Just In
থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন? ঘরোয়া উপায়েই নিয়ন্ত্রণে থাকবে এই সমস্যা! জেনে নিন কীভাবে
আজকের যুগে থাইরয়েডের সমস্যা খুবই সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর একবার এর কবলে পড়লে তা থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ কঠিন! থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান গলায়। এই গ্রন্থির কাজ হলো আমাদের শরীরের কিছু অত্যাবশ্যকীয় হরমোন উৎপাদন করা। তবে আমাদের শরীরের জন্য এই থাইরয়েড হরমোনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে কম বা বেশি হরমোন উৎপাদিত হলেই, শরীরের উপর বিভিন্ন রকমের বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। তবে যথাযথ ডায়েট এবং জীবনযাত্রা ঠিক রাখার মাধ্যমে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
প্রজাপতি আকৃতির থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষমতা কিন্তু অপরিসীম। বিপাক থেকে বৃদ্ধি সবেতেই এর প্রভাব রয়েছে। থার্মোরেগুলেশন, হরমোনাল ফাংশন এবং ওজন পরিচালনায় এই গ্রন্থি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন এবং নিজেকে সুস্থ রাখতে চান, তারা এই নিম্নলিখিত ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি প্রয়োগ করতে পারেন -
১) জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকুন
জাঙ্ক ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকুন। এগুলি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ। তাই যত শীঘ্র সম্ভব এই সমস্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করলে, আপনি নিজেই আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি দেখতে পাবেন।
২) নিয়মিত এক্সারসাইজ করা
বর্তমান যুগে আমাদের এত শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল, অগোছালো জীবনযাপন করা। তাই নিয়মিত এক্সারসাইজ করা স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরী। এক্সারসাইজ, যোগাসন, নাচ, মর্নিং ওয়াক বা আপনার পছন্দমতো যেকোনও অ্যাক্টিভিটি করতে পারেন। যার প্রধান উদ্দেশ্যই হল, যতটা সম্ভব শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরানো এবং শরীরকে সুস্থ রাখা।
৩) খাবার আস্তে খান
খাবার খাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো না করে, ধীরেসুস্থে ভালো করে চিবিয়ে তৃপ্তি করে খান। তাহলে আপনি মানসিক শান্তি পাবেন। মনোযোগ দিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া থাইরয়েড এবং মনের মধ্যে সংযোগ গড়ে তোলে। থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের বিপাক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই ধীরেসুস্থে খাবার চিবিয়ে খেলে তা বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
৪) যোগাসন করুন
যোগাসনের জনপ্রিয়তা দিনে দিনে আরও বাড়ছে। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি এটি। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে যোগাসন। এমন অনেকেই আছেন, যারা নিয়মিত যোগাসন করেন। বিশেষত যাদের থাইরয়েড আছে তাদের জন্য যোগাসন খুবই উপকারি।
৫) সবুজ শাকসবজি রান্না করে খান
গবেষণায় প্রমাণিত যে, এমন কিছু নির্দিষ্ট শাকসবজি আছে যেগুলি কাঁচা অবস্থায় খাওয়ার ফলে, থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ ব্যাহত হয়, যেমন - কালে, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, ফুলকপি, প্রভৃতি। এই সকল সবজিতে কাঁচা অবস্থায় খেলে থাইরয়েড গ্রন্থির ভারসাম্য নষ্ট করে। তাই এই ধরনের সবজিগুলি কাঁচা বা স্যালাড হিসেবে না খেয়ে, রান্না করে খান।
'দিল বেচারা'-র কিজি আক্রান্ত হয়েছিলেন থাইরয়েড ক্যান্সারে, জানুন এই রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে
খাদ্যতালিকায় কী কী রাখবেন দেখুন
১) নারকেল তেল
নারকেল তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। নারকেল তেলকে গরম না করে যদি ব্যবহার করা হয় তাহলে, তা ওজন হ্রাস করতে এবং বিপাকীয় ক্রিয়া বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এমনকি শরীরের তাপমাত্রাও ঠিক রাখে।
২) অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার হরমোন উৎপাদনের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। বিপাকের উন্নতি করে। এছাড়াও, এটি বডি ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি বের করে এবং পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে। রোজ সকালে মধু এবং হালকা গরম জলের সাথে এটি মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
৩) আদা
এটি সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া উপায়। আদা খনিজে ভরপুর, যেমন- পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম। থাইরয়েডের সমস্যাগুলির সাথে লড়তে খুবই সহায়ক আদা। আদা চা পান করুন, উপকার পাবেন।
৪) ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ডি
থাইরয়েডের ক্ষেত্রে ভিটামিন বি খুবই সহায়ক। বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারি। তাই, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, বাদাম, প্রভৃতি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করুন। এগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি সরবরাহ করবে।
ভিটামিন ডি-এর অভাবে থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে। সূর্যের আলোতেই শরীর একমাত্র ভিটামিন ডি প্রস্তুত করতে পারে। তাই দিনে অন্তত পক্ষে ১৫ মিনিট অবশ্যই সূর্যের আলোয় থাকুন। যার ফলে আপনার শরীরে ভালোভাবে ক্যালসিয়ামের শোষণ হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ কিছু খাবার হল - স্যালমন, ম্যাকারেল, দুগ্ধজাতীয় দ্রব্য, কমলালেবুর রস, ডিমের কুসুম, প্রভৃতি। শরীরে যদি ভিটামিন ডি-এর মাত্রা খুবই কম থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্টও নিতে পারেন।
৫) ডেয়ারি প্রোডাক্ট
দুধ, চিজ, দই, এই ধরনের ডেয়ারি প্রোডাক্টগুলি থাইরয়েডের জন্য খুবই উপকারি। কারণ এই সকল খাদ্যতে আয়োডিন এবং খনিজ বিপুল পরিমাণে থাকে, যা থাইরয়েডের জন্য খুবই উপকারি।
৬) আয়োডিন সাপ্লিমেন্ট
আয়োডিন সাপ্লিমেন্টও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে, নিরামিষাশীদের জন্য আয়োডিন সাপ্লিমেন্ট খুবই প্রয়োজনীয়। এই সাপ্লিমেন্ট দেহে আয়োডিনের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে এবং থাইরয়েডের ক্ষেত্রেও ভীষণ উপকারি।