবেচিত নয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে, এটির পরিস্থিতি উন্নত করা সম্ভব। তবে PCOS হল এক ধরনের বিপাকীয় ব্যাধি।
২) PCOD হওয়া অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার
বর্তমান দিনে PCOD-এর সমস্যা খুব সাধারণ ব্যাপার। বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ মহিলাই PCOD-এর সমস্যায় ভুগছেন। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ এর তুলনায়, PCOS-এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কম।
৩) PCOS-এ গুরুতর জটিলতা রয়েছে
PCOS-এ আক্রান্ত মহিলাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কার্ডিয়াক-ভাস্কুলার সমস্যা, স্থূলতা এবং এমনকি এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।
৪) PCOS জীবনের প্রথম দিকে দৃশ্যমান হয়
যে সকল মহিলারা PCOS-এর সমস্যায় ভুগছেন, তাদের মধ্যে কিশোর বয়স থেকেই এই রোগের উপসর্গগুলি পরিলক্ষিত হয়। যেমন - ব্রণ, অতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, প্রভৃতি। এই উপসর্গগুলি বিপাকীয় ক্রিয়ার ব্যাঘাতের কারণে, অল্প বয়স থেকেই সুস্পষ্ট হতে থাকে।
৫) PCOD-তে আক্রান্তদের মধ্যে ফার্টিলিটির সমস্যা থাকে না
PCOD-তে আক্রান্ত মহিলারা, চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে, সহজেই সফলভাবে গর্ভধারণ করতে সক্ষম হতে পারে। অপরদিকে, PCOS-এ আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে গর্ভপাতের হার এবং বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।
৬) PCOD-তে আক্রান্ত মহিলারা নিয়মিত ডিম্বস্ফোটন করতে পারে
PCOD-এর লক্ষণগুলি PCOS-এর মতো হলেও, PCOD-তে আক্রান্ত মহিলারা পর্যায়ক্রমে ডিম্বস্ফোটনের ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হন এবং তাই সফলভাবে গর্ভধারণও করতে পারেন। অপরদিকে, PCOS-এ আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে, গুরুতরভাবে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে ডিম্বস্ফোটনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
PCOD এবং PCOS-এর ক্ষেত্রে কী করণীয়?
PCOD এবং PCOS উভয় ক্ষেত্রেই, ওজন কমানো, প্রক্রিয়াজাত ও জাঙ্ক ফুড বর্জন করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত সময় মেনে ব্যায়াম করা অত্যাবশ্যক। উভয়ের ক্ষেত্রেই ক্ষতিকারক প্রভাব কমাতে, যথাযথ জীবনধারা পরিবর্তন এবং ওষুধ প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি। যদি আপনার অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ব্রণ, ওজন বৃদ্ধি কিংবা মুখের অতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধির সমস্যা দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।