Just In
কাদা ছোড়া-ছোড়ির মাঝেই বাড়ছে মৃত্যুহার! তাই কলকাতাবাসীরা সাবধান!
বিতর্কটা দানা বেঁধেছিল বেশ কয়েকদিন আগেই। তবে তাতে ঘৃতাহুতি দিল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজ (এন আই সি ই ডি)-এর রিপোর্ট।
বিতর্কটা দানা বেঁধেছিল বেশ কয়েকদিন আগেই। তবে তাতে ঘৃতাহুতি দিল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজ (এন আই সি ই ডি)-এর রিপোর্ট। সরকারি এই সংস্থার আধাকারিকদের মতে আমাদের রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের পাঠানো ৮০০০ ব্লাড স্য়াম্পেলের মধ্য়ে প্রায় ৪০ শতাংশতেই ডেঙ্গু ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে। তাই এই বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ থাকলো না যে রাজ্য সরকার ডেঙ্গুর প্রকোপ সংক্রান্ত যে ছবিটি তুলে ধরতে চাইছে, তা মোটেও সঠিক নয়। তাই সাবধান হওয়ার সময় এসে গেছে রাজ্যবাসী। না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ!
কলকাতা সহ সমগ্র রাজ্যে ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যুহার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার সময়ই নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল সরকারের গাফিলতি নিয়ে। উপরন্তু গত সপ্তাহে সরকারি হাসপাতালের এক ডাক্তারের ফেসবুক পোস্ট থেকে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়ে যায় যে মমতা ব্যানার্জির সরকার ডেঙ্গু সংক্রান্ত যে তথ্য তুলে ধরছে, তা বেজায় ভুলে ভরা। এন আই সি ই ডি-এর রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর তো এই বিষয়ে আর কোনও সন্দেহই থাকছে না।
এখন প্রস্ন হল এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে নিজেকে এবং কাছের মানুষদের সুস্থ রাখবেন কিভাবে? এক্ষেত্রে চাণক্যের নীতি অনুসরণ করে যদি চলতে পারেন, তাহলে কিন্তু সুফল পেতে পারেন। কী সেই নীতি? চাণক্য সব সময় বলতেন প্রতিপক্ষকে হারাতে হলে তার বিষয়ে সব রকমের তথ্য সংগ্রহ করে নিতে হবে। আর এমনটা যদি করা সম্ভব হয়, তাহলে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ যুদ্ধ, লড়াই শুরু হওয়ার আগেই জিতে যাওয়া যায়। তাই তো বন্ধুরা বর্তমান পরিস্থিতে সুস্থ থাকতে হলে ডেঙ্গু সম্পর্কে এ-টু-জেট জেনে নেওয়াটা একান্ত প্রয়োজন।
কী এই ডেঙ্গু জ্বর?
এটি একটি মশাবাহীত জ্বর। অ্যাডিস প্রজাতির মশারা এই জ্বরের ভাইরাস বহন করে এক মানুষের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরকে আক্রান্ত করে থাকে। মূলত চারটি ভাইরাসের কোনও একটির আক্রমণে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রসঙ্গত, প্রতি বছর সারা বিশ্বে কম-বেশি প্রায় ৩৯০ মিলিয়ান মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুর যে অ্যাডিস প্রজাতীর মশারা রাতে নয়, দিনের বেলা বেশি অ্যাকটিভ থাকে। তাই তো দিনের আলো নিভে যাওয়ার আগে পর্যন্ত যতটা সম্ভব সাবধানে থাকতে হবে। বিশেষত বাচ্চা এবং বয়স্কদের খেয়াল রাখতে হবে বেশি করে।
কোন কোন দেশে এই রোগের প্রকোপ সব থেকে বেশি?
বেশ কয়েক দশক ধরে হওয়া নানা গবেষণায় দেখা গেছে অ্যাডিস মশাদের প্রধান বিচরণভূমি হল ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, তাইওয়ান, দা প্যাসিফিক আইল্যান্ড, ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ড এবং আফ্রিকা। প্রসঙ্গত, ল্যাটিন আমেরিকায় এতদিন পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ চোখে না পরলেও ২০০৯ সালে মেক্সিকো সংলগ্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু প্রায় মহামারির আকার নিয়েছিল।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে না। বরং ৪-৫ দিন পর থেকে ধীরে ধীরে মারাত্মক জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, চোখে ব্যথা, জেয়ন্ট পেন, মাথা ঘোরা, বমি, সারা গায়ে অ্যালার্জির মতো বেরনো এবং গাম ব্লিডিং-এর মতো লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, এমন কোনও লক্ষণ দেখা গেলে একেবারে সময় নষ্ট না করে রোগীকে হাসপাতেল র্ভতি করবেন। কারণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে দ্রুত প্লেটলেট কমতে থাকে। তাই ঠিক সময়ে হাসপাতাসে ভর্তি করে রোগীকে যদি রক্ত দেওয়া না হয়, তাহলে মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই তো এই জ্বরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
কিভাবে বোঝা সম্ভব যে কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে?
একথা ঠিক যে অনেক সময় সাধারণ জ্বরের থেকে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণকে আলাদা করা সম্ভব হয় না। সেই কারণেই তো জ্বরের লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে গেলেই প্রথমে ব্লাড টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ রক্ত পরীক্ষা করলেই জানতে পেরে যাওযা যায় যে শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস বাসা বেঁধেছে কিনা। ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই শুরু হয় চিকিৎসা।
এই রোগের চিকিৎসা কী?
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা করার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তাই এক্ষেত্রে লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়। সেই সঙ্গে রোগীকে পর্য়াপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, মশাবাহীত এই জ্বরে আক্রান্ত হলে যেহেতু প্লেটলেট কমতে শুরু করে। তাই প্রচু পরিমাণে জল খেত বলা হয় রোগীকে।
এই ভাইরাসের আক্রামণ থেকে বেঁচে থাকা কি সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব। তবে তার জন্য কতগুলি নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে। যেমন- ঘন জনবসতি এলাকা থেকে দূরে থাকতে হবে, মশারি ব্যবহার করতে হবে। সেঙ্গে মশা তাড়ানোর ক্রিম ব্যবহারও জরুরি, বাড়ির বাইরে থাকাকালীন ফুল হাতা জামা পরতে হবে। খেয়াল রাখবেন শরীরের বেশিরভা অংশই যাতে ঢাকা থাকে, দরজা-জানলায় মসকিউটো নেট লাগাতে ভুলবেন না। আর সব শেষে ডেঙ্গুর কোনও লক্ষণ দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে একেবারে সময় নষ্ট করবেন না যেন!