Related Articles
এবারের পুজোর মেনুতে মাশরুম চিলি ফ্রাই বা শাহি মাশরুমের মতো পদকে না রাখলে কিন্তু ভুল করবেন!
আরে আরে দাঁড়ান দাঁড়ান...! যাচ্ছেন কই। আরে মশাই এটা কোনও রেসিপি সম্বন্ধীয় লেখা নয়। বরং আজ এই প্রবন্ধের মাধ্যমে এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদানের উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করা হবে, যা আপনার রোজের ডায়েটে জায়গা করে নিলে শরীর বাবাজিকে নিয়ে আর দেখবেন আর কোনও চিন্তাই থাকবে না।
মানে, আপনি বলছেন মাশরুম খেলে শরীর ফিট! একেবারেই বন্ধু! নানা গবেষণার পর এই বিষয়ে আর কোনও সন্দেহই নেই যে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির অন্দরে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন সি, ফলেট, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন ডি, নিয়াসিন এবং ভিটামনি বি ৬ নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে, বিশেষত মাশরুমের অন্দরে থাকা নানাবিধ ভিটামিন একাধিক রোগকে দূরে রাখতে যেমন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনি শরীরকে ভিতর তেকে শক্তিশালী এবং চাঙ্গা করে তুলতেও নানা ভাবে সাহায্য করে। যেমন ধরুন...
১. ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে:
একথা তো এতদিনে নিশ্চয় জেনেই গেছেন যে ওজন বাড়তে শুরু করলে কিন্তু বেজায় বিপদ। কারণ সেক্ষেত্রে শরীরে আরও হাজার রকমের রোগ এসে বাসা বাঁধার আশঙ্কা কিন্তু বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু কমে চোখে পরার মতো। তাই তো বলি বন্ধু, অতিরিক্তি ওজনরে কারণে যদি চিন্তায় থাকেন, তাহলে রোজের ডায়েটে মাশরুমকে জায়গা করে দিতে ভুলবেন না যেন! কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটি খাওয়া শুরু করলে শরীরে ফাইবার এবং লিন প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যে কারণে বহুক্ষণ পেট ভরা থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খাওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না।
২. ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
একেবারে ঠিক শুনেছেন কিন্তু! আম বাঙালির কাছে ব্যাঙের ছাতা নামে পরিচিত এই প্রাকৃতিক উপাদানটি খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে "সেলেনিয়াম" নামক একটি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে ত্বক বেজায় টানাটান তো হয়ে ওঠেই, সেই সঙ্গে ত্বকের বয়স কমতেও শুরু করে। ফলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। তবে এখানেই শেষ নয়, সেলেনিয়াম নানাভাবে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেও দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে।
৩. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে:
মাশরুমের শরীরে মজুত থাকা ফাইবার এবং উপকারি এনজাইম শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে ধীরে ধীরে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা এল ডি এল মাত্রা কমতে শুরু করে। অন্যদিকে বাড়তে শুরু করে উপকারি কোলেস্টেরলের মাত্রা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে কমে অ্যাথেরোস্কেলেরোসিস, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কাও।
৪. ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়:
মাশরুমের অন্দরে বিটা-গ্লকেন এবং লাইনোলিক অ্যাসিড নামে দুটি উপাদান থাকে, যা শরীরে প্রবেশ করার পর কার্সিনোজেনিক গ্রোথ হতে দেয় না। সেই সঙ্গে শরীর থেকে টক্সিক উপাদানদেরও বের করে দেয়। ফলে ক্যান্সার রোগ ধারে কাছেও আসতে পারে না। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে যে হারে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বেড়েছে, তাতে মাশরুমের মতো অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক খাবার খাওয়ার প্রয়োজন যে বেড়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
৫. সেলেনিয়ামের ঘাটতি দূর করে:
হাড়কে শক্তপোক্ত করার পাশাপাশি দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে, চুল এবং নখের সৌন্দর্য বাড়াতে এবং শরীরকে বিষ মুক্ত রাখতে এই উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর সেলেনিয়াম সবথেকে বেশি মাত্রায় থাকে মাশরুমে। এবার বুঝেছেন তো এই প্রকৃতিক উপাদনটি দিয়ে বানানো সুপ খাওয়ার প্রয়োজন কতটা!
৬. লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি দূর হয়:
শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমতে শুরু করলে লহিত রক্ত কণিকার উৎপাদনে বাঁধা আসতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যানিমিয়ার প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে মাশরুমের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটি আয়রনে ঠাসা। ফলে অ্যানিমিক রোগীদের নিয়ম করে মাশরুম খাওয়ালে রোগের প্রকোপ কমতে সময়ই লাগে না।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
আর্গোথিয়োনাইন নামক বিশেষ এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মজুত রয়েছে মাশরুমে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি ইমিউনিটি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে গেলে কোনও রোগের পক্ষেই আর শরীরকে আক্রমণ করা সম্ভব হয় না। ফলে সুস্থ জীবনের পথ প্রশস্ত হয়। প্রসঙ্গত, মাশরুমের মধ্যে থাকা প্রকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক নানাবিধ সংক্রমণের আশঙ্কা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮. হাড়ের শক্তি বাড়ে:
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে নিয়মিত এই প্রকৃতিক উপাদানটি খেলে ধীরে ধীরে হাড়ের গঠনে উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে নানাবিধ হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। তাই তো বুড়ো বয়সে গিয়ে যদি জয়েন্টের ব্যথায় কাবু হতে না চান, তাহলে এখন থেকেই মাশরুমের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।
৯. ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে:
পরিবারে সুগার রোগের ইতিহাস আছে নাকি? যদি থাকে তাহলে রোজের ডায়েটে মাশরুমের অন্তর্ভুক্তি মাস্ট! কারণ এতে থাকা প্রকৃতিক ইনসুলিন শরীরে প্রবেশ করার পর রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে শুরু করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। তবে এখানেই শেষ নয়, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মাশরুম, লিভার, প্যানক্রিয়াস এবং অন্যান্য এন্ডোক্রনিক গ্ল্যান্ডের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১০. আয়রনের চাহিদা মেটে:
লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দূর করতে এবং শরীরের সচলতা বাড়াতে আয়রন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কারণেই তো নিয়মিত মাশরুম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কারণ এতে উপস্থিত কপার আয়রনের শোষণ মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে দেহে এই খনিজটির ঘাটতি হাওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
১১. রক্তচাপ কন্ট্রলে থাকে:
নানা কারণে রক্তচাপ কি খুব ওঠানামা করছে? তাহলে তো মাশাই মাশরুমের সঙ্গই আপনার বন্ধুত্ব করার সময় এসে গেছে। কারণ মাশরুমে উপস্থিত পটাশিয়াম, শরীরের অন্দরে সোডিয়ামের ভারসাম্য ঠিক রাখার মধ্যে দিয়ে ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১২. পুষ্টিকর উপাদানের চাহিদা মেটায়:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরকে চালাতে যে যে পুষ্টিকর উপাদানগুলির প্রয়োজন পরে, তার বেশিরভাগই মজুত থাকে মাশরুমে। যেমন ভিটামিন ডি-এর কথাই ধরুন না। এই উপাদানটি শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে সচল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এই প্রাকৃতিক উপাদানটি খাওয়া শুরু করলে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের ঘাটতিও দূর হয়। ফলে সার্বিকভাবে শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না।
সবশেষে তাই বলতে চাই বন্ধু, শাহি মাশরুম বা মাশরুম চিলি ফ্রাইয়ের মতো খাবার অর্ডার করলে রসনা তৃপ্তি তো হবেই, সেই সঙ্গে দেখবেন শরীরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে...